ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রওশন পার্টিকে হেয় করেছেন: এরশাদ

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ২৫ এপ্রিল ২০১৬

রওশন পার্টিকে হেয় করেছেন: এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দল পরিচালনায় এরশাদের সাম্প্রতিক সকল সিদ্ধান্ত অগনতান্ত্রিক উল্লেখ করে বিরোধী দলের নেতা রওশনের সংবাদ সম্মেলনের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জবাব দিলেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রবিবার জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে ২১ জন সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাপার আসন্ন কাউন্সিল পিছানো এবং পার্টির গঠনতন্ত্র থেকে ৩৯ ধারা বাতিলের দাবি জানিয়ে এরশাদের সহধর্মিনী রওশন বলেন, তার (এরশাদ) অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের কারণে দল আজ ছোট হচ্ছে। গনতন্ত্র অনুসরণ করে চালাতে হবে এমন দাবি করে রওশন বলেন, এ পার্টি কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা কোম্পানী নয়। নিজ দলের মাঝে যদি গনতন্ত্র চর্চা না থাকে দেশের গনতন্ত্রের কথা বলা যায় না বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হওয়ার পরিবর্তে দিনকে দিন দূর্বল হচ্ছে। যার কারণে ইউপি নির্বাচনে আমাদের ভরাডুবি হচ্ছে। ৩৯ ধারার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ ধারা ব্যবহার করে যখন ইচ্ছা যাকে তাকে দল থেকে বের করে দিবে, পদোন্নতি দিবে এভাবে দল চলতে পারে না। সোমবার স্ত্রীর এরকম বক্তব্যেও জবাবে এরশাদ বলেন, ‘সোমবার বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় এবং জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা রওশন এরশাদের বক্তব্যের প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তাঁর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টির অগণিত নেতাকর্মী এবং দেশবাসীর মধ্যে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে- তার অবসানের লক্ষ্যে আমার বক্তব্য তুলে ধরছি। প্রথমেই জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতাকে মনে রাখতে হবে যে, সংসদীয় দল পার্টির একটি শাখা মাত্র। এই শাখার দায়িত্ব-পার্টির নীতিমালা অনুসারে শুধুমাত্র সংসদীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা। নীতি নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা বা পর্যালোচনার ফোরাম হচ্ছে পার্টির প্রেসিডিয়াম। সুতরাং রওশন এরশাদ সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য রেখেছেন- এই ফোরামে এটা তার এখতিয়ার বহির্ভূত। তিনি পার্টিকে কারো “একক সম্পতি বা কোনো কোম্পানী নয়”- বলে সংগঠনকে হেয় করেছেন। জাতীয় পার্টি একটি গঠনতন্ত্রের নিয়ন্ত্রনে পরিচালিত এবং নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই গঠনতন্ত্র কোনো বিশেষ ব্যাক্তির আরোপিত বিষয় নয়। এটি জাতীয় পার্টির গণতন্ত্রের দলিল- যা পার্টির প্রতিষ্ঠাকালে জাতীয় কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এই গঠনতন্ত্রের একটি শব্দও পরিবর্তন করতে হলে জাতীয় কাউন্সিল থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এটাই হচ্ছে দলীয় গণতন্ত্রের ধারা।’ ‘জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে আমার সৃষ্টি করা নয়। এটা জাতীয় কাউন্সিলে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি ধারা। এই ধারা সম্পর্কে পার্টির কারো কোনো আপত্তি থাকলে তা শুধুমাত্র জাতীয় কাউন্সিলে উত্থাপন করা যেতে পারে। কাউন্সিল ভোটের মাধ্যমে এই ধারা বাতিল বা বহাল রাখার রায় দিতে পারে। তার আগে, যা গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- সেটাকে ‘অগণতান্ত্রিক’ ধারা বলাটাই দলীয় গণতন্ত্রকে অবমাননা করা। এই ধারাবলে রওশন এরশাদকেও দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই ধারাবলে যারা ১৫/১৬ বছর দলের বাইরে ছিলেন। তাদেরও দলে ফিরিয়ে এনে প্রেসিডিয়াম পদ দেয়া হয়েছে। পার্টির বর্তমান প্রেসিডিয়ামের অন্ততঃ ৩৫ জন সদস্যই ৩৯ ধারা বলে প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। ৩৯ ধারা যখন কারো পক্ষে যায়- তখন এটা অত্যন্ত, গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী ধারা হয়ে যায়, আর যখন ব্যাক্তি স্বার্থের বিপক্ষে যায় তখন এটা ‘অগণতান্ত্রিক’ হয়ে পড়ে- এই মানসিকতা থাকা উচিত নয়। দলের সর্বস্তরের নেতা, কর্মী, সমর্থকরা তা গ্রহণ করবে না। এরশাদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টির কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা একক কোনো সিদ্ধান্ত ছিলনা। নির্বাচন কমিশন থেকে দুই বার সময় নেবার পর এবং তারপর সকলের মতামতের ভিত্তিতে দুইবার তারিখ পরিবর্তনের পর প্রেসিডিয়াম সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী ভেন্যু ভাড়া করা হয়েছে, প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে, ঢাকাস্থ বিদেশী মিশনসমূহে পত্র দিয়ে দাওয়াতও দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় ১৪ মে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পার্টির কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। এটা ঠিক যে, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ভালো ফল করতে পারেনি। তার পিছনে অন্যসব কারণের পাশাপাশি গত ২ বছরে পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার দূর্বলতাও দায়ী ছিল। এরশাদ বলেন, ‘পরিশেষে, আমি সকল ধরণের অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অবসান ঘটিয়ে সকলের অবগতির জন্য সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে, জাতীয় পার্টি সম্পূর্ণভাবে একটি গণতন্ত্র চর্চার রাজনৈতিক দল। এই দলে গঠনতন্ত্রের বাইরে কখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি- আর হবেও না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলাসমূহের সম্মেলন সমাপ্ত করে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ১৪ মে ২০১৬ শনিবার, রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। নির্দিষ্ট তারিখে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’
×