ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফেডারেশনে না থেকেও ফুটবলের জন্য কিছু করা সম্ভব ॥ কানন

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ৯ এপ্রিল ২০১৬

ফেডারেশনে না থেকেও ফুটবলের জন্য কিছু  করা সম্ভব ॥ কানন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জাতীয় দলে অভিষেক ১৯৮৫ সালে। অবসর ১৯৯৩ সালে। নিজের সময়ে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী অতন্ত্রপ্রহরী। ক্লাব ক্যারিয়ার ১৯৮৩-৯৬ পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি খ্যাতি পেয়েছেন ঢাকা মোহামেডানে খেলে। যার কথা বলা হচ্ছে তিনি ছাইদ হাসান কানন। এবারের পাইওনিয়ার ফুটবলে তার কোচিংয়ে উত্তরা রিক্রিয়েশন ক্লাব তৃতীয় হয়েছে। শুক্রবার খেলা শেষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। শুরুতেই পাইওনিয়ার ফুটবলের এবারের আসর সম্পর্কে বলেন, ‘প্রায় ১২০০ ফুটবলার নিয়ে এই পাইওনিয়ার ফুটবল লীগ আয়োজনের জন্য অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য বাফুফে। কিন্তু কিছু কিছু সমস্যা-সীমাবদ্ধতার কারণে বাফুফেকে সমালোচনা না করে পারছি না। এই টুর্নামেন্টটি হয়েছে অনুর্ধ ১৬ ফুটবলারদের নিয়ে। কিন্তু এখানে খেলোয়াড়দের প্রকৃত বয়স যাচাই করার ক্ষেত্রে বাফুফে ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন ডাক্তার ছিল না। ছিল না কোন মেডিক্যাল টিম। সাবেক ফুটবলার মোহামেডানের মন্টুসহ- কয়েকজন কোচ খালি চোখে খেলোয়াড়দের বয়স যাচাই করে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। ফলে এই সুযোগে ২০ বছর বয়সী ফুটবলারও খেলেছে গাজীপুর, আরামবাগসহ বিভিন্ন দলে! এরা যখন সাফ, এএফসি বা ফিফার টুর্নামেন্টে ভবিষ্যতে জাতীয় দলের হয়ে খেলতে যাবে, তখন তো ধরা খাবে। ফলে বদনাম হবে বাফুফের।’ বাফুফের অধীনে বেতনভুক্ত কোচ আছেন ২০-২২ জন। এবারের আসরে অংশ নিয়েছে ৬০ দল। এই কোচরা যদি পরিকল্পনা মোতাবেক কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলাগুলো দেখতেন, তাহলে এখান থেকে তারা কমপক্ষে ৬০ ফুটবলারকে বাছাই করতে পারতেন। পরে বাফুফে এদের নিয়ে আলাদা ট্রেনিং করাতে পারত, যা ভবিষ্যতে দেশের জন্য কাজে লাগত। এই ফুটবলাররাই পরে অনুর্ধ ১৯, ২৩ ও জাতীয় দলে খেলত। কিন্তু বাফুফে এবার এই ট্যালেন্ট হান্ট করার সুযোগ কাজে লাগায়নি বলে জানান কানন। মাঠ নিয়েও অভিযোগ আছে কাননের, ‘অধিকাংশ মাঠই ছিল খেলার অনুপযোগী। মাঠে বালু আছে ঘাস নেই, অসমতল, মাঠের আয়তনেও সমস্যা। যেমন বাসাবো মাঠ, পল্টনের আউটার স্টেডিয়ামের মাঠ, মিরপুরের মাঠ। বাচ্চাদের যদি শুরু এসব মাঠে খেলতে দলগুলোর খুবই অসুবিধা হয়েছে। বাচ্চাদের যদি শুরুতেই ভাল মাঠ দেয়া যায়, তাহলে তাদের কাছ থেকে ভাল খেলা আশা করতে পারবেন। কিন্তু মাঠ যেখানে খারাপ, সেখানে খেলার মানও খারাপ হতে বাধ্য। এসব দিকেও নজর দেয়া উচিত ছিল বাফুফের। টুর্নামেন্ট শেষ হতেও অনেক বিলম্ব হয়েছে বলে মনে করেন কানন, ‘এতে দলগুলোর ব্যয় বেড়েছে, তারা সমস্যায় পড়েছে। পাইওনিয়ার ফুটবলের আসর অনুর্ধ ১৬ এর পরিবর্তে অনুর্ধ ১৪ করা উচিত বলে মনে করেন কানন, ‘জাপানসহ বিশ্বের অনেক দেশে বাচ্চাদের ফুটবল শুরু করা হয় অনুর্ধ ১২ থেকে। আমাদের এখানেও এটা অনুসরণ করা উচিত। এই বয়সটাই তো খেলা শুরুর উত্তম সময়। অনুর্ধ ১২ না পারলে অন্তত অনুর্ধ ১৪ লেভেল থেকে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারলে ভালো হয়।’ বাফুফের নির্বাচন নিয়ে যখন সব সাবেক ফুটবলাররা আখের গোছাতে ব্যস্ত, তখন শুধুই ফুটবল নিয়ে কাজ করাদের মধ্যে সত্যিই ব্যতিক্রম ‘বি’ লাইসেন্সধারী কোচ কানন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি একসময় সেলেব্রিটি ফুটবলার ছিলাম। সবাই আমাকে এক নামে চিনত। কাজেই আমি মনে করি দেশের ফুটবলকে কিছু দেয়া, কিছু ভাল ফুটবলারকে প্রশিক্ষণ দেয়া, তাদের অন্তত একজনকে জাতীয় দলে সুনামের সঙ্গে খেলতে দেখার জন্যই বয়সভিত্তিক দল নিয়ে কাজ করছি। এটা আমার দায়িত্ব। বিবেকের তাড়না থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি কোচিং পেশাতে এসেছি। এ জন্য আমি এক টাকাও পারিশ্রমিক নেইনি। আসলে সদিচ্ছা থাকলে ফেডারেশনে না থেকেও ফুটবলের জন্য কিছু করা সম্ভব।’ তবে কোচিংয়ে এসে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়া নিয়েও আলোকপাত করেছেন কানন, ‘অনুশীলন করার মাঠ নেই। স্পন্সর নেই। আর্থিক সমস্যা। এসব নিয়েই কাজ করতে হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি লীগ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুশের্দী আজ পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কোন মাঠের অবস্থা দেখতে যাননি!’
×