ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিউটি পারভীন

সেরা ব্যাটসম্যান তামিম

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ৬ এপ্রিল ২০১৬

সেরা ব্যাটসম্যান তামিম

এবার টি২০ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন বিরাট কোহলি। যদিও ব্যাটিং নৈপুণ্য বিবেচনা করলে বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবালের হাতেই সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা হাতে ওঠার কথা। তবে কন্ডিশন অনুসারে পারফর্মেন্সের বিষয়টি আমলে নিয়েই টুর্নামেন্টের সেরা দল নির্বাচন করেছেন নির্বাচকরা। বিবেচনায় রাখা হয়েছে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের সঙ্গে সঙ্গে দলের ক্ষেত্রে সেটার অবদানের বিষয়টিও। এ কারণে আইসিসি ঘোষিত বিশ্বকাপ একাদশেও জায়গা হয়নি তামিমের। কারণ তিনি প্রাথমিক রাউন্ডেই অধিকাংশ রানগুলো করেছেন। আর মর্যাদার সুপার টেনে খেলে কোহলি দলকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত উন্নীত করার ক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছেন। তবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিশ্বকাপের সেরা তামিমই। কারণ এ বিশ্বকাপেই তিনি বাংলাদেশের পক্ষে টি২০ ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন, দেশের ক্রিকেটে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। সবমিলিয়ে তিনি ৬ ম্যাচে ৭৩.৭৫ গড়ে ২৯৫ রান করে সবার ওপরে। কিন্তু সুপার টেনে তামিমের ইনিংসগুলো দলীয় কোন সাফল্য এনে দেয়নি বলেই টুর্নামেন্টেরও সেরা হতে পারেননি তিনি। বিশ্বকাপ সেরাদের নিয়ে ১২ জনের এ তালিকা সোমবার দুপুরে প্রকাশ করেছে আইসিসি। বিশ্বকাপের সেরা দলটিকে বেছে নিয়েছেন বিভিন্ন দেশের সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকাররা। তবে একাদশে থাকার মতো যোগ্যতা বাংলাদেশের অন্তত তিন ক্রিকেটারের অবশ্যই ছিল। বিশেষ করে ব্যাটিং নৈপুণ্যে বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল তো সবাইকে ছাড়িয়ে! এবার টি২০ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান করলেন। তার এ রানের সুবাদে বাংলাদেশের নামটিও সবার ওপরেই থাকল! কোন এক বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পতাকা সবার ওপরে থাকবে। বাংলাদেশের নাম সবার ওপরে থাকবে। বাংলাদেশের কোন এক ক্রিকেটারের নাম সবার ওপরে থাকবে। এমন ভাবনাটাও স্বপ্নেই সম্ভব ছিল এতদিন। আর টি২০ ফরমেটে বাংলাদেশের দলগত অবস্থানটাও নড়বড়ে, সে পরিস্থিতিতেও তামিম অবিস্মরণীয় একটি অর্জনই করে দেখালেন। বাছাইপর্বে তিন ম্যাচ ও ‘সুপার টেনে’ ৪ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু তামিম খেলতে পেরেছেন ৬ ম্যাচ। বাছাইপর্বের তিন ম্যাচ টানা খেলেছেন। ‘সুপার টেনে’ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি খেলতে পারেননি তামিম। এই ৬ ম্যাচেই ৭৩.৭৫ গড়ে ২৯৫ রান করে সবার ওপরে আছেন তামিম। তামিমের পরের স্থানটিতে আছেন ভারতের কোহলি। তিনি ৫ ম্যাচে ১৩৬.৫০ গড়ে ২৭৩ রান করেছেন। তিন নম্বর স্থানে ইংল্যান্ডের জো রুট (৬ ম্যাচে ২৪৯ রান), চার নম্বরে আফগানিস্তানের মোহাম্মদ শাহজাদ (৭ ম্যাচে ২২২ রান) ও পঞ্চম স্থানে আছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান জস বাটলার (৬ ম্যাচে ১৯১ রান)। তামিম এ বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত ছক্কা হাঁকানোর তালিকাতেও সবার ওপর। তিনি ১৪টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। অথচ সেই তালিকায় বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর হার্ড হিটার ব্যাটসম্যানরাও নেই। ১২টি করে ছক্কা হাঁকিয়েছেন আফগান ওপেনার শাহজাদ ও বাটলার। আর ১১ ছক্কা নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল। এমনকি এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসটাও খেলেছেন তামিম। প্রাথমিক রাউন্ডে ওমানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তামিম ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। সেই ম্যাচ না জিতলে সুপার টেনে উঠতে পারত না বাংলাদেশ। ওই ম্যাচেই বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তামিম টি২০ ফরমেটে ১০০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন। এবার টি২০ বিশ্বকাপে মাত্র দুটিই শতক হয়েছে। একটি তামিম করেছেন। আরেকটি করেছেন গেইল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ‘সুপার টেনে’র প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ১০০ রান করেন গেইল। আর কেউ কোন শতকই হাঁকাতে পারেননি। বিশ্বকাপে এর আগে কখনই এমন ইতিহাস দেখা যায়নি। বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটার কোন বিভাগে সবার ওপরে থাকতে পারেননি। তামিমের মাধ্যমে সেটি সম্ভব হলো। ২০০৭ সাল থেকে টি২০ বিশ্বকাপ হচ্ছে। রবিবার ষষ্ঠ বিশ্বকাপের যবনিকাপাত ঘটল। ২০০৭ সালের প্রথম টি২০ বিশ্বকাপে ব্যাটিং কিংবা বোলিং-কোন ক্ষেত্রেই সেরা পাঁচেও থাকতে পারেননি বাংলাদেশের কেউ। ২০০৯ সালেও একই অবস্থা হয়েছে। ২০১০, ২০১২ ও ২০১৪ সালে নিজ দেশে হওয়া বিশ্বকাপেও পারা যায়নি। এমনকি ওয়ানডে বিশ্বকাপেও সেরা পাঁচে বাংলাদেশের কেউই থাকতে পারেননি। তবে ছোটদের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা পারফর্মেন্সে বেশ কয়েকবারই শীর্ষে থেকে শেষ করেছেন। এবার বড়দের বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটার শীর্ষে থাকল। ১৯৭৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু হলেও ১৯৯৯ সাল থেকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ। সেই থেকে ১৯৯৯, ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে, প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা ২০০৭ সালে, প্রথমবারের মতো নিজ দেশে হওয়া ২০১১ সালের বিশ্বকাপে, প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা ২০১৫ সালের বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যান বা বোলার সেরা পাঁচে থাকতে পারেননি। এবার টি২০ বিশ্বকাপে তামিম সেই কঠিন কাজটি সহজ করে দেখিয়েছেন। এবার বিশ্বকাপে ধারাবাহিকভাবেই সফল ছিলেন তামিম। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচটিতে অসুস্থতার কারণে খেলতে পারেননি। নাহলে অন্যদের চেয়ে হয়ত আরও এগিয়েই থাকতেন তামিম। সমালোচকদের অনেকে অবশ্য বলছেন, প্রাথমিক রাউন্ডে ছোট দলগুলোর বিরুদ্ধে বড় রানের ইনিংসগুলো খেলেছেন তামিম। সুপার টেনে তেমন কিছু করতে পারেননি। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৪, ভারতের বিরুদ্ধে ৩৫ রানের দুটি কার্যকরী ইনিংস খেলেছেন তিনি। আর টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান সে অনুসারে প্রাথমিক রাউন্ডে সমপর্যায়ের দলগুলোর বিরুদ্ধেই খেলতে হয়েছে এবং সেসব ম্যাচে তামিম তাঁর ব্যাটিং ঝড় দেখিয়েছেন নিয়মিত। আর ছোট দল কিংবা বড় দল যেটাই হোক নিয়মিত রান করা সেরাদের পক্ষেই সম্ভব। সেটা তামিম এবার প্রমাণ দিয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কোহলির চেয়ে ২২ রান এগিয়ে থাকা তামিম এক ম্যাচ বেশি খেলেছেন। সেই এক ম্যাচ খেললে কোহলি তাঁকে ছাড়িয়ে যেতেন এমন কোন নিশ্চয়তা নেই।
×