ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে চলছে এনজিওগুলোর রমরমা হোটেল ব্যবসা

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৬ মার্চ ২০১৬

কুড়িগ্রামে চলছে এনজিওগুলোর রমরমা হোটেল ব্যবসা

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কুড়িগ্রামে বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) পরিচালিত আবাসিক হোটেল ও খাবার হোটেলে চলছে রমরমা ব্যবসা। ব্যক্তি মালিকানাধীন আবাসিক হোটেলগুলোর সরকারের নানা দফতরের অনুমতি সাপেক্ষে পরিচালিত হলেও এনজিও নিয়ন্ত্রণাধীন আবাসিক হোটেল (গেস্ট হাউস) গুলোতে নিয়মনীতির বালাই নেই। সাধারণ হোটেলগুলোতে কারা অবস্থান করছে তাদের একটি তালিকা পুলিশ প্রশাসনকে প্রদান করা হলেও এনজিও পরিচালিত হোটেলগুলোর কর্তৃপক্ষ তা করছে না। প্রশাসনের এই দ্বৈত নীতিতে সংশ্লিষ্টরা ভীষণ ক্ষুব্ধ। জানা গেছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে কুড়িগ্রামে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। দুর্ভিক্ষে প্রায় ২৭ হাজার লোক মারা যায়। তবে, এই পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। দুর্ভিক্ষের সুযোগ নিয়ে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অজুহাতে প্রথমে আরডিআরএস, পরে টেরেডেস হোমস বা ছিন্নমুকুলসহ অনেক এনজিও কুড়িগ্রামে আসে। বর্তমানে কুড়িগ্রামে প্রায় অর্ধশত এনজিও কাজ করছে। সকল এনজিও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কাজ করার কথা থাকলেও এনজিও ব্যবসায়ীদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটলেও কুড়িগ্রামে গরিব মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি। বরং অভাবী সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল রোডে অবস্থিত এনজিও টেরেটেস হোমস নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। এনজিওটি ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও এখন অনুমোদনহীন আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেল এবং হলরুম ভাড়া দিয়ে টাকা রোজগারে ব্যস্ত। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এনজিওটিতে থাকার জন্য উন্নত মানের ৯টি এবং সাধারণ ৮টি কক্ষ রয়েছে। উন্নতমানের কক্ষগুলোর প্রতি রাতের ভাড়া ৯২০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭২৫ টাকা। সাধারণ কক্ষগুলোর ভাড়া ৬৭৫ টাকা। মিটিংয়ের জন্য রুম ভাড়া প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা এবং ছোট আকারের রুমের ভাড়া ৩ হাজার ৫শ’ টাকা। এ ছাড়া খাবার হোটেলে প্রতিদিন সাধারণ শ্রেণীর সকালের নাশ্তা ৭৫ টাকা, দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য ২০০ টাকা করে। মধ্যম শ্রেণীর জন্য সকালের নাশ্তা ৭৫ টাকা, দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য ২৫০ টাকা করে। ভিআইপিদের জন্য একবেলা খাবার ধরা হয়েছে ৫৬৫ টাকা। এ ছাড়াও ১০০ জন লোকের খাবারের জন্য ভাড়া হিসেবে অতিরিক্ত নেয়া হয় ৫ হাজার টাকা। রুম ভাড়া খাবার বিলের টাকা নির্ধারণে সরকারের কোন নিয়ম এখানে চলে না। এটি তাদের নিজস্ব নিয়মে চলে। শুধুমাত্র টেরেডেস হোমস নয় আরডিআরএসসহ স্থানীয় এনজিওগুলো গেস্ট হাউসের নামে চলছে রমরমা হোটেল ব্যবসা। ব্যক্তি মালিকানাধীন আবাসিক হোটেল অর্ণব প্যালেসের মালিক কপিল জানান, সরকারের অনেক নীতিমালা মেনে হোটেল ব্যবসা করতে হয়। তিনি আরও জানান, তার আবাসিক হোটেল করতে পৌরসভা থেকে নকশা অনুমোদন, ট্রেড লাইসেন্স প্রতিমাসে গড়ে ভ্যাট ৬ হাজার টাকা। প্রতিবছর সরকারকে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা ফি দিতে হয়। তাছাড়া হোটেলে কতজন অবস্থান করছে তার তালিকা প্রতিদিন পুলিশকে অবহিত করতে হয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, হোটেল ব্যবসা করতে গেলে আমাদের বেলায় সরকারের বিধিনিষেধ থাকলেও এনজিওদের বেলায় তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে টেরেডেস হোমস ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা বিবেকানন্দ অধিকারী জানান, গেস্ট হাউসে এনজিওকেন্দ্রিক কর্মকর্তারা নির্দিষ্ট ভাড়া দিয়ে থাকেন। এনজিও বাদে অন্যান্য লোকজন আগে রাখা হলেও বর্তমানে তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর অন্যান্য অতিথিদের গেস্ট হাউসে রাখা হচ্ছে না। তবে, গেস্টদের তালিকা প্রতিনিয়ত পুলিশকে অবহিত করা হয় না। এ সম্পর্কে কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ জমির উদ্দিন জানান, আবাসিক হোটেলগুলো প্রতিদিনের তালিকা থানায় দেয়ার কথা, সে অনুযায়ী তারা তালিকা জমা দেয়। কিন্তু এনজিওগুলো তা করে না।
×