ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার নেই ;###;অর্থাভাবে রি-এজেন্ট কেনা হচ্ছে না ;###;থেকেও নেই ঢাকা মেডিক্যালের ল্যাব ;###;সাগর-রুনীর ডিএনএ টেস্ট এ ল্যাবেই সম্ভব ছিল

পার পাচ্ছে খুনীরা

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পার পাচ্ছে খুনীরা

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ দেশে ডিএনএ কার্যক্রম এখনও কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। অপরাধী শনাক্ত করার এই সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপারে উদাসীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অসংখ্য চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত হিমাগারে থাকলেও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে প্রতিষ্ঠিত আধুনিক ডিএনএ ল্যাব থেকে যাচ্ছে অব্যবহৃত। ডিএনএ ল্যাবের মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চয়তার সঙ্গে প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব। ভয়ঙ্কর অপরাধী থেকে শুরু করে ছিঁচকে চোরও ধরা যায় ডিএনএ প্রোফাইলিং প্রযুক্তির মাধ্যমে। চাঞ্চল্যকর খুন, অজ্ঞাত লাশ থেকে শুরু করে নারী নির্যাতন মামলারও রহস্য উদ্ঘাটনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। সুযোগ থাকা সত্ত্বে¡ও সচেতনতার অভাবে বাংলাদেশে এই প্রযুক্তির ব্যবহার নেই বললেই চলে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর রাজধানীর ৪৯টি থানা এলাকায় খুন, অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রায় ৩৪শ’ মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। এর মধ্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে ২ হাজার ৩৯৪টি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। বাকি লাশগুলো স্যার সলিম্ল্লুাহ মেডিক্যাল (মিটফোর্ড) মর্গে করা হয়েছে। প্রায় ৬শ’ লাশ অজ্ঞাত হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল দাফন করেছে। প্রতিদিন গড়ে ২টি অজ্ঞাত লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন খুনের শিকার হচ্ছে। এক বছরে মাত্র ২৫টি অজ্ঞাত লাশের ডিএনের নমুনা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। অন্য অজ্ঞাত লাশগুলোর নাম পরিচয় না থাকায় ‘হত্যাকারীদের শনাক্ত করা যায়নি’ বলে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেয় পুলিশ। এসব নৃশংস খুনগুলোর রহস্য আড়ালেই থেকে যায়। ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার না করায় অজ্ঞাত লাশের পরিচয় উদ্ধার হচ্ছে না কোন দিন। হত্যাকারীরাও পার পেয়ে যাচ্ছে। নিহতের স্বজনরা আজীবন আপনজনকে খুঁজে ফিরবে। তারা জানবে না তাদের স্বজনরা না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ডিএনএ প্রোফাইলিং প্রযুক্তির যথাযথভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধের মাত্রা কমতে পারে। উন্নত বিশ্বে সঠিকভাবে আলামত সংগ্রহ করা হয়। ফলে ডিএনএ প্রোফাইলিং পদ্ধতিতে সঠিক রিপোর্ট নিশ্চিত করা যায়? এক্ষেত্রে পুলিশসহ নিরাপত্তা বিভাগকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে? ঘটনাস্থল থেকে অপরাধের আলামত সঠিকভাবে সংগ্রহসহ সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ না করলে ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাব কোন কাজে আসবে না? এ জন্য পুলিশ বিভাগে আলাদা একটি তদন্ত ইউনিট গঠন করা যেতে পারে? ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ন্যাশনাল ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক এ্যাসিড) প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির প্রধান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী কোন অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করতে হলে প্রথমে অপরাধীকে শনাক্ত করতে হয়? অনেক ক্ষেত্রেই আসল অপরাধীকে শনাক্ত করতে না পারার কারণে বিচার কাজ একটা স্থানে এসে থেমে যায়? অপরাধ করার সময় ভিক্টিমের জামা-কাপড়ে অপরাধীর রক্ত, ভিক্টিমের হাত বা নখের নিচে অপরাধীর চুল বা ত্বকের কোষ লেগে থাকতে পারে? সেগুলোর ডিএনএ এনালাইসিসের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে সহজেই শনাক্ত করা যায়? এ ছাড়া অনেক অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধী শনাক্ত করা গেলেও সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে অপরাধী ছাড়া পেয়ে যায়? কেননা সনাতন ডাক্তারী পরীক্ষা অপরাধী সম্পর্কে তেমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে ব্যর্থ? আধুনিক এই ডিএনএ এনালাইসিস অপরাধী শনাক্তকরণের পাশাপাশি অপরাধ সম্পর্কে সাক্ষ্য-প্রমাণ নিশ্চিত করে? ডিএনএ এনালাইসিসের মাধ্যমে সন্তানের পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়? তিনি জানান, কারিগরি মান, যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত জনবলের বিবেচনায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ডিএনএ ল্যাব আন্তর্জাতিক মানের। যে কোন ধরনের আলামত থেকেই এ ল্যাবে ডিএনএ পরীক্ষা করা যায়। সাগর-রুনীর ডিএনএ পরীক্ষা এই ল্যাবেই করা সম্ভব ছিল। পিলখানায় সাবেক বিডিআর সদর দফতরে হত্যাকা-ে নিহত সেনাসদস্যদের লাশ শনাক্তকরণ, পুলিশের সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমানের কথিত সাত সন্তানের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়সহ বেশ কয়েকটি ঘটনায় এ ল্যাবের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। তা ছাড়া পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নির্ণয়সহ বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও এই ল্যাব যে কোন অপরাধ তদন্তের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ডিএনএ পরীক্ষা করতে সক্ষম। গেয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, ভয়ঙ্কর মারাত্মক পেশাদার না হলে সাধারণত সব অপরাধীই কিছু না কিছু আলামত রেখে বা ফেলে যায়। যা থেকে পরবর্তীতে তার বা তাদের ডিএনএ উদ্ধার সম্ভব। এসব নমুনার মধ্যে থাকে রক্ত, চুল, টিস্যু, থুথু বা কফ, সিমেন, অপরাধে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি, সিগারেটের বাঁট, আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে কামড়, নখের অঁাঁচড়, পরিহিত কাপড়, অপরাধীর খাবার এবং খাবারে ব্যবহৃত জিনিসপত্র। যেমন গ্লাস, মগ, চামচ ইত্যাদি। অর্থাৎ অপরাধীর স্পর্শে এসেছে এমন সব কিছু থেকেই ডিএনএ উদ্ধার করা সম্ভব। ১৯৮৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই অপরাধ তদন্তের কাজে ডিএনএ প্রোফাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করছে? পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে ডিএনএ প্রোফাইল টেকনোলজি অপরাধ তদন্তে ব্যবহার হয়ে আসছে? বাংলাদেশেও ন্যাশনাল ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে সব ধরনের নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। এখনও অর্থাভাবে নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দামী রি-এজেন্ট কিনতে না পারায় খুনের মামলা থেকে শুরু করে নির্যাতিত নারীদের মামলাগুলো অধিকাংশ নমুনা পরীক্ষা রিপোর্ট এখনও দেয়া যাচ্ছে না। এর ফলে পুলিশের সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিএনএ প্রতিবেদনের জন্য ল্যাবরেটরিতে গিয়ে রিপোর্ট না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ডিএনএ ল্যাবের পরীক্ষার মাধ্যমে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে নিজ ফ্ল্যাটে প্রখ্যাত পরিবেশবাদী আইনজীবী মিসেস নাতাশা খুন, পল্লবীতে ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন হত্যাসহ শতাধিক খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। তারা হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করেছেন। ডিএনএর পরীক্ষার মাধ্যমে ধসে পড়া রানা প্লাজার নিহত শ্রমিক, বিডিআর বিদ্রোহ ও গার্মেন্টসে অগ্নিকা-ে নিহতদের পরিচয় শনাক্তসহ বহু চাঞ্চল্যকর ঘটনায় কার্যক্রম সফলভাবে হয়েছে। অর্থাভাবে নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দামী রি-এজেন্ট কিনতে না পারায় খুনের মামলা থেকে শুরু করে নির্যাতিত নারীদের মামলাগুলো অধিকাংশ নমুনা পরীক্ষা রিপোর্ট এখনও দেয়া যাচ্ছে না। নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে বছরে ৫০ লাখ থেকে ৬০ লাখ টাকার রি-এজেন্ট প্রয়োজন হয়। এসব রি-এজেন্ট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশীয় আমদানিকারকদের মাধ্যমে রি-এজেন্ট কিনে আনতে হয়। এই কারনে দীর্ঘদিন এই ল্যাবটি বন্ধ রাখা হয়। এখনও রি-এজেন্ট কেনা হয়নি। তবে কিছু মামলার ডিএনএ রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে। ডেনিশ সরকারের সাহায্যে ২০০৬ সালে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে স্থাপিত দেশের প্রথম ন্যাশনাল ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবের মতো অত্যন্ত ব্যয়বহুল ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এদেশে আশঙ্কাজনক হারে ক্রমবর্ধমান নারী ও শিশু নির্যাতন কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা হয়েছিল। কেননা এর মাধ্যমে আসল অপরাধীকে শনাক্ত করে আদালতের সামনে দাঁড় করানো যাবে? অথচ নানা কারণে এই ল্যাবটি কার্যক্রম ঠিকমতো চলছে না। ক্যারি মিডলিস ১৯৮০ সালে ডিএনএ প্রোফাইল টেকনোলজির আবিষ্কার করেন ? এরপর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডিএনএ প্রোফাইল সর্বপ্রথম ১৯৮৭ সালে যুক্তরাজ্যে বিচারকার্যে ব্যবহৃত হয়? এরপর ১৯৮৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই অপরাধ তদন্তের কাজে ডিএনএ প্রোফাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে? ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ডিএনএ প্রোফাইল ল্যাবে এক একটি ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করতে খরচ পড়ে প্রায় তিন থেকে ৪ হাজার টাকার মতো? এই টাকা খরচ করতে নারাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাই অজ্ঞাত লাশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন খুনের মামলার রহস্য উদ্ঘাটন হচ্ছে না। হত্যাকারীরে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। ডিএনএ সংগ্রহ ॥ সিআইডি সূত্র জানায়, ভয়ঙ্কর মারাত্মক পেশাদার না হলে সাধারণত সব অপরাধীই কিছু না কিছু আলামত রেখে বা ফেলে যায়। যা থেকে পরবর্তীতে তার বা তাদের ডিএনএ উদ্ধার সম্ভব। এসব নমুনার মধ্যে থাকে রক্ত, চুল, টিস্যু, থুথু বা কফ, সিমেন, অপরাধে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি, সিগারেটের বাঁট, আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে কামড়, নখের আঁচড়, পরিহিত কাপড়, অপরাধীর খাবার এবং খাবারে ব্যবহৃত জিনিসপত্র। যেমন- গ্লাস, মগ, চামচ ইত্যাদি। অর্থাৎ অপরাধীর স্পর্শে এসেছে এমন সব কিছু থেকেই ডিএনএ উদ্ধার করা সম্ভব। কয়েকটি মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ॥ ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাসায় ফেরার পথে পল্লবীর কালশীর পলাশনগরে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হন শাহবাগ প্রজম্ম চত্বরের আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্ত ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন। এর আগে বহুল আলোচিত এই হত্যাকা-ের পর নিহত রাজীবের ডান হাতে পাওয়া চুল ও ল্যাপটপে লেগে থাকা রক্তের ডিএনএ পরীক্ষা করে ঢামেক হাসপাতালের ডিএনএর চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান। ২০১৫ সালের ১৭ নবেম্বর তিনি ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদের আদালতে সাক্ষ্য দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ এই হত্যাকা-ের আসামি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দীপু, মাকসুদুল হাসান অনিক , এহসানুর রেজা রুম্মান , মোঃ নাঈম সিকদার ওরফে ইরাদ, নাফির ইমতিয়াজ, সাদমান ইয়াছির মাহমুদ ও রেদোয়ানুল আজাদ রানাকে গ্রেফতার করে আদালতে চার্জশিট দেন। আদালতে গ্রেফতারকৃতরা রাজীব হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে দেখা হয়। এর পরই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-ের মূল রহস্য। ওই বছর ৩১ ডিসেম্বর গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন হত্যা মামলায় দুজনকে মৃত্যুদ-, একজনকে যাবজ্জীবন ও ৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-াদেশ দিয়েছে আদালত। ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর মিরপুর থানায় প্রতারণা করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ এনে জাতীয় ক্রিকেটার রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপি। তারও ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। হ্যাপী বিষয়টি প্রমাণ হয়নি। ২০১২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতের কোন এক সময় পশ্চিম রাজাবাজারের নিজ ফ্ল্যাটের বেডরুমে নির্মমভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনী। হত্যাকা-ের পর র‌্যাব তিন দফায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। প্রথম দফায় পাঠানো হয় হত্যাকা-ে ব্যবহƒত একটি ছুরি, ছুরির বঁঁাঁট, সাগরের মোজা, পরনের প্যান্ট ও রুনীর পরনের একটি প্যান্ট। দ্বিতীয় দফায় হত্যাকা-ের সময় সাগরের হাত-পা বঁঁধার কাপড় ও রুনির টি-শার্ট। যুক্তরাষ্ট্রের ওই ল্যাবে রুনির একটি টি-শার্টের ডিএনএ টেস্টের প্রাথমিক প্রতিবেদনে একাধিক ব্যক্তির ছাপ রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। একাধিক বলতে কমপক্ষে ৪-৫ ব্যক্তিকে বোঝানো হয়। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরির পর বিশ্লেষণ করলেই স্পষ্ট হতে পারে হত্যাকা-ে অংশ নেয়া খুনীর সংখ্যাও। ডিএনএ টেস্টে কারও কারও প্রোফাইল পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। প্রোফাইলে খুনীর আকৃতি-প্রকৃতিসহ একটি বর্ণনা থাকে। যা খুনী শনাক্তে খুব সহজ হয়। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই হত্যাকা-ের সময় রুনীর গায়ে থাকা একটি টি-শার্ট ডিএনএ টেস্ট করে এক খুনীর পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল উৎঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। টেস্টের প্রাথমিক প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট করেই উল্লেখ রয়েছে যে, একই আলামতে আরও কয়েকজনের ছাপ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে আভাস দেয়া হয় যে, হত্যাকা-ের সময় ধস্তাধস্তির সময় রুনীর গায়ে থাকা টি-শার্টে ওই ব্যক্তির চুল ও হাতের ছাপ লেগে গেছে। টেস্টের পূর্ণাঙ্গ বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরির পর বিশ্লেষণ করে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত এবং গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে র‌্যাব। ডিএমসির ডিএনএন ল্যাব ॥ অর্থাভাবে দামী রি-এজেন্ট কিনতে না পারায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে স্থাপিত দেশের প্রথম ন্যাশনাল ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা কার্যক্রম খুঁড়িয়ে খুঁঁড়িয়ে চলছে। রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনাগ্রহ। গত বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিএনএ ল্যাবরেটরিটি নমুনার পরীক্ষার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ল্যাব কর্তৃপক্ষ নিরুপায় হয়ে ল্যাব পরীক্ষা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন। এর ফলে পুলিশের সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিএনএ প্রতিবেদনের জন্য ল্যাবরেটরিতে গিয়ে রিপোর্ট না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পুনরায় ডিএনএ নমুনা কার্যক্রম চালু হয়েছে।
×