ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যাককুলামের রাজসিক অবসর

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ম্যাককুলামের রাজসিক অবসর

ম্যাককুলাম তোমাকে অভিনন্দন। আমি অনেক দিন ধরেই তোমার ভক্ত। এটা অসাধারণ কীর্তি। আমার যা অর্জন, সেটি পেরিয়ে যাবে, এমন কাউকে নিতে হলে তোমাকেই বেছে নিতাম! তুমি ক্রিকেটের একজন দারুণ দূত, যে জন্য খেলাটা আরও আকর্ষণীয় হয়েছে। ক্রাইস্টচার্চে বিদায়ী টেস্টের প্রথম ইনিংসে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়া ম্যাককুলামের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি। এ থেকেই বোঝা যায় ম্যাককুলাম কতটা জনপ্রিয়। সাবেক হয়ে গেলেন আধুনিক ক্রিকেটের সেই চিত্তাকর্ষক ব্যাটসম্যান। ব্যাট হাতে বিদায় বেলায় রাঙ্গিয়ে দিলেন ম্যাককুলাম। প্রথম ইনিংসে ৫৪ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে টেস্টে দ্রুততম সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড গড়েন। ২১ চার ও ৬ ছক্কায় ৭৯ বলে খেলেন ১৪৫ রানের ‘টর্নেডো’ ইনিংস। ৫৬ বলে সেঞ্চুরি করে যৌথভাবে রেকর্ডটা ছিল ভিভ রিচার্ডস ও মিসবাহ-উল হকের দখলে। এ্যান্টিগায় গ্রেট ভিভ রেকর্ডটা গড়েছিলেন ১৯৮৬ সালে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০১৪Ñএ আবুধাবিতে মিসবাহ পেয়ে বসেছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। ৬টি ওভার বাউন্ডারির (দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ১টি) পথে গড়েন সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডও। ১০১তম টেস্টে ম্যাককুলামের ছক্কা এখন ১০৭টি। ১০০ ছক্কা নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে সাবেক অসি তারকা এ্যাডাম গিলক্রিস্ট। টেস্টের ইতিহাসে ছক্কার সেঞ্চুরি নেই আর কারও। দ্বিতীয় ইনিংসেও চোখ ছিল তার ওপর। কিন্তু এবার আর পারেননি, জীবনের শেষ ইনিংসে আউট হয়েছেন ২৫ রান করে। তাতে কি ম্যাককুলামের কীর্তি ম্লান হতে পারে? অধিনায়ক হিসেবে ‘ফেয়ারওয়েল’ টেস্টে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা ঠিকই নিজের করে নিয়েছেন। দুই ইনিংস মিলিয়ে করেছেন ১৭০ রানÑ ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে আর কোনো ক্রিকেটারের এত রান সংগ্রহের নজির নেই। রেকর্ডটা ৮৫ বছরের পুরনো। ১৯৩০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক কার্ল নুনেস নিজের শেষ টেস্টে দুই ইনিংস মিলে করেছিলেন ১৫৮ রান (৬৬ ও ৯২, কিংস্টনে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে)। কেবল তাই নয়, বিদায়ী টেস্টে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটার হিসেবে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটাও নিজের করে নিয়েছেন ম্যাককুলাম। বিদায়ী সিরিজের প্রথম ম্যাচটা ছিল গর্বের। অভিষেক থেকে সেটি ছিল তার টানা এক শ’তম টেস্টÑ ইতিহাসে এমন নজির আর নেই। ৬৩ জন ক্রিকেটার এ পর্যন্ত এক শ’ বা তার বেশি সংখ্যক টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ব্যতিক্রম ম্যাককুলাম। ২০০৪ সালে অভিষেকের পর একটি ম্যাচও মিস করেননি কিউই উইলোবাজ! ওয়েলিংটনের স্মৃতিটা অবশ্য সুখকর নয়। দল হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে, ম্যাককুলাম করেছেন ০ ও ১০! তবে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্মৃতি সঙ্গী হয়েছে কিউই অধিনায়কের। হ্যামিল্টনের তৃতীয় ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের উড়িয়ে দিয়ে স্বাগতিকরা জেতে ৫৫ রানে। সেই সঙ্গে ২-১এ সিরিজ জিতে জীবনের শেষ ওয়ানডেতে ম্যাককুলামকে ‘চ্যাপেল-হ্যাডলি’ ট্রফি উপহার দেন মার্টিন গাপটিল-গ্র্যান্ট ইলিয়টরা। ‘আমি খুব ভাগ্যবান যে ১৪ বছর নিউজিল্যান্ডের জার্সিতে খেলার সুযোগ হয়েছে। দীর্ঘ এ সময়ে অনেক ভাল বন্ধু পেয়েছি। ভালবাসা ও সমর্থনের জন্য ভক্তদের ধন্যবাদ। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে খেলে বিদায় নেয়ার স্মৃতিটা কোনদিনই ভুলতে পারব না।’ বলেন ম্যাককুলাম। বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ার সঙ্গী করেই বিদায় নিলেন ম্যাককুলাম। নিউজিল্যান্ডের হয়ে টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড (৩০২) তারই দখলে। ২০০৪ সালে অভিষেকের পর খেলেছেন টানা ১০১টি টেস্টÑ ঐতিহ্যের সাদা পোশাকে যা একটি নতুন রেকর্ড। ১২টি সেঞ্চুরিসহ করেছেন ৬,৪৫৩ রান। উইন্ডিজের বিপক্ষে ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১শ’ ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড গড়েন তিনি। ম্যাককুলাম ওয়ানডে খেলেছেন ২৬০টি। ৫ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৬,০৮৩ রান। বিশ্বের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টি২০তে দুটি সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ডও তার দখলে। যেখানে ৭১ ম্যাচে সংগ্রহ ২১৪০ রান। ম্যাককুলামের নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে নবজাগরণের সৃষ্টি হয়। গত বছর প্রথম বারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে কিউইরা। ব্যাটিংয়ে-নেতৃত্বে চিত্তাকর্ষক নৈপুণ্যে দেশটির বর্ষসেরা ক্রিকেটার এবং ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন। ডাক পেয়েছেন ঐতিহাসিক কলিন কাউড্রে বক্তৃতার মঞ্চে। বয়স ৩৪। ব্যাট হাতেও ফর্মের তুঙ্গে। তাহলে কেন এই বিদায়? ‘যার শুরু আছে তার শেষও আছে। আমাদের ক্রিকেটের জন্য সময়টা খুবই ভাল। এই সময়ে বিদায়ে তৃপ্তি রয়েছে। গত কয়েক মৌসুম আমরা অসাধারণ ক্রিকেট খেলছি। এরপর পরিবার-সন্তানদের আরও বেশি করে সময় দিতে পারব’Ñ বলেন ম্যাককুলাম। তিনি আরও যোগ করেন ‘নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়ায় আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। এটা আমি দারুণভাবে উপভোগ করি। ব্ল্যাক-ক্যাপসদের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করাটাও বিশেষ কিছু। এ জন্য আমি খুবই গর্বিত। সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’ দেশের হয়ে খেলার সময় এক ঝাঁক তুখোড় ক্রিকেটার পেয়ে ধন্য বলেও জানিয়েছেন। ম্যাককুলাম বলেন, ‘গত কয়েক মৌসুমে অধিনায়ক হিসেবে আমি এক ঝাঁক তুখোড় খেলোয়াড় পেয়েছি। যাদের সঙ্গটা খুবই উপভোগ্য। ছিল ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, ড্যানিয়েল ভেট্টরি। ব্যাট হাতে কেন উইলিয়ামসন-কোরি এ্যান্ডারসন আর রস টেইলরের কথা আলাদা করে বলতে হয়। ফলও এসেছে। একাধিক বড় দলের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতেছি।’ সাফল্যের প্রসঙ্গে ম্যাককুলামের কণ্ঠে সন্তোষ, ‘প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনলে উঠেছি, যদিও একটুর জন্য শিরোপা ছোঁয়া হয়নি। আমাদের হাতে অনেক অনেক প্রতিভা রয়েছে, যাদের নিয়ে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। একদিন বিশ্বকাপ জিতবে। উইলিয়ামসনের মধ্যে নেতৃত্বগুণ রয়েছে। ও তুখোড় ব্যাটসম্যানও। আশা করছি টি২০ বিশ্বকাপে সাফল্য দিয়ে সে তার মিশনটা শুরু করতে পারবে। সব মিলিয়ে কিউই ক্রিকেটের জন্য এটা দারুণ সময়। বিদায়ের জন্য আমি তাই এই সময়টাকেই বেছে নিয়েছি।’
×