ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে চ্যাম্পিয়ন কারবার

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে চ্যাম্পিয়ন কারবার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সর্বোচ্চ দৌড়টা ছিল সেমিফাইনাল পর্যন্ত। ক্যারিয়ারে ৮টি ডব্লিউটিএ শিরোপা জিতলেও মর্যাদার গ্র্যান্ডসøামে এটাই ছিল সেরা প্রাপ্তি। কিন্তু শনিবার নিজেকেই ছাড়িয়ে গেলেন। ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম জিতলেন জার্মান টেনিস তারকা এ্যাঞ্জেলিক কারবার। অথচ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নামটা সেরেনা উইলিয়ামসেরই হওয়ার কথা ছিল। ফর্মের তুঙ্গে থাকা বিশ্বের এক নম্বর এ মার্কিন কৃষ্ণতারকাকে মেলবোর্নের রড লেভার এ্যারেনায় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে কারবার হারিয়ে দিয়েছেন ৬-৪, ৩-৬ ও ৬-৪ সেটে। ফলে ইতিহাস গড়ার অপেক্ষাটা আরও বাড়লো ৩৪ বছর বয়সী সেরেনার। গত বছর ইউএস ওপেনের ফাইনালে উঠেও হাতছাড়া করেছিলেন এবং এবার বছরের প্রথম গ্র্যান্ডসøামেই সুযোগটা হারালেন তিনি। ক্যারিয়ারের ২১ গ্র্যান্ডসøামের সঙ্গে আরেকটি শিরোপা যোগ করতে পারলেই সাবেক জার্মান তারকা স্টেফিগ্রাফের ২২ গ্র্যান্ডসøাম জয়ের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন। কিন্তু সেই অপেক্ষা বাড়লো বিশ্বের এক নম্বর এ তারকার। জয়ের পর অবশ্য সেরেনাকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে দাবি করেছেন ২৮ বছর বয়সী জার্মান সুন্দরী কারবার। দুই সপ্তাহ আগে কারবার যখন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শুরু করেছিলেন, অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয়া থেকে। এরপর টানা ৫ ম্যাচ জিতে প্রথমবারের মতো গ্র্যান্ডসøাম আসরের ফাইনালে উঠলেন কারবার। কোন গ্র্যান্ডসøামে সেরা সাফল্য ছিল তার ২০১১ সালে ইউএস ওপেন এবং ২০১২ সালের উইম্বলডনে সেমিফাইনাল খেলা। এবার সব সাফল্যকে ছাপিয়ে প্রথমবার কোন গ্র্যান্ডসøামের ফাইনাল খেলার সুযোগ করে নেন এ জার্মান তারকা। তবে প্রতিপক্ষ সেরেনা মানেই যে কোন টেনিস খেলোয়াড়ের জন্য বিশাল অগ্নিপরীক্ষা। অবশ্য আগের ৬ সাক্ষাতে একবার সেরেনাকে হারিয়ে দেয়ার অভিজ্ঞতা ছিল কারবারের। সেটার সঙ্গে এবারই প্রথম ফাইনালে ওঠার বিষয়টি চরম আত্মবিশ্বাস ও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে জার্মান এ তারকার জন্য। প্রথম সেটেই সেই আত্মবিশ্বাসটা কাজে লাগিয়ে গতিধর ও শক্ত-সামর্থ্য সেরেনার বিরুদ্ধে জিতে গেছেন। ব্যবধান ৬-৪! রড লেভার এ্যারেনার দর্শকরা এরপরই নড়েচড়ে বসেছেন তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর উত্তেজনায় ঠাসা ফাইনাল দেখার প্রত্যাশায়। তাদের হতাশ করেননি সেরেনা। পিছিয়ে পড়ে বারবার ঘুরে দাঁড়ানোটা একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনা এ মার্কিন তারকার। বিশেষ করে সর্বশেষ চারটি মেজর আসরে ১১টি তিন সেটের লড়াই হয়েছে সেরেনা এবং প্রতিপক্ষের মধ্যে। দ্বিতীয় সেটে কারবারকে ৬-৩ গেমে হারিয়ে আরেকবার তিন সেটের ক্লাইম্যাক্সে নিয়ে যান তিনি ম্যাচটিকে। তৃতীয় সেটে ভেঙ্গে পড়লেন বিশ্বসেরা। তার গতিময়তাকে সতর্কভাবে সামলেছেন এবং সেরেনাকে বারবারই কারবার পরাভূত করেছেন সূক্ষ্ম ও তীক্ষè মাটি কামড়ানো শট খেলে। যা হবার তাই হলো, তৃতীয় সেটে ৫-৪ গেমে এগিয়ে থাকা কারবার ব্রেক পয়েন্ট জিতলেন। হয়ে গেলেন চ্যাম্পিয়ন। প্রথম ম্যাচে হারতে হারতে টিকে যাওয়া এ জার্মান তারকা টানা ৬ ম্যাচ জিতে পরে ফেললেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মুকুট। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো দু’জনের সবমিলিয়ে ৭টি লড়াইয়ের সবগুলোই হার্ডকোর্টে। দুই বছর আগে সর্বশেষ সেরেনাকে মোকাবেলা করেছিলেন। এর মধ্যে সর্বশেষ স্ট্যানফোর্ড ওপেনের ফাইনালে সরাসরি সেটেই জয় তুলে নেন সেরেনা। দুই বছর পর প্রথম মোকাবেলা এবং আবারও ফাইনাল, প্রতিশোধ নিয়ে নিলেন কারবার। তবে ক্যারিয়ারে ২৬টি গ্র্যান্ডসøাম ফাইনাল খেলা সেরেনা মাত্র পঞ্চমবার হারলেন। ২১ গ্র্যান্ডসøাম জেতা এ তারকার এবার সুযোগ ছিল সবচেয়ে বেশি বয়সে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতার রেকর্ড সৃষ্টির। সুযোগ ছিল স্টেফির ২২ গ্র্যান্ডসøাম জয়ের রেকর্ড ছোঁয়ার। কোনটাই হলো না। অপেক্ষা বাড়লো তার। হতাশায় মুষড়ে পড়লেও পুরস্কার বিতরণীতে কারবারকে অভিনন্দন জানিয়ে সেরেনা বলেন, ‘দারুণ একটি ম্যাচ ছিল। এ্যাঞ্জি, তোমাকে অভিনন্দন, অনেক ভাল খেলেছ এবং অবশ্যই এটা তোমার প্রাপ্য ছিল। আশাকরি এই মুহূর্তটা তোমার জন্য খুবই উপভোগ্য হবে।’ জিতে গেলেও সেরেনার প্রতি সম্মানটা অটুট ছিল ২৮ বছর বয়সী কারবারের। তিনি প্রায় রুদ্ধশ্বাসে নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘সেরেনা আসলেই একজন অনুপ্রেরণার নাম। অবিশ্বাস্য মহান এক ব্যক্তিত্ব তিনি। ইতোমধ্যেই যা করেছেন তার জন্য সম্মান জানাচ্ছি। প্রথম ম্যাচে মনে হয়েছিল ইতোমধ্যেই আমার দেশে ফেরার বিমানে এক পা দিয়ে ফেলেছি। কিন্তু দ্বিতীয় সুযোগটা পেয়ে তা কাজে লাগাতে পেরেছিলাম। আর আজ আমার স্বপ্নটাই পূরণ হলো। আমার সারাজীবনে কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং সেটার ফলাফল হিসেবে আজ নিজেকে চ্যাম্পিয়ন দাবি করতে পারছি। জীবনের সেরা মুহূর্তগুলো এখানে কেটেছে আমার।’
×