ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কে নির্মাণসামগ্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

সড়কে নির্মাণসামগ্রী

সড়ক ও ফুটপাথ চলাচলের জন্য। সেই চলাচল নির্বিঘœ রাখাই কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তবে নাগরিকেরও দায় রয়েছে। ঔচিত্যজ্ঞান থাকলে কোন নাগরিক চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন না। তবু আমরা হরহামেশাই জনতার জন্য নির্ধারিত সড়ক ও ফুটপাথকে চলাচল নয় বরং অন্যতর কাজে ব্যবহৃত হতে দেখি। রাজধানী ঢাকাই কেবল এ ধরনের ব্যাধিতে আক্রান্ত, এমন নয়। দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহর, এমনকি জেলা শহরগুলোর বহু সড়ক অভিন্ন বিপন্নতার শিকার। অবশ্য ঢাকা এখন দেশের সবচেয়ে জনবহুল এলাকায় পরিণত হয়েছে। ভবনবহুল এলাকাও বটে। তাই দেশের অন্য যে কোন শহরের তুলনায় ঢাকা অনেক বেশি বিপদগ্রস্ত; ঢাকার সড়ক বিবিধ দখলে বিপর্যস্ত। আর যত ভোগান্তিÑ সবই ওই সড়ক ব্যবহারকারী তথা পথচারীর। বলাবাহুল্য, পথচারী হেঁটে কিংবা যানে চেপে দু’ভাবেই সড়ক পাড়ি দিতে পারেন। উভয় ক্ষেত্রেই বিরক্তি ও ভোগান্তির রকমফের তেমন ঘটে না। লজ্জাজনক ব্যাপার হলো বহু পথচারীও রাস্তার পাশে খোলা নর্দমা বা পাঁচিল পেলে সেই স্থানে প্রকাশ্যে জলবিয়োগ করে থাকেন। এটি যে কত দৃষ্টিকটু ও গর্হিত কাজÑ অনেকেই তা বুঝতে চান না। এই অপকর্মও সড়ক চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করে। সড়ক ও ফুটপাথ জনসাধারণের চলাচলের জন্য সরকারী মালিকানাধীন এলাকা। এটি কারও ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক সম্পত্তি নয় অথচ সমাজে অনেক ব্যক্তি আছেন যারা রাস্তাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তিই ভাবেন। তারা সড়কের ওপর যথেচ্ছাচার করে থাকেন। অপরদিকে ভবননির্মাতা প্রতিষ্ঠানের লোকজনকেও সড়ক দখল করে নাগরিক চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করতে দেখা যায়। এ দুটো বিষয়ই যে বেআইনী এবং জনস্বার্থপরিপন্থী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সমগ্র ঢাকা মনিটরের দরকার নেই, সড়ক দখলকারীদের তুঘলকি কা-কারখানা সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য ঢাকার গুটিকতক সড়ক পরিদর্শন করলেই যথেষ্ট। বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব। সড়কে বা গলিপথে ইট, বালু, রড বা অন্য যে কোন নির্মাণসামগ্রী রাখলে তা তুলে নিয়ে যেতে পারবে সিটি কর্পোরেশন। যে কোন ব্যক্তিমালিক বা প্রতিষ্ঠানÑ সবার ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বিধানে এই বিষয়টি রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। রাস্তায় যে অবাধে নির্মাণসামগ্রী রাখা হচ্ছে, এমনকি রাস্তার ওপরই বিশাল মেশিনে বিকট আওয়াজ তুলে সিমেন্ট-বালু-কংক্রিটের মিশ্র্রণ হচ্ছে, তা দেখা যায় রাজধানীর প্রায় সব আবাসিক এলাকায়। নির্মাণাধীন ভবনগুলোর সামনে রাস্তার প্রায় এক-চতুর্থাংশ জায়গাজুড়ে থাকে ভাঙা ইটের স্তূপ। পাশে কয়েক সারিতে রাখা থাকে বালু। মিক্সচার মেশিনে তৈরি হয়ে ইট-বালু আর সিমেন্টের মিশ্রণ। সম্প্রতি একজন সাংবাদিক এমন একটি পরিস্থিতিতে নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক পরিচয়দানকারী ব্যক্তিকে ওই অনিয়মের কথা জিজ্ঞেস করে অদ্ভুত উত্তর পান। তাকে জানানো হয়Ñ ‘ঢাকা শহরে সবাই এভাবেই বাড়ি বানায়। আপনি কি নতুন দেখছেন?’ এ কথা থেকে সড়ক দখলকারী নির্মাতা প্রতিষ্ঠানসমূহের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাস্তায় নির্মাণসামগ্রী রাখা বেআইনী হলেও অনেকেই তা মানেন না। সিটি কর্পোরেশন এদের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে ব্যবস্থাও নিলেও তা যৎসামান্য। ঢাকার মেয়রদ্বয় কিছু ইতিবাচক কাজ করে নগরবাসীর প্রশংসা পেয়েছেন। তাদের ওপর আস্থা বাড়ছে। তাই ঢাকাবাসী আশা করে, জনস্বার্থে ডিসিসি রাস্তা দখলকারীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযানে নামবে। ভবন নির্মাণকারীদের সচেতনতাও যে জরুরী, সেটাও মনে রাখতে হবে।
×