ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

চন্দ্রাবতী শিশুসাহিত্য সম্মেলনে তিন লেখককে সম্মাননা

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৩ অক্টোবর ২০১৫

চন্দ্রাবতী শিশুসাহিত্য সম্মেলনে তিন লেখককে সম্মাননা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার প্রতিপাদ্যে শুরু হলো চন্দ্রাবতী শিশুসাহিত্য সম্মেলন। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের সূচনা হয় শুক্রবার। চন্দ্রাবতী একাডেমি আয়োজিত সম্মেলনে পুরস্কার প্রদান করা হয় তিন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিককে। সম্মাননাপ্রাপ্ত শিশুসাহিত্যিকরা হলেন- হালিমা খাতুন, হায়াৎ মামুদ ও আলী ইমাম। দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত এবারের সম্মেলনে স্মরণ করা হচ্ছে দুই বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ফয়েজ আহ্্মদ ও এখলাসউদ্দিন আহ্্মদ এবং দুই কীর্তিমান কবি আহসান হাবীব ও শামসুর রাহমানকে। দু’দিনের সম্মেলনে উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান ছাড়াও থাকছে চারটি অধিবেশন। এর মধ্যে রয়েছে দুটি সেমিনার, ছড়া-কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং দু’টি গীতিনৃত্যনাট্যের পরিবেশনা। শুক্রবার শরতের বিকেলে আনন্দঘন পরিবেশে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে শুরু হয় সম্মেলন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও সম্মেলনে পৃষ্ঠপোষক এবি ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন চন্দ্রাবতী একাডেমির নির্বাহী পরিচালক কামরুজ্জামান কাজল। আসাদুজ্জামান নূর পুরস্কারপ্রাপ্ত তিন শিশুসাহিত্যিকের হাতে সম্মাননা স্মারক ও সম্মাননার অর্থমূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। আনিসুজ্জামান পরিয়ে দেন উত্তরীয়। সম্মাননা গ্রহণ শেষে অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন সাহিত্যিকত্রয়ী। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে শিশুসাহিত্যিক ও ভাষাসংগ্রামী হালিমা খাতুন রসিকতার আশ্রয় নিয়ে বলেন, আমি আসলে আবোল-তাবোল লিখি। যা মনে আসে তাই লিখি। অবস্থা এমন হয়েছে যে স্বপ্নের ভেতরেও আমি গল্প খুঁজে পাই। ঘরের মেঝেতেও পেয়ে যাই গল্পের অনুষঙ্গ। তিনি আরও বলেন, দেশে শিশুসাহিত্যভিত্তিক একটি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত। এটা হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক অন্ধকার দূর হবে। হায়াৎ মামুদ বলেন, মানুষের অনেক ইচ্ছা থাকে। আমারও দুইটা ইচ্ছা ছিল। সেই দুই ইচ্ছা হলো লেখালেখি করবো ও বই পড়বো। সেটাই করেছি ও করে যাচ্ছি। সেই লেখার সুবাদে আমার নিজস্ব কিছু পাঠকও আছে। তাঁদের জন্যই লিখে যাচ্ছি। কারণ, কেউ না পড়লে তো লিখে লাভ নেই। আলী ইমাম বলেন, স্কুলে পড়ার সময় আমাকে পাঠাগার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই পাঠাগার রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে বইয়ের সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্য। আর অবন ঠাকুরের অনূদিত একটি বই পড়ে আকৃষ্ট হই লেখালেখির প্রতি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শিশুদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে শুধুমাত্র একাডেমিক শিক্ষার ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। শিশুসাহিত্যসহ নানামুখী সৃজনশীল শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন বরেণ্য ব্যক্তিত্বের উদাহরণ টানেন যাঁরা একাডেমিক শিক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর না রেখেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সভাপতির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, চন্দ্রাবতী একাডেমির প্রকাশনা অত্যন্ত উন্নতমানের। এসব প্রকাশনা হাতে নিলে আমাদের আনন্দ হয়। এসময় তিনি চন্দ্রাবতীর সমৃদ্ধি কামনা করেন। আলোচনা ও পুরস্কার প্রদান শেষে কিশোরগঞ্জ লোক সংস্কৃতি পরিষদের শিল্পীরা পরিবেশন করে গীতিনৃত্যনাট্য চন্দ্রাবতী। এছাড়া অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের ছড়াকার শৈলেন্দ্র হালদার ছড়া পাঠ করেন। আজ শনিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় ও সমাপনী দিন। এদিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে বেলা ৩টায়। অনুষ্ঠিত হবে ছড়া-কবিতাপাঠের চতুর্থ পর্ব। বিকেল ৪টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান। সব শেষে সন্ধ্যা ৬টায় স্বপ্নবিলাস কলাকেন্দ্র পরিবেশন করবে গীতিনৃত্যনাট্য নক্শি কাঁথার মাঠ। তিন দিনের নিখিলবঙ্গ বাউলসঙ্গীত সম্মিলনী ॥ ‘দেখ দেখ মনুরায়/ হয়েছে উদয়/ কী আনন্দময় সাধুর সাধবাজারে’ স্লোগানে শুরু হলো প্রথম নিখিলবঙ্গ বাউলসঙ্গীত সম্মিলনী। শুক্রবার রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রী শ্রী আনন্দময়ী আশ্রম প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের সূচনা। পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের বাউলদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সম্মিলনীর আয়োজন করেছে লালন বিশ্বসংঘ। ফকির লালন সাঁইয়ের ১২৫তম তিরোধান সামনে রেখে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তিন পর্বে বিভক্ত ঢাকার পর্বের উদ্বোধক কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া লালন ধামের খাদেম ফকির মোহাম্মদ আলী শাহ। প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন, সাবেক সংস্কৃতি সচিব. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লালন বিশ্বসংঘের নির্বাহী পরিচালক আবদেল মাননান। পূর্ববঙ্গের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান ও বীরভূমের অর্ধশতাধিক বাউল এই উৎসবের অংশ নিচ্ছেন। প্রথম দিন সন্ধ্যায় শুরু হয়ে রাতভর চলে লালনের আধ্যাত্মিক গানের পরিবেশনা। একের এক লালনের প্রচলতি-অপ্রচলিত গান পরিবেশন করে শিল্পীরা। আর সেই সব গান মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন শত শত লালনপ্রেমীরা। লালন পরিবেশনার পাশাপাশি মঞ্চে ডান পাশে চলে সাধুসংঘ। লালন ভক্ত-অনুরাগীদের পদচারণায় মুখর ছিল আনন্দময়ী আশ্রম প্রাঙ্গণ। তিন দিনের এই সম্মীলনিতে অংশ নিচ্ছেন ঢাকার ফরিদা পারভীন, চন্দনা মজুমদার, মীনা বড়ুয়া, দিল আফরোজ রেবা, কুষ্টিয়ার অঞ্জলি ঘোষ দুর্গা, টুনটুন বাউল, কোহিনুর বেগম, ঝিনাইদহের জহুরা বেগম, আবদুল মনসুর আলী শাহ, ফকির সাত্তার শাহ, ময়মনসিংহের সুনীল কর্মকার, ফরিদপুরের কৃষ্ণকীর্তন দাস, আজমল শাহ, চুয়াডাঙ্গার ফকির হোসেন আলী শাহ, রইসউদ্দিন শাহ, গেদন শাহ, আবুল হোসেন শাহ, তৌহিদুর রহমান, তারাচাঁদ শাহ, অলিয়ার শাহসহ অনেকে। ভারতের নদীয়া থেকে অংশ নিচ্ছেন বীরেন্দ্র নাথ দাস বাউল, সুভদ্রা শর্মা, ইলা বিশ্বাস, আয়ুশী বিশ্বাস, মুর্শিদাবাদের লাল মোহাম্মদ, সৌমেন বিশ্বাস, বীরভূমের নিতাই দাস বাউল, বর্ধমানের আবদুল হালিম, গোলাম ম-ল, নূর আলম প্রমুখ। তিনদিনের বাউলসঙ্গীতের সম্মিলনীর দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার বিকেল তিনটা থেকে রাতভর পর্যন্ত থাকবে নানা আয়োজন। কাল রবিবার দেয়া হবে বাউল সম্মাননা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিন পর্বের সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় কর্নঝোরা রাজা পাহাড়ে। তৃতীয় ও শেষ পর্বের আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে ১৫ অক্টোবর কুষ্টিয়ার লালন ধামে। চলবে ১৮ অক্টোবর। এ সব আয়োজনজুড়ে থাকবে লালনের গান, সাধুসংঘ ও মেলা। ভুটানি চলচ্চিত্র উৎসব ॥ বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শুক্রবার বিকেল থেকে শুরু হলো ৫ দিনব্যাপী ভুটানি চলচ্চিত্র উৎসব। ভুটানের চতুর্থ রাজা জিগমি সিঙ্গি ওয়াংচুকের ৬০তম জš§বার্ষিকী উপলক্ষে এই আয়োজন করেছে ভুটান দূতাবাস। ভুটানের আলোচিত ১২টি চলচ্চিত্র নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ উৎসব। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত পেমা চোডেন বক্তৃতায় তাঁর দেশের চলচ্চিত্র বিষয়ে বলার পাশাপাশি দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়াও তিনি ভুটানের রাজা জিগমি সিঙ্গি ওয়াংচুক সম্পর্কে কথা বলেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল ভুটান। এ জন্য আমরা ভুটানের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই চলচ্চিত্র উৎসবটি শুরু হওয়ায় একজন অভিনেতা হিসেবে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমরা সাংস্কৃতিক বিনিময় করে যাচ্ছি, আশা করি, ভুটানের সঙ্গেও আমরা সাংস্কৃতিক লেনদেন করতে পারবো। বিশ্বব্যাপী চলমান উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বড় ভূমিকা রাখবে। আলোচনা শেষে প্রদর্শিত হয় ‘দ্য কাপ’ চলচ্চিত্রটি। বিশ্বকাপ ফুটবল ভুটানে কী ধরনের প্রভাব ফেলেছিল, সেটি চমৎকারভাবে দৃশ্যায়িত হয়েছে এতে। এছাড়াও এ উৎসবে প্রতিদিনই থাকছে ভুটানের বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রের একাধিক প্রদর্শনী। এ উৎসবে আরও দেখানো হবে ‘ট্রাভেলার্স এ্যান্ড ম্যাজিসিয়ানস’, ‘চর্টেন কোরা’, ‘লেঙ্গো’, ‘নাজহয়েন এক্সপ্রেস’, ‘দ্য রেড ডোর’, ‘স্কুল এমং গ্ল্যাসিয়ার্স’, ‘প্রাইস অফ লেটার’, ‘ইকাং লেমো’, ‘প্রাইস অফ নলেজ’, ‘লিংঝিঃ দ্য ল্যান্ড অফ মেডিসিনাল হার্বস’ এবং ‘দ্য কস্ট অফ ক্লাইমেট চেঞ্জ’ চলচ্চিত্র। ৬ অক্টোবর পর্যন্ত চলমান এ উৎসব দর্শকদের জন্য উš§ুক্ত থাকবে।
×