গাফফার খান চৌধুরী ॥ অল্প সময়ের মধ্যেই গ্রেফতার হতে পারে গুলশান কূটনীতিকপাড়ায় ইতালির নাগরিক সিজার তাভেলা হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত এক বা একাধিক খুনী। হত্যাকা-ের তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। খুনীদের গ্রেফতার করতে তদন্ত সংস্থা অনেকদূর এগিয়েছে। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের সঙ্গে বিভিন্ন সময় গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের প্রায় শতভাগ মিল রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন ব্লগার হত্যার ধরনের সঙ্গে ইতালীয় নাগরিক হত্যার মিল রয়েছে। শুধু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রের পার্থক্য রয়েছে। ব্লগার হত্যায় ধারালো ছুরি আর ইতালীয় হত্যায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার পরিকল্পনায় হত্যা করা হতে পারে সিজারকে। মামলাটির তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে এমন তথ্যই জানা গেছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে গুলশান-২ নম্বরের ৯০ নম্বর সড়কে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এনজিও আইসিসিও কো-অপারেশন বাংলাদেশের প্রফিটেবল অপরচ্যুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সিজার তাভেলা (৫০)। এনজিওটি ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে পানি, স্যানিটেশন, রিফিওজি সমস্যা ও পুনর্বাসনসহ নানা সমাজসেবামূলক কাজ করে আসছে। ২০১৩ সালে এনজিও ব্যুরোর তালিকাভুক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের ১৫ মে সিজার বাংলাদেশে যোগদান করেন। ইতোপূর্বে অন্তত দশ দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিওতে কাজ করেছেন তিনি।
তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে, সিজার সুপরিকল্পিত হত্যাকা-ের শিকার। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিল ঘোষণার পরই সিজার সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। অস্ট্রেলিয়ার আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে সরকারকে কূটনৈতিকভাবে চাপে রাখতেই কোন গোষ্ঠী হত্যাকা-টি ঘটায়।
সিজার হত্যার পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের নাও হতে পারে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার পরিকল্পনায় সিজারকে হত্যা করার বিষয়টিও বিচিত্র নয়। অস্ট্রেলিয়ার আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করতেই তৃতীয় কোন পক্ষ বাংলাদেশকে সারাবিশ্বে নেতিবাচকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তুলতে এবং বেকায়দায় ফেলতে সিজার হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটাতে পারে।
ঘটনাস্থল থেকে সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ বোরের তিনটি বুলেটের খোসা উদ্ধার হয়েছে। খোসাগুলোর প্রাথমিক পরীক্ষায় খুবই আধুনিক প্রযুক্তির সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ বোরের পিস্তলের বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ধরনের বুলেট ও আগ্নেয়াস্ত্র ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে। জঙ্গীদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ বোরের পিস্তল ও বুলেটের সঙ্গে উদ্ধারকৃত বুলেটের খোসার মিল রয়েছে। সাধারণত কাউকে নিশ্চিতভাবে হত্যা করতেই জঙ্গীরা এ ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে থাকে। ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র হরহামেশাই ব্যবহার হওয়ার কোন নজির ইতোপূর্বে লক্ষ্য করা যায়নি।
এমনকি পেশাদার খুনী ও শূটারদের মধ্যেও এ ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় না। সরাসরি ঘটনাস্থলে তিন খুনীর উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে হত্যাকা-ে সবমিলিয়ে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ জনের উপস্থিতি ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মূল খুনীরা ৮৯ নম্বর রোড ব্যবহার করে পালিয়ে গেছে। সহযোগী খুনীরা অন্য রাস্তা ব্যবহার করে পালিয়ে যায়। হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে আইএসের তরফ থেকে যে বিবৃতি এসেছে তার কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের কোন গোষ্ঠী তদন্তকারীদের নজর ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দিতেই ভুয়া আইডি ব্যবহার করে এমন বিবৃতি দিয়েছে বলে তদন্তকারীরা প্রায় নিশ্চিত। ইতোমধ্যেই অনেক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ক্যামেরার ফুটেজ ঝাপসা হওয়ায় তেমন কোনকিছুই পাওয়া যায়নি।
সিজার হত্যাকা-ের ঘটনায় এনজিওটির প্রচুর কাগজপত্র, বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাংলাদেশে কর্মরত ৮৮ জনের মধ্যে ৬৬ জন সর্ম্পকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত আলামতের পর্যালোচনা চলছে।
এদিকে শুক্রবার পর্যন্ত সিজারের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরেই রয়েছে। লাশ হস্তান্তরের বিষয়টি বাংলাদেশের ইতালীয় দূতাবাসের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। ইতালির মিলান শহরে বসবাসরত ১৬ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ের কাছেই সিজারের লাশ হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের উপকমিশনার মাহবুব আলম জনকণ্ঠকে বলেন, নানা দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হত্যাকারীদের গ্রেফতারে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে। শীঘ্রই হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
তাভেলা হত্যায় একাধিক খুনী জড়িত, শীঘ্রই গ্রেফতার হতে পারে
প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৩ অক্টোবর ২০১৫
আরো পড়ুন