ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

অস্ট্রিয়ার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ

জার্মান সীমান্তে কড়াকড়ি

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জার্মান সীমান্তে কড়াকড়ি

ইউরোপে শরণার্থী সঙ্কট শোচনীয় রূপ নেয়ার প্রেক্ষাপটে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া তাদের সীমান্তে রবিবার হঠাৎ করে সাময়িকভাবে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ফলে দুটি দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, রাস্তায় রাস্তায় গাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে এবং সীমান্ত নিরাপদ রাখতে শত শত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যখন রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসী হাঙ্গেরীয় সীমান্ত পার হয়ে পশ্চিমদিকে ছুটে চলেছে, তখন ওই সব কড়াকড়ি আরোপ করা হলো। জার্মানি যে ইউরোপের সবচেয়ে বড় মানবিক সঙ্কটজনিত বোঝা বহন করতে গিয়ে ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়ছে ওই পদক্ষেপই এর শক্তিশালী আভাস। খবর টেলিগ্রাফ ও নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। জার্মানিজুড়ে শহরের পর শহর থেকে দেশে প্রবেশ করতে থাকা হাজার হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার আর কোন সুযোগ নেই বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আর মিউনিখের মেয়র নতুন করে আসা লোকজনকে শীঘ্রই রাস্তায় ঘুমাতে হবে বলে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন। এ অবস্থায় চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলের সরকার অস্ট্রিয়া-সংলগ্ন সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ পুনরায় আরোপ করল। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টমাস ডি মেইজিয়ের বার্লিনে এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেন, এ ব্যবস্থার লক্ষ্য হলো জার্মানি হতে শরণার্থীদের বর্তমান স্রোত সীমিত করে দেয়া এবং এক সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধার করা। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্র অস্ট্রিয়া সংলগ্ন এর সীমান্তে অনুরূপ কড়াকড়ি আরোপ করে। বার্লিনের ঘোষণা মেরকেল সরকারের নীতির ক্ষেত্রে এক নাটকীয় পরিবর্তনেরই আভাস দেয়। মাত্র এক সপ্তাহ আগে মিউনিখে শত শত স্থানীয় লোক আগত শরণার্থীদের স্বাগত জানাতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলে আবেগঘন দৃশ্য চোখে পড়ে। এর আগে জার্মানি এক মানবিক সঙ্কট এড়ানোর জন্য শরণার্থীদের আশ্রয় দেবে বলে ঘোষণা করে। কিন্তু রবিবার ডি মেইজিয়ের বলেন, জার্মানি একাই শরণার্থীদের বোঝা বহন করবেÑ সেটা প্রত্যাশা করা যায় না। ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, জার্মানির সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ পুনরায় আরোপ আইনত যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে হয়। শেনজেল চুক্তির অধীনে অস্থায়ী জরুরী ব্যবস্থা হিসেবে এরূপ নিয়ন্ত্রণ আরোপের অনুমতি দেয়া হয়। ১ লাখ ৬০ হাজার শরণার্থীকে ইইউর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নতুন করে ভাগ করে দিতে কমিশনের প্রেসিডেন্ট জাঙ্কারের দেয়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সোমবার ব্রাসেলসে বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা। এ অভিবাসীরা সম্মুখসারির প্রধান প্রধান দেশ গ্রীস, ইতালি ও হাঙ্গেরিতে অপেক্ষা করছে। পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্রসহ কয়েকটি দেশের নেতারা বলেছেন, তারা যে কোন ধরনের শরণার্থী কোটার প্রতি আপত্তি জানাচ্ছেন, তবে তারা আরও নতুন শরণার্থী গ্রহণে ইচ্ছুক হতে পারেন, যদি তা ঐচ্ছিক হয়। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধকবলিত এলাকাগুলো এবং আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরিতিয়া ও আফ্রিকার অন্যত্র থেকে প্রায় দু’বছর ধরে লাখ লাখ অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করছে। তাদের অনেকেরই লক্ষ্য জার্মানিতে পৌঁছানো, কিন্তু অন্যরা সুইডেন, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস ও অন্যান্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ইতোপূর্বে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথটিই ছিল সবচেয়ে পছন্দসই। কিন্তু তুরস্ক থেকে ছোট ছোট নৌকায় ওই পথ পার হতে হয় বলে সেটি ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। তখন স্থলপথে গ্রীস থেকে মেসিডোনিয়া ও সার্বিয়া হয়ে দক্ষিণ হাঙ্গেরি যাওয়ার পথেই চলতি গ্রীস্মকালে বেশির ভাগ শরণার্থী আকৃষ্ট হয়। হাঙ্গেরীর প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে দেশটির সার্বিয়া সংলগ্ন ১০৮ মাইল সীমান্ত বরাবর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে শুরু করেন। জার্মান সীমান্তে নতুন কড়াকড়ি আরোপের কথা ঘোষণা করে ডি মেজিয়ের দেশটির বহিঃসীমান্ত বরাবরও ‘ওয়েটিং জোন’ গঠনের আহ্বান জানান। সেখানে অভিবাসীরা রেজিস্টারভুক্ত হতে এবং শরণার্থী মর্যাদা ও কোন দেশে আশ্রয় না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবে। হাঙ্গেরী সরকার রবিবার জার্মানির ঘোষণাকে উষ্ণভাবে স্বাগত জানায়। এ সরকার সঙ্কট নিয়ে বিশেষভাবে কট্টর মনোভাব গ্রহণ করে।
×