ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভিবাসী ঢলে পাল্টে যাবে জার্মানির চেহারা ॥ মেরকেল

আরও সোয়া লাখ শরণার্থী নেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আরও সোয়া লাখ শরণার্থী নেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ইউরোপ অভিমুখী অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঢল সামলাতে আরও অতিরিক্ত ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থী গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জার্মানি এবং ফ্রান্স এক যৌথ প্রস্তাবে বলেছে ইউরোপের প্রত্যেক দেশকে বাধ্যতামূলক কোটায় শরণার্থী গ্রহণ করতে হবে। তবে এতে বাদ সেধেছে হাঙ্গেরি। সোমবার ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওঁলাদ বলেছেন, আগামী ২ বছরের মধ্যে তার দেশ ২৪ হাজার শরণার্থীকে জায়গা দেবে। অপরদিকে জার্মানি নেবে আরও ৩১ হাজার শরণার্থী। একই দিন স্পেন এবং নিউজিল্যান্ডও কিছু শরণার্থী গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছে। স্পেন ১৫ হাজার আর নিউজিল্যান্ড ৭৫০ জন সিরীয় শরণার্থী নেয়ার কথা জানিয়েছে। বর্তমানে জার্মান অভিমুখী অবিরাম শরণার্থীদের জায়গা দিতে অতিরিক্ত ৬শ’ কোটি ইউরোর একটি তহবিল ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জার্মানিতে ইতোমধ্যে ২০ হাজার অভিবাসী এসে পৌঁছেছে। সোমবার পর্যন্ত আরও ১১ হাজার অভিবাসী জার্মানিতে প্রবেশ করতে পারে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে হাঙ্গেরি থেকে অস্ট্রিয়া হয়ে আরও বহু শরণার্থী জার্মানির রয়েছে। খবর বিবিসি, এএফপি ও আলজাজিরা অনলাইনের। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল তার কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রীদের নিয়ে সোমবার দীর্ঘ বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান বলে খবরে জানানো হয়। এতে বলা হয়, জার্মানের রাজ্য সরকার ও নগর কর্তৃপক্ষগুলো যাতে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থা নিতে পারে, সেজন্য ওই অর্থ ছাড় করা হবে। এছাড়া আশ্রয়ের আবেদন নিষ্পত্তি ও শরণার্থীদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের কাজও দ্রুত এগিয়ে নেয়া হবে। জার্মানির সীমান্ত শরণার্থীদের জন্য খুলে দিয়ে মেরকেল বিভিন্ন মহলের প্রশংসা পেলেও নিজের দেশেই তাকে এ নিয়ে সমালোচনায় পড়তে হচ্ছে। তার এই সিদ্ধান্ত ভয়ঙ্কর এক নজির তৈরি করেছে বলে রক্ষণশীলদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে অনড় এ্যাঙ্গেলা মেরকেল বলেছেন, জার্মান অভিমুখী শরণার্থীদের এই অবিরাম ঢল আগামী বছরগুলোতে গোটা জার্মানির চেহারাই পাল্টে দেবে। এ সময় তিনি জার্মান অভিমুখী শরণার্থীদের সেসব স্বেচ্ছাসেবক স্বাগত জানাচ্ছে তাদের প্রশংসা করেন। মেরকেল বলেন, যেসব স্বেচ্ছাসেবক এ কাজে এগিয়ে এসেছে তারা মূলত জার্মানির প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে ফুটিয়ে তুলছে। তারা আমাদের দেশের সম্মান বাড়িয়ে তুলছে। এ সময় তিনি বলেন, এদের মধ্যে যেসব শরণার্থী জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে অনাগ্রহী তাদের নিরাপদে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আবার ইউরোপের যেসব দেশ শরণার্থী গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করছে তাদের সমালোচনা করেন মেরকেল। তিনি বলেন, এটি একটি ভুল বার্তা বলে জানান তিনি। ওদিকে ইউরোপ অভিমুখী অভিবাসী গ্রহণে মহাদেশটির যেসব দেশ অনীহা প্রকাশ করেছে তাদের সমালোচনা করেছেন স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোশে ম্যানুয়েল গার্সিয়া মারজেলো বলেছেন, চলমান অভিবাসী সঙ্কট ইউরোপের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণœ করবে। তিনি বলেন, নৈতিক এবং বাস্তবতার নিরীখে আমরা ইউরোপের ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করতে পারি না। আবার সন্ত্রাসবাদের পক্ষাবলম্বন করতে পারি না। জোশে ম্যানুয়েল গার্সিয়া মারজেলো বলেন, স্পেনে চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও আমরা শরণার্থী গ্রহণে রাজি হয়েছি। এ সময় শরণার্থী গ্রহণকে সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। তবে স্পেন ঠিক কতসংখ্যক শরণার্থী গ্রহণ করবে তার কোন সংখ্যা উল্লেখ করেননি তিনি। কিন্তু এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক সূত্র জানিয়েছে স্পেন ১৫ হাজার অভিবাসী গ্রহণ করবে। এরই মধ্যে ইউরোপের অন্যান্য দেশ কতসংখ্যক অভিবাসী গ্রহণ করবে এ বিষয়ে বুধবার একটি নতুন পরিকল্পনা পেশ করবেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ জুনকার। অবশ্য এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবাম। তার মতো হলো এত বেশি সংখ্যক অভিবাসী গ্রহণ না করে তুরস্ককে অর্থায়ন করা যেতে পারে যাতে দেশটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শরণার্থী গ্রহণ করতে পারে। শরণার্থী গ্রহণ পরিকল্পনায় জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং সুইডেন রাজি থাকলেও এতে বাদ সাধছে হাঙ্গেরির মতো পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো। তারা মুসলিম শরণার্থী গ্রহণে অনাগ্রহী। চলমান অভিবাসী সঙ্কট নিরসনে ইউরোপকে অন্তত ২ লাখ শরণার্থী গ্রহণের কথা জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। আগামী তিন বছরে ৭৫০ জন সিরীয় শরণার্থীকে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ইউরোপে মানবিক সঙ্কট মোকাবেলায় সাড়াদানের জন্য ব্যাপক চাপ আসার প্রেক্ষাপটে সোমবার এ ঘোষণা দেয় দেশটি। অভিবাসন মন্ত্রী মাইকেল উডহাউস বলেন, সরকারের বিদ্যমান কোটার আওতায় সিরীয়দের ১৫০ স্থানে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হবে। এছাড়া একটি বিশেষ জরুরী কর্মসূচীর মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আরও ৬শ’ লোককে গ্রহণ করা হবে। অভিবাসী নেয়ার ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডের জন্য একটি কোটা নির্ধারিত আছে। চলমান কোটা অনুযায়ী দেশটিকে ৭৫০ জন অভিবাসীকে নিতে হবে। ১৯৮৭ সালের পর এ কোটা আর বাড়েনি। উডহাউস বলেন, সিরিয়া ও ইউরোপে বর্তমানে যে মানবিক সঙ্কট চলছে তা নিয়ে নিউজিল্যান্ডের বেশিরভাগ মানুষের মতো সরকারও খুবই উদ্বিগ্ন। সিরিয়া ও ইউরোপে সম্প্রতি মানবিক সঙ্কট আরও জোরালো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জন কি গত সপ্তাহে আগামী বছরের আগ পর্যন্ত শরণার্থীর কোটা পরিবর্তনের কথা নাকচ করেছিলেন। তবে এখনকার ঘোষণায় রক্ষণশীল সরকারের অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়টিই প্রতীয়মান হয়েছে। তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে সিরীয় শরণার্থী শিশু আয়লানের লাশ ভেসে আসার ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর অভিবাসীদের ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে নিউজিল্যান্ডের জনগণ দাবি তোলে। প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়া আরও সিরীয় শরণার্থী নেয়ার আগ্রহের কথা জানানোর একদিন পর নিউজিল্যান্ডও আরও শরণার্থী নেয়ার এ ঘোষণা দিল। জার্মানি ও অস্ট্রিয়া অভিমুখী শরণার্থী স্রোতে বাংলাদেশীর সংখ্যা হাতেগোনা ॥ ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া থেকে সংবাদদাতা জানান, হাঙ্গেরি থেকে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া অভিমুখী শরণার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশীরাও আছেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের সংখ্যা পাঁচ শতাদিক বলে যে খবর ঢাকার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে তা সত্য নয়। এমনকি গত আট-নয় মাসে বাংলাদেশের নাগরিক যারা অস্ট্রিয়ায় আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন তাদের সংখ্যাও একশ’র বেশি হবে না। বর্তমান এই শরণার্থী স্রোতে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ামুখী বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকাংশই এসেছেন যুদ্ধবিদ্ধস্ত লিবিয়া ও সিরিয়া এবং অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়া ইউরোপের দেশ গ্রীস থেকে। শরণার্থী বা আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য অস্ট্রিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস কি করতে পারে এ প্রশ্নটি আমি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফরকে করেছিলাম। তিনি আমাকে স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন শরণার্থীদের ক্যাম্পে কাজ করছে এমন দোভাষিদের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশীদের সম্পর্কে তথ্য পেয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে তাঁর বা বাংলাদেশ দূতাবাসের সরাসরি কিছু করার নেই। কিন্তু অস্ট্রিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে যে কোন প্রয়োজনীয় সহায়তা তিনি করবেন।
×