ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৯ আগস্ট ব্যাখ্যা দিতে আপীল বিভাগের নির্দেশ

প্রধান বিচারপতি ছাড়া বেঞ্চ গঠনের আবেদন জনকণ্ঠের

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৪ আগস্ট ২০১৫

প্রধান বিচারপতি ছাড়া বেঞ্চ গঠনের  আবেদন জনকণ্ঠের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাকার পরিবারের তৎপরতা /পালাবার পথ কমে গেছে দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত নিবন্ধ প্রকাশে জারি করা আদালত অবমাননার রুলের জবাব আগামী রবিবার দাখিল করতে জনকণ্ঠ সম্পাদক-প্রকাশক ও মুদ্রাকর মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ (এম এ খান মাসুদ) এবং নিবন্ধ লেখক নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়কে নির্দেশ দিয়েছেন আপীল বিভাগ। সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ প্রদান করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা ছিলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আদালতে সরকার পক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আদেশের পর জনকণ্ঠের পক্ষের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন সাংবাদিকদের কাছে আদালতের নির্দেশনার কথা জানান। তিনি বলেন, আমরা মামলা লড়ার জন্য তিন মাসের সময় চেয়ে আবেদন করেছিলাম। একই সঙ্গে যেহেতু প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধেই অভিযোগ, উনি একটি পক্ষ। সেহেতু ওনাকে বাদ দিয়ে বেঞ্চ পুনর্গঠনের জন্য আবেদন করেছিলাম। আদালত এ বিষয়ে কোন আদেশ দেননি। তবে সময় তিন মাসের পরিবর্তে এক সপ্তাহ দিয়েছেন। আগামী রবিবারের মধ্যেই জবাব দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই দিন জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদককে পুনরায় আদালতে হাজির হতেও বলেছেন আদালত। সকালে জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ (এম এ খান মাসুদ) এবং নিবন্ধের লেখক নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় আদালতে উপস্থিত হন। শুনানির শুরুতেই এ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়িয়ে সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল এম সোয়েব খান জনকণ্ঠের পক্ষে এ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড হওয়ার বিষয়ে আপত্তি দেন। পরে প্রধান বিচারপতি আইনজীবী সোয়েব খানের কাছে জানতে চান, তিনি এই মামলায় এ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড হতে পারেন কি না। জবাবে সোয়েব খান বলেন, তার এ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড হতে আইনে বাধা নেই। এ সময় প্রধান বিচারপতির পাশে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকেও জিজ্ঞেস করেন পারে কি না, তিনিও পারবে বলে মত দেন। পরে প্রধান বিচারপতি সোয়েব খানকে সরে যেতে বললে জনকণ্ঠ সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকের পক্ষের আরেক আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন দাঁড়িয়ে সময়ের আবেদন উপস্থাপন করেন। এ সময় আইনজীবী আবেদনটি পড়া শুরু করলে প্রধান বিচারপতি তাকে থামিয়ে দেন এবং বলেন সময় চান। এর পর আইনজীবী তিন মাসের সময় চাইলে আদালত রবিবার পর্যন্ত সময় দেন। এর পর আদালত সহকারী এ্যাটর্র্নি জেনারেলের দায়িত্বে থেকেও এ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় আইনজীবী সোয়েব খানকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছেন। তাকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড সনদ কেন বাতিল করা হবে না তা জানাতে বলা হয়েছে। শুনানির শেষে জনকণ্ঠের সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, আদালত আমাদের তলব করেছিলেন, তাই আমরা হাজিরা দিতে এসেছি। আমরা ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য তিন মাস সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালত আমাদের রবিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। আদেশের পর আইনজীবী সোয়েব খান সাংবাদিকদের বলেন, “রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা শুনানিতে বলেছেন আমি সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কর্মরত থাকায় এই মামলা করতে পারি না। আমি বলেছি এ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড হিসেবে এই মামলা করেছি। ...এই মামলা করতে বাধা নেই। আমি রাষ্ট্রের আইনজীবী হয়েও কেন জনকণ্ঠের এ্যাডভোকেট-অন রেকর্ড হলাম তা জানতে চেয়ে জনকণ্ঠের পক্ষ সাতদিনের মধ্যে ত্যাগ করতে বলেন আদালত। অন্য এ্যাডভোকেট-অন রেকর্ডের কাছে তা হস্তান্তর করতে বলেন। কিন্তু আমি এতে রাজি না হওয়ায় আদালত আমার বিরুদ্ধে শো’কজ নোটিস জারি করেন। এর পরই আদালত কারণ দর্শানো নোটিস দিয়ে এ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ডের লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না- ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার জবাব দিতে বলেছে বলে জানান তিনি। আদালতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক শফিকুর রহমান এবং জনকণ্ঠের সাংবাদিক ও কর্মকর্তাবৃন্দসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ। গত ১৬ জুলাই ‘সাকার পরিবারের তৎপরতা ॥ পালাবার পথ কমে গেছে’ শিরোনামে একটি কলাম প্রকাশ করে দৈনিক জনকণ্ঠ। এর লেখক নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়। এ কলামে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে গত ২৯ জুলাই আদালত দু’জনকে ৩ আগস্ট হাজির হয়ে জবাব দাখিলের জন্য তলব করেন। ২৯ জুলাই আদালত আদালত অবমাননার সুয়োমটো রুল জারি করেন। ঐ রুলে উল্লেখ করা হয়, নিবন্ধে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আদালতের গঠনমূলক সমালোচনা করা যাবে। তাই তাঁর কাছে বিনীত প্রশ্ন ১৪৩ জনকে পুড়িয়ে মারার অন্যতম হুকুমের আসামি কিভাবে চিকিৎসার জন্য জামিন পায়। জমির আল নিয়ে লাঠি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে হাজার হাজার দরিদ্র আসামি যেখানে বছরের পর বছর জেলে আটকা। কারণ, তারা খুনের আসামি। সেখানে রাজনীতির নামে প্রকাশ্যে এই ১৪৩ জনকে খুন করার পরেও সে জামিন পাবে। এই কি বিচারের ন্যায় দ-। বিচারকরা নিশ্চয়ই জানেন, কেন তারা পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে এভাবে নৃশংস হত্যাকা- চালাচ্ছে। বাস্তবে এটা আইএসের পদ্ধতি। আইএস সবখানে এভাবে ভয়াবহ নৃশংসতা সৃষ্টি করে দেশের মানুষকে পাজেলড করে দিতে চায়। যাতে কেউ প্রতিরোধে এগিয়ে না আসে। ফখরুলের জামিনের ভেতর দিয়ে বিচারকরা কি বাংলাদেশকে আইএসের পথে অগ্রসর হওয়ার সুবিধা করে দিলেন না? এ সব ঘটে কি ফখরুলের টাকা আছে বলে আর যারা জমির আল নিয়ে মাথা ফাটায় ওদের টাকা নেই বলে ?—————- এখানেই শেষ। ’৭১-এর অন্যতম নৃশংস খুনী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। নিষ্পাপ বাঙালীর রক্তে যে গাদ্দারগুলো সব থেকে বেশি হোলি খেলেছিল এই সাকা তাদের একজন। এই যুদ্ধাপরাধীর আপীল বিভাগের রায় ২৯ জুলাই। পিতা মুজিব তোমার কন্যাকে এখানেও ক্রুশে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। তাই যদি না হয়, তাহলে কিভাবে যারা বিচার করছেন সেই বিচারকদের একজনের সঙ্গে গিয়ে দেখা করে সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবারের লোকেরা? তারা কোন পথে বিচারকের কাছে ঢোকে। আইএসআই ও উলফার পথে না অন্য পথে? ভিকটিমের পরিবারের লোকদেরকে কি কখনও কোন বিচারপতি সাক্ষাত দেয়। বিচারকের এথিকসে পড়ে। কেন শেখ হাসিনার সরকারকে কোন কোন বিচারপতির এ মুহূর্তের বিশেষ সফর ঠেকাতে ব্যস্ত হতে হয়। সে সফরের উদ্যোক্তা জামায়াত বিএনপির অর্গানাইজেশন। কেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী আগে গিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। কি ঘটেছে সেখানে। ক্যামেরনই পরোক্ষভাবে বলছেন সকল সন্ত্রাসীর একটি অভয়ারণ্য হয়েছে লন্ডনে। একই সঙ্গে ওই দিন মামলা চলাকালে বিভিন্ন মন্তব্যের কারণে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের বিষয়েও আপীল আদালত বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের নিকট।
×