ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছায়ানটে ভরতনাট্যমের নান্দনিক উপস্থাপনায় মুগ্ধ দর্শক

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৭ জুলাই ২০১৫

ছায়ানটে ভরতনাট্যমের নান্দনিক উপস্থাপনায় মুগ্ধ দর্শক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। ছায়ানট মিলনায়তন ইতিমধ্যেই দর্শকের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভর্তি। ভরতনাট্যমের এই সুন্দর মুহূর্ত বিফলে যেতে দিতে যেন কেউই নারাজ। মঞ্চের পশ্চাতভাগে স্থাপন করা হয়েছে নটরাজের মূর্তি। আলো ও রঙিন ধোঁয়ায় রাঙানো হয়েছে নৃত্যাঙ্গন। নৃত্যসংগঠন ‘কল্পতরু’ আয়োজিত ভরতনাট্যম উৎসবের সমাপনী দিন ছিল শনিবার। এরই মধ্যে মাইকে ঘোষণা এলো, সুধী দর্শক, শুভ সন্ধ্যা। আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাই আমাদের ভরতনাট্যম উৎসব ‘রঙ্গ প্রবেশ ২০১৫’র দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে। আজকের অনুষ্ঠানে কল্পতরুর নৃত্যগুরু ভারত থেকে আসা অমিত চৌধুরী ও শিক্ষার্থীদের নৃত্য ছাড়াও রয়েছে ভারত থেকে আগত শিল্পী রাজদীপ ব্যানার্জী, এন শংকর, সত্য বিশাল ও সুকুমার কুট্টি’র ভিন্নধর্মী এক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সুইটি দাশের এ নান্দনিক ঘোষণা সবাইকে আরও উৎসাহী করে তোলে। শুরুতেই নৃত্যগুরু অমিত চৌধুরীর পরিবেশনায় ছিল ‘নরসিংহ কৌকুভম’। নরসিংহ বিষ্ণুর চতুর্থ অবতার। নরসিংহ হিংস্র ও আতঙ্কজনক হলেও শ্রদ্ধাভাজন এবং বীর্যবান। ‘দুগ্ধবৎ সাগরে বসবাসরত মহাপ্রাণ’ স্তুতি দিয়ে শুরু হয় এ নৃত্য। ‘অদ্যাঞ্জলী’ শীর্ষক পরবর্তী নৃত্য পরিবেশ করে কল্পতরুর শিক্ষার্থীরা। এটি হলো ঐশ্বরিক মাতৃশক্তির প্রতি ভক্তের বিনীত আবেদন। নৃত্যরচনা করেছেন কীর্তি রামগোপাল। শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় পরিবেশনায় ছিল ‘শুভ্রমানিয়াম স্তুতি’। শিব শক্তির পুত্র কার্তিকের গুণগান নিয়ে রচিত এ স্তুতি। শিল্পী অমিত চৌধুরীর দ্বিতীয় পরিবেশায় ছিল ‘ওয়ার্নম’। কবির ভাষ্যে সকল স্বর্গীয় সত্তা এবং ঋষিগণ মহত্তম দেব, যার বক্ষে স্বয়ং লক্ষ্মী বিরাজমান, সেই বিষ্ণুর চরণে মাথানত করেন। এই পরিবেশনায় বিষ্ণু আর মহর্ষি ভ্রিগুর বিবাদের কাহিনী নৃত্যশৈলীতে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন শিল্পী। নৃত্যশিল্পী বিষ্ণুর দশাবতার বর্ণনা করে গজেন্দ্র মুক্তির ঘটনা এবং বাবনাবতারের কাহিনী তুলে ধরেন। এরপর শিল্পী শঙ্করী মৃধা মহাজাগতিক নট শিবের প্রশংসা গীত ‘নটেশ স্তুতি’ পরিবেশন করেন। জুআইরিয়া মৌলী ও শাম্মী আক্তার পরিবেশন করেন ‘শিবপাদম’। অভিনয় আঙ্গিকের নৃত্য ‘পদম বারো কৃষ্ণাইয়া’ পরিবেশন করেন শিল্পী অর্থি আহমেদ। কৃষ্ণকে সম্ভাষণ করে ভক্ত তাকে তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায় এ নৃত্যে। একের পর এক শিল্পীদের নৃত্যশৈলীতে মুগ্ধ দর্শক। নিরবে দেখছে আর নৃত্যশেষে করতালিতে তাদের অভিনন্দিত করছে। এরপর অনুষ্ঠানে আরও চমক আনার জন্য ব্যতিক্রমী এক পরিবেশনা শুরু হয়। ভারত থেকে আমন্ত্রিত শিল্পীরা পরিবেশন করেন কর্ণাটিক ‘কাচেরি’ বা সঙ্গীতানুষ্ঠান। সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুকুমার কুট্টি। মৃদঙ্গে ছিলেন এন শঙ্কর এবং বেহালায় সত্য বিশাল। শিল্পীরা শাস্ত্রীয় ও ভিন্ন ভিন্ন তাল-লয় সহযোগে দর্শক-শ্রোতাদের যেন অন্য এক জগতে নিয়ে যায়। সবশেষ পরিবেশনা ছিল নৃত্যশিল্পী অমিত চৌধুরীর ‘তিল্লানা’ নৃত্য। ভরতনাট্যম মার্গমের অন্তিম উপস্থাপনা ‘তিল্লানা’। বিশুদ্ধ নৃত্য আঙ্গিকের নাচ এবং তাল বিন্যাস লক্ষ করা যায় এ নৃত্যে। পূর্বী রাগ ও রূপকম তালে এ নৃত্যের সঙ্গে নাচে অংশ নেন কল্পতরুর শিক্ষার্থীরা।
×