ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রীসের ইউরোজোনে থাকা অনিশ্চিত

গভীর সঙ্কটে ইউরোপ

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ৭ জুলাই ২০১৫

গভীর সঙ্কটে ইউরোপ

গ্রীস একক মুদ্রা ইউরোতে থাকতে ইউরোজেনের দেয়া শর্ত গণভোটে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করায় ইউরোপ গভীর সঙ্কটে পড়েছে। গ্রীসের আর্থিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে এবং ইউরো থেকে দেশটির বিদায়ের সময়ও দৃশ্যত ঘনিয়ে এসেছে। গণভোটের পর সোমবার সকালে গ্রীকরা অনিশ্চয়তাময় কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়ে। তারা ব্যাংকগুলো বন্ধ এবং এটিএম বুথগুলোতে সামান্য অর্থেরই সন্ধান পায়। খবর টেলিগ্রাফ, গার্ডিয়ান ও ইয়াহু নিউজের। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ইউরো প্রচলিত হওয়ার পর এবারই এটা সবচেয়ে গুরুতর পরিস্থিতির সম্মুখীন। ইউরোজোন গ্রীসকে বেইলআউট দেউলিয়াত্ব ঠেকাতে আর্থিক সহায়তা বাবদ আরও তহবিল যোগানোর জন্য যে শর্ত দিয়েছিল, গ্রীকরা রবিবার গণভোটে তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করায় ওই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তারা শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি ভোটে প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাসের প্রতি সমর্থন জানায়। সিপ্রাস ইতোপূর্বেই ওই আর্থিক সহায়তার বিনিময়ে প্রধানত জার্মানি ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) আরও কৃচ্ছ্রনীতি অবলম্বনের দাবি অগ্রাহ্য করেন। গ্রীসে পাঁচ বছর ধরে অনুসৃত কৃচ্ছ্রনীতির ব্যর্থতা এবং বামপন্থী সিরিজা জোট সরকার ও এর ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিশ্বাসবোধ অন্তর্হিত হওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে জাতীয় গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে গ্রীকরা তাদের ঋণদাতাদের সরকারী ব্যয় হ্রাস ও কর বৃদ্ধি করার দাবির প্রতি ‘না’ জবাব দেয়। গ্রীসের অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারুফাকিস পদত্যাগ করেছেন। গণভোটের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার কিছু পরই তিনি বলেন, তিনি মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ না দিলেই ইউরোজোনের কোন কোন অর্থমন্ত্রী ও গ্রীসের অন্যান্য ঋণদাতা খুশি হন। তিনি জানান, ভারুফাকিসের পদত্যাগ কোন চুক্তিতে পৌঁছতে সহায়ক হতে পারে বলে সিপ্রাস মনে করেন এবং সেজন্যই তিনি পদত্যাগ করছেন। গ্রীসের ‘না’ ভোট দেশটিকে ইউরোজোনের বাইরে নিয়ে যাবে বলে ইইউ নেতারা আগেই বলে এসেছেন। গ্রীসের ইউরো ত্যাগ ইউরোপকে রাজনৈতিক ও আর্থিক দিকে আরও একীভূত করার ব্রাসেলস পরিকল্পনার প্রতি এক গুরুতর আঘাতই হবে। টিভি ও টুইটার এ্যাকাউন্টে সিপ্রাসের ঘোষিত প্রতিশ্রুতি পালন করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তিনি সেখানে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার করেন। গণভোটের ফলাফল নিয়ে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা প্রতিক্রিয়া কী রূপ জানান, সেটি গ্রীসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইউরোজোনের এক শীর্ষ বৈঠক ডাকা হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল ও ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফাঁসোয়া ওলাঁদ রবিবার রাতে একে অপরের সঙ্গে কথা বলেন। গ্রীক জনগণের ভোটের রায়ের প্রতি অবশ্যই সম্মান দেখাতে হবে বলে তাঁরা একমত হন। মেরকেলের দফতর থেকে এ কথা বলা হয়। ইউরো গ্রুপের প্রধান জেরোয়েল ডিজসেলব্লোয়েন বলেন, গণভোটের ফলাফল গ্রীসের ভবিষ্যতের জন্য খুবই দুঃখজনক। ইউরোজোনের অর্থমন্ত্রীদের সমিতি হলো ইউরো গ্রুপ। তিনি বলেন, গ্রীক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য কঠিন পদক্ষেপ ও সংস্কার অপরিহার্য। আমরা গ্রীক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের জন্য অপেক্ষা করব। মেরকেলের ডেপুটি সিগমার গ্যাব্রিয়েল বলেন, এথেন্স ব্যাপক ভোটে আরও কৃচ্ছ্রনীতি অনুসরণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এর ইউরো অংশীদারদের সঙ্গে আপোসরফার সব আশাই বিনষ্ট করে দিয়েছে। ভাইস চ্যান্সেলর গ্যাব্রিয়েল বলেন, গ্রীকরা আরও কৃচ্ছ্রনীতির বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার পর এথেন্সকে আর শত শত কোটি ইউরো ঋণ দেয়া নিয়ে নতুন আলোচনার কথা ধারণা করাই কঠিন। গ্যাব্রিয়েল দৈনিক ট্যাসেসপাইজেন পত্রিকাকে বলেন, সর্বশেষ যে সেতুর ওপর দিয়ে গ্রীস ও ইউরোপ আপোসরফার দিকে এগিয়ে যেতে পারত, সিপ্রাস তা ভেঙ্গে দিয়েছেন। সোমবার এশিয়ার বেশিরভাগ পুঁজিবাজারেই শেয়ারের দাম পড়ে যায়। অর্থনীতিবিদরা বলেন, বিনিয়োগকারীরা এরূপ নিরঙ্কুশ ‘না’ ভোট প্রত্যাশা করেননি এবং শেয়ারের দাম আরও পড়তে পারে।
×