ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রুশ কোম্পানি গ্যাজপ্রম পাঁচটি গ্যাসকূপ খননের কাজ পাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২৩ জুন ২০১৫

রুশ কোম্পানি গ্যাজপ্রম পাঁচটি গ্যাসকূপ খননের কাজ পাচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ ফের অতিরিক্ত ব্যয়ে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে দিয়ে পাঁচ গ্যাস কূপ খনন করানো হচ্ছে। বাপেক্সের রিগ (খনন যন্ত্র) বসে থাকার পরও কোম্পানিটির নিজস্ব গ্যাসক্ষেত্রের কূপ খননের দায়িত্ব তুলে দেয়া হচ্ছে রাশিয়ার কোম্পানির হাতে। জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, ‘বিদ্যুত জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইন-২০১০’ অনুসারে রাশিয়ান কোম্পানিকে দিয়ে পাঁচ গ্যাসকূপ খনন করার অনুমতি চেয়ে সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে রবিবার চিঠি পাঠিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এর আগেও রাশিয়ান গ্যাস কোম্পানিকে দিয়ে ১০টি কূপ খনন করা হয়। ওই সময় বাপেক্সের প্রত্যেকটি কূপের জন্য গ্যাজপ্রমকে দিতে হয় ১৮ দশমিক ছয় মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেড এবং বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড লিমিটেডকে দিতে হবে ২০ দশমিক ছয় মিলিয়ন ডলার। প্রত্যেকটি কূপ খননের জন্য গ্যাজপ্রমকে গড়ে ১৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয় দেশীয় গ্যাস কোম্পানির। কিন্তু সেখানে বাপেক্স মাত্র ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকায় একটি গ্যাসকূপ খনন করে থাকে। ওই সময়ে বলা হয়, জাতীয় গ্যাস ঘাটতির কারণে গ্যাজপ্রমকে কাজ দেয়া হয়েছে। বাপেক্সের একার পক্ষে এত কূপ খনন করা সম্ভব নয়। বাপেক্স সূত্র বলছে এখন মোবারকপুরে বাপেক্সের একটি রিগ কাজ করছে। সেখানে কাজও শেষ পর্যায়ে আর বাইরে বাপেক্স সালদা নদীতে রিগ পাঠিয়েছে কিন্তু কাজ শুরু হয়নি। কৈলাসটিলায় কূপ খনন শেষে রিগ বসে রয়েছে। এছাড়া বাপেক্সের হাতে কূপ খননের কোন নতুন কাজও নেই। তারপরও কেন বাপেক্সের নিজস্ব গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাজপ্রমকে দিয়ে কূপ খনন করা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাপেক্সের এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তে হচ্ছে। আমাদের কিছু করার নেই। আমরাও জানি না কেন এমন সিদ্ধান্ত বাপেক্সের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, এমনিতে আগেই গ্যাজপ্রমকে দিয়ে কূপ খনন করে বড় রকমের দেনায় পড়েছে বাপেক্স। এখন নতুন করে আবার কূপ খনন করা হলে দেনার অঙ্ক বাড়তেই থাকবে। জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আতিকুজ্জামান বলেন, অন্যকে দিয়ে কেন কূপ খনন করা হবে এই সিদ্ধান্ত তো বাপেক্স নেয়নি। বিষয়টি সরকারের ওপর পর্যায়ের সিদ্ধান্ত, আমার পক্ষে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা সম্ভব নয়। বাপেক্সের রিগ বসে রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের রিগ বসে রয়েছে আমাদের প্লান-প্রোগ্রামও আছে। সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে জ্বালানি বিভাগের উপসচিব জগেন্দ্র নাথ সরকারের প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়েছে বিদ্যুত, জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ অনুসারে গ্যাজপ্রোমের সঙ্গে মোট পাঁচটি কূপ খনন করা হবে। কূপগুলো হচ্ছে বাখরাবাদ-১০, রশিদপুর-৯, রশিদপুর-১০, রশিদপুর-১২ এবং শ্রীকাইল-৪। কূপগুলো খনন করতে মোট ব্যয় হবে নয় কোটি ৬২ লাখ ২৯ হাজার ৩৯৮ টাকা। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসেবে যা ৭৬৯ কোটি ৮৩ লাখ ৫১ হাজার ৮৪০ টাকা। অর্থাৎ দেশীয় মুদ্রায় প্রতিটি কূপ খনন করতে প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর বাইরে রশিদপুরের তিনটি কূপের সড়ক এবং কূপের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২২ কোটি পাঁচ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৬ টাকা প্রয়োজন হবে। যা প্রকল্প ব্যয়ের সঙ্গে যোগ করলে খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ৭৯১ কোটি ৯০ লাখ টাকায়। উভয় চুক্তিতে সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। এর আগের চুক্তিতে গ্যাজপ্রম ১০টি কূপ খনন করে। চুক্তি অনুযায়ী বিজিএফসিএলের তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের ১৯, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর কূপ, সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেডের (এসজিএফএল) রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রের ৮ নম্বর কূপ এবং বাপেক্সের বেগমগঞ্জের ৩ নম্বর, শাহাবাজপুরের ৩ ও ৪, শ্রীকাইল ৩ ও সেমুতাংয়ের ৬ নম্বর উন্নয়ন কূপ খনন করে গ্যাজপ্রম। ওই সময় বলা হয়েছিল রাশিয়ান এই কোম্পানিটি খনন করা ১০টি কূপ থেকে দৈনিক ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হবে। ওই সময় খননের পর তিতাসে একটি কূপে পানি চলে আসে। আর কূপ খননের দুই বছর না পেরুতেই এখন ওই ১০ কূপের প্রতিদিনের উত্তোলন ক্ষমতা ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। গ্যাসখাতের সংশ্লিষ্টরাই বলছেন, এই বিপুল পরিমাণ ব্যয়ে কূপ খনন করে এই অবস্থা হবে তা আগে থেকে জানার পরও পেট্রোবাংলা সরকারকে এ বিষয়ে প্রভাবিত করেছে। এখনও একই প্রক্রিয়ায় কাজ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি তাদের তৃতীয় মাত্রার জরিপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য তারা আগ্রহপত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। কোম্পানিটি তাদের করা তৃতীয়মাত্রার জরিপ মূল্যায়ন করে দেখতে চায়। এরমধ্যেই কূপ খননের চুক্তি করা হচ্ছে। জানাযায় স্বল্পতম সময়ে কূপ খননের শর্তে অতীতে ১০ টি কুপ খনন কাজ দেয়া হয় গ্যাজপ্রোমকে। কিন্তু সেখানে দেখা যায় ১৮ মাসের কথা বলে এই কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত আরো প্রায় এক বছর সময় অনুমোদন দেয় সরকার।
×