ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রীষ্মের খুব চেনা সুগন্ধী ফুল

কাঠগোলাপের সাদার মায়া মিশিয়ে দিয়ে ভাবি...

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৭ মে ২০১৫

কাঠগোলাপের সাদার মায়া মিশিয়ে দিয়ে ভাবি...

মোরসালিন মিজান ॥ দেখতে মোটেও গোলাপের মতো নয়। তবে নামের সঙ্গে গোলাপ শব্দটি যুক্ত আছে। হ্যাঁ, কাঠগোলাপ নাম। খুব পরিচিত ফুল। বার বার দেখা। আর এখন তো মৌসুম। সর্বত্র ফুটে আছে। উঁচু গাছ। ছড়ানো ডালপালা। অনেক দূর থেকে দেখা যায়। কাঠগোলাপ গাছে যেমন থাকে, ঝরেও পরে দ্রুত। ভূমির উপর উপুড় হয়ে পরে থাকা ফুল যথেষ্ট সতেজ। অটুট থাকে মিষ্টি ঘ্রাণ। গাছের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পথিককে তাই থামতে হয়। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ফুল কুড়িয়ে নাকের সামনে ধরে। অদ্ভুত ভঙ্গি করে ঘ্রাণ নেয়। তরুণীরা চুলের ভাঁজে গুঁজে নেয়। সব মিলিয়ে দারুণ প্রিয় ফুল কাঠগোলাপ। একই ফুল কাঠচাম্পা, গৌরচাম্পা, চালতা গোলাপ, গুলাচি, গোলকচাঁপা নামেও পরিচিত। আর ইংরেজীতে ফুলটিকে বলা হয় প্যাগোডা ট্রি। গাছটি দেবমন্দিরে খুব পাওয়া যেত বলেই এমন নামকরণ। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা কাঠগোলাপকে মৃত্যুহীন প্রাণের প্রতীক বলে মনে করে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে- খুব পরিচিত ফুল। অনেকের তাই জানা, কাঠগোলাপ গাছের দেহ নরম। কোমল। ভঙ্গুর। শাখা প্রশাখার অগ্রভাগে থোকা থোকা ফুল হয়। সচরাচর যে কাঠগোলাপ দেখা যায়, পাপড়ির রং হয় সাদা। পাঁচ পাপড়ির ফুলের কেন্দ্রে গাঢ় হলুদ রঙের ছোঁয়া থাকে। দুই রঙের স্পর্শে বিশেষ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে ফুলটি। একই ফুল লাল রঙেরও হয়ে থাকে। পাপড়ির উর্ধাংশ প্রশস্ত। এই ফুল সারা বছর ফোটে না। এমনকি পাতাও ঝরে যায়। শীতের শেষে ঝরতে শুরু করে। দেখতে নিষ্পত্র হয়ে যায় গাছ। তখন ন্যাড়া মাথার মতো দেখতে হয়। অন্য গাছের পাশে এটি যেন মরা কোন গাছ। তবে গ্রীষ্মে নতুন প্রাণ পায়। বেশ লম্বা আর বড় বড় পাতা হয়। শাখার শেষ অংশে ঘন বিন্যস্ত গুচ্ছ গুচ্ছ পাতা। শুধু পাতার সৌন্দর্যও চোখে পড়ার মতো। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা জানান, কাঠগোলাপের আদি নিবাস গুয়াতেমালা ও মেক্সিকো। এখন বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়। কাঠগোলাপের কিছু প্রজাতির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। যেমন- প্লুমেরিয়া রুবরা ফরমা এ্যাকুইটিফলিয়া, প্লুমেরিয়া রুবরা, প্লুমেরিয়া এ্যালবা, প্লুম্যারিয়া ও টিউবারকুলেটা। গাছের উচ্চতা ১২ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস হয় প্রায় ২ ইঞ্চি। এই গ্রীষ্মে সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকায়ও ফুটেছে কাঠগোলাপ। শহরের মূল রাস্তা ধরে হাঁটার সময় নিত্য চোখে পড়ে। পুরনো বাড়ি ও অফিসের সীমানা প্রাচীর টপকে বাইরে চলে এসেছে কাঠগোলাপ। রমনা পার্ক, চন্দ্রীমা উদ্যান, জাতীয় জাদুঘর গেট, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস, মিন্টু রোডসহ অনেক জায়গায় এখন ফুলটি দেখা যাচ্ছে। সুন্দর সুগন্ধী এই ফুল নিয়ে যথারীতি কবিতা হয়েছে। একটি কবিতা এরকম- ঠিক সন্ধে নামে যখন/নীল পথের পাড়ে, নীল কমলের সুঘ্রাণ/ছড়ালে বালিকা; চলে যেতে গিয়েও/থমকে দাঁড়ায় বিকেলের রঙ,/আর আমার হাতের কাঠগোলাপেরা/খোঁজে ভালবাসা...। গানেও ফুটেছে কাঠগোলাপ। খুব জনপ্রিয় গানের কথা দিয়ে শেষ করা যেতে পারে। গানটির কথা এরকম- কাঠগোলাপের সাদার মায়া মিশিয়ে দিয়ে ভাবি...। হ্যাঁ, কাঠগোলাপের সাদায় মায়া মিশে আছে। ফুলপ্রেমীরা সেই মায়ার সন্ধান করেন। আর তখন খুব চেনা ফুলটিও হয়ে ওঠে অনন্য অসাধারণ।
×