ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টাকার অভাবে আলোর মুখ দেখছে না ঢাকা ওয়াসার মাস্টারপ্ল্যান

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৫ মে ২০১৫

টাকার অভাবে আলোর মুখ দেখছে না ঢাকা ওয়াসার মাস্টারপ্ল্যান

ফিরোজ মান্না ॥ রাজধানীকে এক শ’ ভাগ স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ কাভারেজের আওতায় আনার লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসা একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে বসে থাকলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। টাকার অভাবে এ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিপাতে নগরীর বিভিন্ন রাস্তাঘাট ডুবে যাচ্ছে। এতে জনগণকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বর্তমানে নগরীতে মাত্র শতকরা ৩০ ভাগ এলাকা ড্রেনেজ কাভারেজের আওতায় রয়েছে। এ মাস্টার প্ল্যানের আওতায় ঢাকা ওয়াসা সার্ভিস এরিয়া প্রায় ৪শ’ বর্গ কিলোমিটার। রাজউকের ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের (ডিএমডিপি) মোট ১৫২৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ নেটওয়ার্কের মধ্যে নিতে ঢাকা ওয়াসা এই প্ল্যান তৈরি করেছে। ঢাকা ওয়সার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান সম্প্রতি বলেন, বর্তমানে প্রাকৃতিকভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নগরীর মধ্য দিয়ে আগে ৬৫টি খাল জালের মতো বিস্তৃত ছিল। বৃষ্টি হলেই জমাট পানি খাল দিয়ে নদীতে চলে যেত। এই খালগুলোর এখন আর কোন অস্তিত্ব নেই। হাতেগোনা কয়েকটি খাল বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এত বড় শহরের পানি সামান্য কয়েকটি খাল দিয়ে বের হতে পারে না। ফলে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা ড্রেন দিয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন করতে হচ্ছে। কৃত্রিম ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ক্ষমতা মাত্র ৩০ থেকে ৪০ ভাগ। বাকি পানি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। নগরীর জলাবদ্ধতা স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা দূর করতে শতভাগ নিশ্চিত করার জন্য ওয়াসা মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে। পর্যায়ক্রমে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। ডিএমডিপির আওতায় প্রায় ৩২ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী বসবাস করে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ সেবায় কিভাবে আনা যায়, তা নিয়ে ওয়াসা প্রাথমিক সমীক্ষা শেষ করেছে। ঢাকা শহরকে বিভিন্ন ‘ক্যাচমেন্টে’ ভাগ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ সেবা নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে রাজউকের ডিএমডিপি এরিয়া অর্থাৎ ১৫২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ সেবার আওতায় আনার পরিকল্পনা সামনে রেখে এ মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে পাগলা স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে আধুনিকায়ন করে শোধন ক্ষমতা ১ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ২ লাখ ঘনমিটারে উন্নীত করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২৫ সালের মধ্যে দাশেরকান্ধি, উত্তরা, মিরপুর, রায়েরবাজার এবং নারায়ণগঞ্জ পূর্ব ও নারায়ণগঞ্জ পশ্চিমে আলাদা আলাদা স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করা হবে। আর তৃতীয় পর্যায়ে ২০৩৫ সালের মধ্যে সাভার, টঙ্গী, কেরানীগঞ্জ, পূর্বাচল ও গাজীপুরে আলাদা আলাদা স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। এ প্ল্যান বাস্তবায়নে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হবে। মাস্টার প্ল্যানটি তৈরি করা হয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই এ্যান্ড স্যানিটেশন প্রজেক্টের আওতায়। এই প্রকল্পে এ পর্যন্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের দরপত্র, ড্রয়িং, ডিজাইন প্রণয়নসহ পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নে মোট ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানে নগরীতে ৮৮০ কিলোমিটার স্যুয়ারেজ পাইপলাইন, ২৪ কিলোমিটার ট্রাংক স্যুয়ারেজ, ২৭টি স্যুয়ারেজ লিফটিং স্টেশন, নারিন্দায় একটি মেইন স্যুয়েজ পাম্পিং স্টেশন এবং পাগলায় একটি স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট রয়েছে, যা দৈনিক ১ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার স্যুয়ারেজের বর্জ্য পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন। ঢাকায় প্রতিদিন তরল বর্জ্য তৈরি হচ্ছে প্রায় ১৬০ কোটি লিটার।
×