ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মৈত্রী এক্সপ্রেসের ৭ বছর, ট্রেনটি এতদিনে লাভজনক ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে

ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকে করে তুলেছে স্বচ্ছন্দ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৭ এপ্রিল ২০১৫

ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকে করে তুলেছে স্বচ্ছন্দ

মশিউর রহমান খান ॥ সফলতার সঙ্গে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ ভারতের সুসম্পর্ক স্থাপনকারী ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস। গত ৭ বছরে প্রায় আড়াই লক্ষ যাত্রী বহন করেছে এ মৈত্রী এক্সপ্রেস। সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশেরই যাত্রী ভ্রমণ, চিকিৎসা গ্রহণ, লেখাপড়া, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ নানা কারণে নিয়মিত যাতায়াত করছে। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রী সংখ্যা। নানা বাঁধা ও সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের যাত্রীদের রেলপথে চলাচলের জন্য চালু হওয়া মৈত্রী এক্সপ্রেস বর্তমানে লাভজনক ট্রেনে পরিণত হয়েছে। দুদেশের যাত্রীদের কাছেই এ ট্রেনটি বর্তমানে অতি জনপ্রিয় হয়ে পড়েছে। অতি চাহিদার ফলে মাঝে মধ্যে এ ট্রেনে চড়তে যাত্রীদের টিকিট সঙ্কটেও পড়তে হয়। বাংলা ১৪১৫ সালের ১ বৈশাখ ও ইংরেজী ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল ‘দুই বাংলার বুকে মৈত্রী থাকুক সুখে’Ñ এ সেøাগান ধারণ করে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে এ ট্রেন সার্ভিস চালু করে। বর্তমানে এ সার্ভিসটি ৭ বছর পেরিয়ে আট বছরে পা দিয়েছে। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল ঢাকা-কলকাতার মধ্যে যাত্রা শুরু করেছিল একমাত্র যাত্রীবাহী ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস। ট্রেনটি চালুর পর থেকে সপ্তাহে দুদিন অর্থাৎ বুধবার ও শুক্রবার ঢাকা থেকে কলকাতায় যেত। আর শনি ও মঙ্গলবার কলকাতা থেকে ঢাকায় আসতো। প্রথম দিকে যাত্রী শূন্যতায় হোঁচট খেলেও ধীরে ধীরে সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠে মৈত্রী ট্রেন এখন চাহিদার তুঙ্গে। এর ফলে গত ৪ জানুয়ারি থেকে আরও এক জোড়া নতুন ট্রিপ যোগ হয়েছে মৈত্রী ট্রেনের। বর্তমানে সপ্তাহে তিন দিন অর্থাৎ শুক্র, সোম, বুধবার ঢাকা থেকে কলকাতায় যায় মৈত্রী ট্রেন। আর শনি, রবি ও মঙ্গলবার কলকাতা থেকে ঢাকায় আসে। এর প্রতিটি যাত্রায় গড়ে ৩৫০ জন যাত্রী আসা-যাওয়া করে থাকেন। গত সাত বছরে পূর্তির হিসেবে এ ট্রেন দিয়ে মোট দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৩৩ জন যাত্রী ভ্রমণ করেছেন। সাতটি কোচ সম্বলিত মৈত্রী এক্সপ্রেসের ভারতীয় ট্রেনে মোট আসন ৪৫৯টি। এর মধ্যে এসি সিট ২৭, এসি চেয়ার ১৪৬ এবং শোভন ২৮৬টি। আর বাংলাদেশী ট্রেনে মোট আসন ৪১৮টি। এর মধ্যে এসি সিট ৩৬, এসি চেয়ার ৮০ এবং শোভন রয়েছে ৩০২টি। বর্তমানে এর টিকেটের মূল্য প্রতিটি এসি সিট ২০ ডলার। সঙ্গে শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট যোগ করতে হবে। এসি চেয়ার প্রতিটি ১২ ডলার। তবে শোভন সিটের ভাড়া ৮ ডলার । তবে শোভন সিটের ক্ষেত্রে কোন ভ্যাট প্রদান করতে হয় না। এছাড়া পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে টিকেটের মূল-মূল্যর ৫০ ভাগ মূল্য প্রযোজ্য হবে। মৈত্রী এ ট্রেনে ভ্রমণ করতে সকাল ৯টা থেকে ঢাকার কমলাপুর ও কলকাতা স্টেশন থেকে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টিকেট টিকিট বিক্রয় করা হয়। বিশেষ কোন সমস্যা না থাকলে ঢাকা থেকে সকাল আটটা ১০ মিনিটে (বিএসটি) ঢাকা ছাড়ে। এটি কলকাতায় পৌঁছায় সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে (আইএসটি)। অন্যদিকে কলকাতা থেকে সকাল সাতটা ১০ মিনিটে (আইএসটি) এবং ঢাকা পৌঁছায় সন্ধ্যা ৬টা ০৫ মিনিটে (বিএসটি)। মৈত্রী ট্রেনটি ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছেড়ে ৫শ’ ৩৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলকাতার চিতপুর স্টেশনে গিয়ে থামে। যাওয়ার পথে ঢাকা থেকে ছেড়ে ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে ১৫ মিনিট ওয়াটারিংয়ের জন্য যাত্রা বিরতি করে। এরপর কাস্টমস-ইমিগ্রেশনের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত স্টেশন দর্শনায় এক ঘণ্টা এবং ভারতের সীমান্ত স্টেশন গেঁদেতে দেড় ঘণ্টা যাত্রা বিরতি করে। সূত্র জানায়, ভারত বাংলাদেশের যৌথ পরামর্শক কমিশন জেসিসির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে মৈত্রী ট্রেনে ভারতের অতিরিক্ত কোচ যুক্ত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। যৌথ বিবৃতিতে সেইসঙ্গে ২ মাসের মধ্যে সপ্তাহে ২টির পরিবর্তে ৩টি ট্রেন যাওয়া-আসা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া মৈত্রী ট্রেনের যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে শুল্ক পরীক্ষা ও অভিবাসনের কাজ যাতে আরও দ্রুত ও সহজভাবে করা যায়, সেজন্য দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দফতরকে সবকিছু খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। মৈত্রী ট্রেন নিয়ে দুই দেশের যাত্রীসংখ্যা বাড়তে থাকায় ট্রিপ বাড়ানোর ব্যাপারে একমত হওয়ার পর ভারত মৈত্রী এক্সপ্রেসে কোচের সংখ্যা বাড়ায়। বর্তমানে দেশটির মৈত্রী ট্রেনে আসন সংখ্যা করা হয়েছে ৪শ’ ৫৯টি, আগে যা ছিল ৩শ’ ৮৬টি। অর্থাৎ ৭৩টি আসন বাড়ানো হয়েছে। এজন্য অতিরিক্ত একটি কোচ সংযোজন করেছে ভারত। তবে সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ মৈত্রী এক্সপ্রেসে বাড়তি কোচ সংযোজন করতে না পারায় ট্রেনের ট্রিপ বাড়ায় বাংলাদেশ। এ ট্রেনে ভ্রমণকারী যাত্রীদের মতে, কাস্টম-ইমিগ্রেশনের কাজ ট্রেনের মধ্যেই সম্পন্ন করে ট্রেনটির যাত্রা বিরতিতে আরও সময় কমিয়ে আনতে পারলে যাত্রীদের ভোগান্তি বর্তমানের চেয়ে আরও কমে যাবে। এছাড়াও ঢাকা-কলতাকার মধ্যে আরও স্টপেজ বাড়িয়ে বাংলাদেশের দর্শনা ও ভারতের গেঁদে রেলস্টেশনে ছোট-খাটো সমস্যাগুলো সমাধানে দু’দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে মৈত্রী এক্সপ্রেস। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও সুন্দর করতে ও তা সমুন্নত রাখতে ২০০৮ সালে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু হয়। গত ৭ বছরে প্রায় আড়াই লক্ষ যাত্রী বহনই প্রমাণ করে যে দু’দেশের মানুষজনই এ ট্রেনে যাতায়াতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। প্রথমে একটি ট্রেন সপ্তাহে ২ দিন যাওয়া আসার মাধ্যমে মৈত্রীর যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে তা ৩টি ট্রেন ও সপ্তাহে ৩ দিন যাতায়াত করছে। আমরা যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক চলাচলের জন্য মৈত্রী ট্রেনে আধুনিকতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি দুই দেশের সীমান্তে ইমিগ্রেশনের কাজের জন্য অপেক্ষার সময় বর্তমানের চেয়ে আরও কমাতে দুই দেশের রেল কতৃপক্ষ ঐক্যবদ্ধভাবে মিলে কাজ করছে। আশা করি দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।
×