ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আইনী জটিলতায় আটকে আছে ৩শ’ সিএনজি স্টেশনের লাইসেন্স

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৬ জানুয়ারি ২০১৫

আইনী জটিলতায় আটকে আছে ৩শ’ সিএনজি স্টেশনের লাইসেন্স

রশিদ মামুন ॥ আইনী জটিলতায় আটকে আছে দেশের প্রায় ৩০০ সিএনজি স্টেশনের লাইসেন্স। জ্বালানি মন্ত্রণালয় বার বার বৈঠক করে লাইসেন্সবিহীন সিএনজি স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিচ্ছে। অথচ সকল সিএনজি স্টেশনের লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য আইনী জটিলতা নিরসন না করে গত দুই বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বলছে জ্বালানি বিভাগের একটি মাত্র গেজেট প্রকাশ না করায় গত দুই বছর ধরে বিষয়টি পড়ে রয়েছে। দেশে এখন ৫৫৭টি সিএনজি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে ২৯৩টি স্টেশন পরিচালনার লাইসেন্স নেই সংশ্লিষ্টদের। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, যখন দেশে সিএনজি স্টেশনের অনুমতি দেয়া হয় তখন লাইসেন্স গ্রহণের বাধ্যবাধকতা ছিল না। পরবর্তীতে দেশে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রণক সংস্থা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গঠন করা হলে বিদ্যুত এবং জ্বালানি খাতের সকলের জন্য লাইসেন্স গ্রহণে বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। জানা যায়, ২০০৩ সালে বিইআরসি আইন করা হলেও ২০০৮ সালে কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকে লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু গত ছয় বছর তাগাদা দিলেও লাইসেন্স নিতে সম্মতি হননি পুরাতন স্টেশন মালিকরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় নতুন যেসব সিএনজি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে সেগুলোই লাইসেন্স নিচ্ছে। বার বার বলার পরও সিএনজি অধিকাংশ পুরাতন স্টেশন মালিকরা লাইসেন্স নিচ্ছে না। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সূত্র জানায়, জ্বালানি বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভা, সংসদীয় কমিটির বৈঠকসহ সব আলোচনাতেই প্রায় প্রতি মাসে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বার বার জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে বলাও হয়েছে আমাদের পাঠানো সংশোধনীটির গেজেট প্রকাশ করে দিলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। বিইআরসি জানায়, প্রতিটি সিএনজি স্টেশনের লাইসেন্স ফি এক লাখ টাকা নির্ধারণ করা ছিল। কিন্তু সিএনজি স্টেশনের মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে তা ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। সংশোধনীটি গত দুই বছর আগে গেজেট করার জন্য জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে কিন্তু জ্বালানি মন্ত্রণালয় এখনও গেজেট প্রকাশ করেনি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, বিইআরসি আইনে লাইসেন্স ফি পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত ধরায় বলা হয়েছে লাইসেন্স ফি পুনর্নির্ধারণ করতে চাইলে বিইআরসি আইন পরিবর্তন করতে হবে। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। কোন আইনের এই সংশোধনীর জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন, সংসদীয় কমিটির অনুমোদন এমনকি সংসদে পাস করার বিধান রয়েছে। আইনে এই ক্ষমতা বিইআরসিকে দিয়ে যদি বলা হতো অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিইআরসি সময়ে সময়ে লাইসেন্স এবং নবায়ন ফি নিজে নির্ধারণ করতে পারবে তাহলেই আর কোন সমস্যা থাকত না। কিন্তু লাইসেন্স ফি পরিবর্তনের জন্য আইন সংশোধনের বাধ্যবাধকতা রাখায় রেগুলেটরি কমিশনের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সূত্র জানায়, শুধু সিএনজি স্টেশনই নয় পেট্রোলিয়াম ব্যবসা করছে এমন পেট্রোলপাম্পগুলোর জন্যও লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কিছু আপত্তি ছিল এসব বিষয় নিরসন করা হয়েছে। কমিশন বলছে, শুধু সিএনজি স্টেশনই নয় পেট্রোলিয়াম ব্যবসায়ীদের অন্যান্য অনেকের লাইসেন্স নেয়ার বিষয়টি ঝুলে রয়েছে একটি মাত্র গেজেট প্রকাশের কারণে। গেজেট প্রকাশ হলে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। এখন গেজেট না থাকায় কমিশন কাউকে লাইসেন্স গ্রহণে চাপ দিতে পারছে না। কমিশনের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কমিশন কার্যকর হওয়ার পরও দীর্ঘদিন সকলকে লাইসেন্সের আওতায় না পারাটা একটি ব্যর্থতা। আমরা বার বার বলার পরও জ্বালানি বিভাগ কার্যকর কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। দুই বছর ধরে বিষয়টি ফেলে রেখেছে।
×