ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর দাফন আজ

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর দাফন আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ কবি ও বুদ্ধিজীবী জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। বড় মানুষ। আলোকোজ্জ্বল নক্ষত্র। দীর্ঘ অবদান রাখার পর মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। বিকেলে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে শোক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। তাঁর মরদেহ শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান, সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর মরদেহ আজ বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। প্রয়াতের ছেলে শাকিল জানান, এর আগে সকাল ৯টায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর পিতার বহুদিনের কর্মস্থল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রিয় শিক্ষকের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের মৃত্যুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রিয় ক্যাম্পাসে প্রয়াত উপাচার্যের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে ঢাকা শহীদ মিনারের দিকে যাত্রা করা হবে। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে। এখানে বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জানাজা। পরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে বনানীর বাসায়। সেখানে পরিবারের সদস্যরা শেষবারের মতো দেখবেন তাঁদের প্রিয় মানুষটিকে। গুলশান আজাদ মসজিদে বাদ জোহর তৃতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদকে। জানা যায়, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর বড় ছেলে দাউদ আফজাল যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের শিক্ষক। মেজ ছেলে শাকিল আক্তার পেশায় ডাক্তার। ছোট ছেলে ফারহাদ আনোয়ার মালয়েশিয়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান পড়ান। তার একমাত্র মেয়ে একটি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেন। মালয়েশিয়া প্রবাসী ফরহাদ আনোয়ারের বুধবার রাতে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। বড় ছেলে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী দাউদ আনোয়ারের জন্য অপেক্ষা করা হলেও আপাতত তিনি আসতে পারছেন না। রাষ্ট্রপতির শোক ॥ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তচিন্তা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক-বাহক। তাঁর মৃত্যুতে জাতি একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদকে হারাল। প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে এক শোক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী একটি জ্ঞানভিত্তিক ও প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের শিক্ষা জগতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর মৃত্যুতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার বনানীতে নিজের বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত জিল্লুর রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। এই শিক্ষাবিদ ১৯৯০-৯১ সালে অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। শিক্ষা গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত রাখলেও জাতীয় রাজনৈতিক সঙ্কটে সবসময়ই দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা গেছে জিল্লুর রহমানকে। বাংলা একাডেমি, এশিয়াটিক সোসাইটিতে সম্পৃক্ত থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি; নাগরিক নাট্যচক্রের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ইংরেজী-বাংলা মিলিয়ে অধ্যাপক জিল্লুর রহমানের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪০। এর মধ্যে ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত ‘শব্দের সীমানা’ প্রবন্ধ গ্রন্থের জন্য তিনি ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন। তাঁর কবিতা গ্রন্থ ‘হৃদয়ে জনপদে’ বাংলা একাডেমি পুরস্কার পায়। মুক্তচিন্তার বিকাশে অধ্যাপনা, গবেষণা ও সৃজনশীল লেখনীর মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয় জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীকে।
×