ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে  ৯ ঘণ্টা পর ছাড়া পান  অবরুদ্ধ দুই উপদেষ্টা

শোকে-ক্ষোভে স্তব্ধ মাইলস্টোন

আজাদ সুলায়মান

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ২২ জুলাই ২০২৫

শোকে-ক্ষোভে স্তব্ধ মাইলস্টোন

শোক, ক্ষোভ, অবরোধ ও উত্তেজনা ছিল দিনভর। উত্তরার দিয়াবড়ি এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এদিন ছিল নিঃশব্দ এক মৃত্যুপুরী। শোকে স্তব্ধ, মুূহ্যমান। অনেক অভিভাবককে দেখা গেছে, নির্বাক নিস্তব্ধ।
প্রতিদিন এই সময়ে থাকত কোলাহল আর পড়ার শব্দে মুখর। আজ ক্লাসরুমগুলো খালি-সুনসান। ভবনের করিডরে নেই কোলাহল-শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটি। বাতাসে ভাসছে পোড়া গন্ধ, পুড়েছে শরীর কিংবা কারও স্বপ্ন! এদিনও চলে স্বজনের মরদেহের সন্ধান। যারা এখানো নিখোঁজ তাদের ছুটতে দেখা গেছে এদিক সেদিক। মিডিয়ার কাউকেই পেলেই  ছবি  দেখিয়ে জানতে চায়-তার কোনো খোঁজ আছে? সহপাঠী- সহকর্মীদের জীবনে এমন চরম বিয়োগান্তক দশা নেমে আসবে, এমনটি ছিল তাদের কল্পনাতীত। 
যারা পুড়ে মরেছে, আর যারা প্রাণে বেঁচেছে- তাদের স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীদের একটাই প্রশ্ন- কেন এভাবে তাদের মরতে হলো। কেন এমন ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ চালানো হলো? সোমবার বিকেল থেকেই মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একই প্রশ্ন ছিল হাজার হাজার শিক্ষার্থী  অভিভাবক ও  সাধারণ মানুষের কৌতূহলী। এদিন সকাল থেকেই ৬ দফা দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত সুসংহত ও সুসংগঠিত হয়ে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণের জড়ো হয়ে তাদের  প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।

তারা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাচ্ছিল না ওই স্কুলে সোমবারের বিমান দুর্ঘটনায় মাত্র ২৭ জন কিংবা ৩১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের বদ্ধমূল ধারণা কিংবা দৃঢ় বিশ্বাস, এখানে মারা গেছে কমপক্ষে একশতজন। কিন্তু উদ্ধারকারীরা সেটার হিসাব ও পরিচয় প্রকাশ করছে না। রাতের অন্ধকারে ট্রাক ও এম্বুলেন্সে করে মরদেহ সরানো হয়েছে। 
স্কুল শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনেক অভিভাবকও চিৎকার করে মিডিয়ার সামনে বলছিল- এমন ঘনবসতি পূর্ণ আবাসিক এলাকায় কেন বিমানবাহিনীর মহড়া? এজন্য সব দায় নিতে হবে তাদের। এভাবে আর যুদ্ধবিমান  ওড়াতে দেয়া হবে না। যারা মারা গেছেন, তাদের সবার পরিচয় প্রকাশ ও মরদেহ স্বজনদের কাছে সোপর্দ করা হোক। এ ধরনের ৬টি দাবি নিযে যখন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বসেছিল, স্লোগান দিচ্ছিল বিভিন্ন দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ঠিক তেমন মুহূর্তেই সেখানে হাজির হন, দুই উপদেষ্টা। তখন যেন তারা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। সবাই ঘিরে ধরেন উপদেষ্টাদ্বয়কে। তারপর চলে দাবি মানার চাপ ও দেনদরবার। এমনিতেই তারা ছিলেন শোকার্ত ও বিক্ষুব্ধ, তার মাঝে দুই উপদেষ্টার উপস্থিতি তাদের আরও উত্তেজিত ও উদ্বেলিত করে তোলে। টানা ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বিকেলে সেখান থেকে ফিরে আসেন দুই উপদেষ্টা ও তার সহযোগীরা।  এদিন সর্বশেষ আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর জানায়, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ৩১ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহত হয়েছেন।
আগের দিন এখানে  প্রাণহানির ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। এই প্রেক্ষাপটে, সোমবারের ঘটনার  প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কলেজের গোল চত্বরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দেয় শিক্ষার্থীরা। ফলে সকাল থেকেই মাইলস্টোন কলেজে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করে। কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী হতাহত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায়, মঙ্গলবার যখন সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও সি আর আবরার এবং  প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন, তখন তাদের অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীরা।

এ সময় তারা ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। এ নিয়ে বাদানুবাদ চলে দফায় দফায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এক পর্যায়ে পুলিশি পাহারায়-তাদের বের করে আনার চেষ্টা করা হলেও, কলেজ গেট পার হওয়ার আগেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দিয়াবাড়ী গোল চত্বরে আবারও রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে এবং উপদেষ্টাদের গতিরোধ করে। শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিয়ে দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ  প্রদর্শন করে।
শিক্ষার্থীদের এই আকস্মিক অবরোধের কারণে উপদেষ্টাদের গাড়ি সামনে এগোতে পারেনি। একপর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে ৩টা ৪৮ মিনিটে গাড়ি ঘুরিযে ফের মাইলস্টোন কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে ফেরত আনা হয়। এভাবে পাঁচঘণ্টা উপদেষ্টারা কলেজের ভেতরেই অবস্থান করেন এবং শিক্ষার্থীরা গোল চত্বরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ চালিয়ে যায়। বিকেল সোয়া ৫টায় পর্যন্ত দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব কলেজের ভেতরে অবস্থান করেন। তারা কলেজের ৫ নম্বর একাডেমিক ভবনে অবস্থান করেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা মাইলস্টোন কলেজের সামনে অবস্থান নেন। তাদের একটি দল একেবারে কলেজের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। আরেকটি গ্রুপ গোলচত্বরে অবস্থান নেয়। তাদের অভিযোগ, মৃত্যুর সংখ্যা লুকানো হচ্ছে। অবস্থায় অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে গোলচত্বর, মেট্রোরেল ডিপোর সামনে এবং কলেজের ভেতরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে মাইলস্টোন কলেজে যান তারা।

এরপর কলেজের সামনে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব। কয়েক দফা তারা শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে আশ্বাস দিলেও ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তা মানেননি। ফলে মাইলস্টোন থেকে বের হতেও পারেননি তারা। দীর্ঘ পাঁচঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর তারা বিকেলে বাইরে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা পরে তাদের আবার ভেতরে নিয়ে অবরোধ করে রাখেন। এ বিষয়ে রাতে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কলেজ থেকে ফিরে যাওয়ার মুখে দিয়াবাড়িতে বাধার মুখে বিকেল ৫টা ৫২ মিনিটে কলেজের ৫ নম্বর ভবনে ফিরে আসে দুই উপদেষ্টা ও প্রেস উইংয়ের গাড়িবহর। দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব তখনো পর্যন্ত একাডেমিক ভবন-৭-এর দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করছিলেন এবং তাদের গাড়িবহর কলেজের গার্লস ক্যাম্পাসের ভেতরেই ছিল। সন্ধ্যায় বাইরে বিক্ষোভ চললেও কলেজের ভেতরের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। কলেজের ভেতরের ‘ভবন-৫ এবং ‘একাডেমিক ভবন-৭ দুটির সামনে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। পাশাপাশি র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার  প্রতিনিধিরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সকাল সোয়া ৯টার দিকে দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্পের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সভা-সমাবেশ, দলবদ্ধ কর্মসূচি কিংবা অবস্থান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা দিয়ে জানানো হয়, দিয়াবাড়ি গোলচত্বর ও আশপাশের এলাকায় কোনো ধরনের জমায়েত বা  প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা যাবে না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিক্ষোভ শুরে করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সি আর আবরার, প্রেস সচিব শফিকুল আলম কলেজ পরিদর্শনে আসেন।

সেখান থেকে বের হয়ে আসার সময় শিক্ষার্থীরা তাদের ঘিরে ধরেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বের হয়েছিলেন উপদেষ্টারা। কিন্তু দিয়াবাড়ি মোড়ে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে আবার কলেজে ফিরে আসেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলসহ অন্যরা। তাদের সামনে শিক্ষার্থীরা বার বার ছয় দফা দাবি জানান। সেগুলো ছিল- নিহত ব্যক্তিদের সঠিক নাম-পরিচয়  প্রকাশ। আহত ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ। শিক্ষার্থীদের  প্রতিটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান। 
বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো  প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল করে আধুনিক ও নিরাপদ বিমান চালু এবং বিমানবাহিনীর  প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও কেন্দ্র সংস্কার করে আরও মানবিক ও নিরাপদব্যবস্থা চালু, শিক্ষকদের গায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাত তোলার ঘটনার জন্য জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া। ছাত্ররা জানান, বেলা পৌনে একটার দিকে উপদেষ্টারা কনফারেন্স কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা  প্রতিটি দাবি পূরণ করব। বিশ্বাস রাখেন। অভিভাবক হিসেবে ভালোবাসা জানাতে এসেছেন বলে তিনি জানান। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবির প্রতিটিই যৌক্তিক। তবে উপদেষ্টার বক্তব্যের পরও বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় টানা ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশ  প্রহরায় ক্যাম্পাস ছাড়েন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং  প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। রাত সাড়ে ৭টায় পুলিশ  প্রহরায় তাদের গাড়িতে করে কলেজ থেকে বের করা হয়। পরে মেট্রো রেলের ডিপোর ভেতরের রাস্তা দিয়ে উপদেষ্টা ও প্রেস সচিবদের বহনকারী গাড়িগুলো বেরিযে যায়।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মহিদুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে জানান, উপদেষ্টারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসেছিলেন। পরে শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া জানান। সব দাবি মেনে নেয়ার পরও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এজন্য উপদেষ্টারা বের হতে পারছিলেন না। পরে সন্ধ্যার দিকে শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া  হয়। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর দুই উপদেষ্টা,  প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ও প্রেস উইংয়ের সদস্যরা বেরিয়ে যেতে সক্ষম হন। 
এদিন দুপুরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষাথীদের সবারই অভিযোগ ছিল-হতাহতের প্রকৃত চিত্র বা তথ্য মিডিয়ায় তুলে ধরা হচ্ছে না। সবাই প্রশাসনের চাপে চুপসে গেছে। হাসান নামের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মন্তব্য ছিল- যেই রুমটিতে যুদ্ধবিমানটি আছড়ে পড়েছে, যেখানে আগুনে লেগেছে, সেখানে কমপক্ষে  ৫০ জন  শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই যেভাবে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে- তাতে তাদের একজনেরও বাঁচার  সম্ভাবনা ছিল না। অথচ সরকার বলছে, মৃত্যুর সংখ্যা ৩১ জন। তাহলে বাকিরা গেল কোথায়?  এতে কি প্রমাণিত হয়নি, লাশ গুম করা কিংবা সরিয়ে ফেলার?  এ সময় মালিক নামের এক শিক্ষার্থী বিক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলতে থাকেন, পৃথিবীর কোথাও এমন ঘন বসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় এভাবে যুদ্ধ জাহাজের মহড়া বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার নজির নেই।

বার বার এভাবে বিমান ধ্বংস হলেও কারোর কোনো মাথাব্যথা নেই। এর দায় বিমানবাহিনীকেই নিতে হবে। তাদেরই জবাবদিহি করতে হবে, কেন এই স্কুলের ওপর দিয়ে এভাবে যুদ্ধ জাহাজ চালানো হলো। এটা এখানেই  থামতে হবে। আর এলাউ করা যাবে না। এদিকে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বিকেল ৪টায় রাজশাহী জেলা স্টেডিয়ামে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাকে গার্ড অব অনার  প্রদান করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজশাহী নগরীর সপুরা শাহী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত পাইলটের স্বজন ও  প্রতিবেশীরা।
এদিকে মাইলস্টোন কলেজে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর কয়েকজনকে সেনা সদস্য কর্তৃক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে আইএসপিআর। এতে বলা হয়, উৎসুক জনতা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় উদ্ধার কাজে মারাত্মক  প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। একদল উৎসুক জনতার সঙ্গে দায়িত্ব প্রাপ্ত সেনাসদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও বাদানুবাদের সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানিয়েছে আইএসপিআর।

আইএসপিআর জানায়, সোমবার দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি  প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। মর্মান্তি এই দুর্ঘটনায় শিশুসহ বেশ কয়েকজন নিরীহ নাগরিক হতাহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিকটবর্তী ক্যাম্প থেকে সদস্যরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন। ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বিতভাবে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করতে তৎপরতা চালানো হয়। উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে দুর্ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ব্যাপক ভিড় দেখা দেয়, যা ইভাকুয়েশন ও রেসকিউ কার্যক্রমকে বারবার ব্যাহত করে। সেনাবাহিনীর সদস্য এবং মাইলস্টোন স্কুলের স্বেচ্ছাসেবকরা বারবার অনুরোধ করলেও উলেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় সময়মতো আহতদের সরিয়ে নেওয়া অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। 
ফলে প্রাণহানির ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। সেনাসদস্যরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই উদ্ধার কার্যক্রমে নিয়োজিত ১৪ জন সেনাসদস্য শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালীন, বিকেলের দিকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কিছু উৎসুক জনতা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় উদ্ধার কাজে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।

ফলশ্রুতিতে, একদল উৎসুক জনতার সঙ্গে দায়িত্ব প্রাপ্ত সেনাসদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়, যা একপর্যায়ে একটি অনভিপ্রেত ঘটনার অবতারণা করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। তদন্তে দোষী  প্রমাণিত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে  প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে থেকে পেশাদারিত্ব ও সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধের সঙ্গে কর্তব্য পালনে  প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
 

প্যানেল মজি

×