
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য বিশ্বের দরজা ক্রমেই বন্ধ হয়ে আসছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে উপসাগরীয় অঞ্চল, এমনকি পূর্ব ইউরোপ ও প্রতিবেশী ভারতের ভিসা নীতিতেও এসেছে নজিরবিহীন কড়াকড়ি। সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত দুই ডজন দেশ বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ বা কঠোর করে তুলেছে।
ভুক্তভোগী, ট্যুর অপারেটর এবং সরকারি বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ভিয়েতনাম, লাওস, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান ও মিশর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রেও এখন শুধু সীমিত চিকিৎসা ও শিক্ষা ক্যাটাগরিতে ভিসা মিলছে।
উপসাগরীয় দেশগুলোতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, ভুয়া সনদ ও নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। এসব কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও মালয়েশিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারগুলো অদক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ভিসা লঙ্ঘনকারীদের অন্তত ২৫ শতাংশই বাংলাদেশি।
ইতিমধ্যে জাপান, রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং হংকং-এর মতো দেশগুলোও অনিয়মের কারণে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে। হংকং ও চীনে বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও অনেক বাংলাদেশিকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। যদিও ঢাকায় চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, তাদের নীতিতে কোনো আনুষ্ঠানিক পরিবর্তন আসেনি।
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বেড়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্র সংকট এবং অব্যাহত আন্দোলন—এসব ঘটনায় বিশ্বমঞ্চে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। ফলে অনেক দেশ এখন বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা প্রদানের আগে নিরাপত্তা ও আস্থাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
এই সংকটের প্রভাব পড়েছে দেশের রেমিট্যান্স এবং পর্যটন খাতে। বাংলাদেশ আউটবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস ফোরামের তথ্যমতে, বিদেশগামী পর্যটন ৫০-৬০ শতাংশ কমে গেছে। কর্পোরেট ভ্রমণ হ্রাস পেয়েছে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে জনপ্রিয় গন্তব্য যেমন—ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া—এই দেশগুলোর বিকল্প হিসেবে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানের ওপর চাপ বাড়ছে। এতে করে বাড়ছে বিমান ভাড়াসহ অতিরিক্ত ভ্রমণ ব্যয়।
শ্রমবাজারেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। একদিকে অদক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসা বন্ধ, অন্যদিকে বিদেশ থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের ফেরত পাঠানোর হার বাড়ছে। এর ফলে রেমিট্যান্স নির্ভর অর্থনীতি বড় চাপের মুখে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, ভুয়া সনদ ও প্রতারণা দমন করা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটানো জরুরি। পাশাপাশি বিদেশগামী কর্মী ও পর্যটকদের আস্থা পুনরুদ্ধারে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
নইলে বিশ্বে বাংলাদেশের পাসপোর্ট আরও অবমূল্যায়িত হবে এবং দেশের অর্থনীতি পড়বে দীর্ঘমেয়াদী বিপদের মুখে।
ছামিয়া