ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

ফিরে দেখা ১৪ জুলাই: বেরোবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের প্রথম সংঘবদ্ধ হামলা

বেরোবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:২২, ১৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৩:২৩, ১৪ জুলাই ২০২৫

ফিরে দেখা ১৪ জুলাই: বেরোবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের প্রথম সংঘবদ্ধ হামলা

গত বছরের ১৪ জুলাই চীন সফর শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে দেশজুড়ে আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। সেই সূত্র ধরেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেন এবং বিক্ষোভ মিছিল করেন।

সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতি-নাতনিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-নাতনিরা পাবে? এটা দেশবাসীর কাছে আমার প্রশ্ন। তাদের অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, নিজের পরিবার সব ফেলে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, দিনরাত খেয়ে না খেয়ে, কাদামাটি পেরিয়ে, ঝড়বৃষ্টি সব মোকাবিলা করে যুদ্ধ করে এ দেশে বিজয় এনে দিয়েছিলেন। তারা বিজয় এনে দিয়েছিলেন বলেই তো আজ সবাই উচ্চপদে আসীন। আজ গলা বাড়িয়ে কথা বলতে পারছেন। তা না হলে পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে থাকতে হতো।”

এই বক্তব্যের পরপরই দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৪ জুলাই রোববার রাত সাড়ে ১১টা থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো থেকে স্লোগান দিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ২৪ হল (পূর্বের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল), শহীদ মুখতার ইলাহী হল, শহীদ ফেলানী হল (পূর্বের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল) থেকে ভেসে আসে স্লোগানের আওয়াজ। এ সময় ছাত্রীদের হলের তালা ভেঙে অনেক শিক্ষার্থী মিছিলে যোগ দেন এবং মর্ডান মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন।

মিছিলটি মর্ডান মোড়, দর্শনা, লালবাগ, পার্ক মোড় ঘুরে আবার মর্ডান মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। দিবাগত রাত ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে মিছিল শেষে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। মেয়েদের হল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে ছাত্ররা যে যার মতো মেস বা হলে ফেরার সময়, আগে থেকে দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে প্রস্তুত থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা চালায়। তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও প্রতিরোধ গড়ে তুললে ছাত্রলীগের কর্মীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে অনেকে আহত হন। দুজন আন্দোলনকারী গুরুতর আহত হওয়ায় তাঁদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে অনেক খোঁজ করেও তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের চারজন কর্মী আহত হন বলে জানা যায়। এই দিনই প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রক্তাক্ত হয়।

এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী ও আহত সাংবাদিক তাওহিদুল হক সিয়াম বলেন,
“আমরা মিছিল শেষে হলে ফিরছিলাম। ক্যাফেটেরিয়া পার হয়ে লাইব্রেরির সামনে আসতেই দেখি, ছাত্রলীগ আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিল। আমাদের দেখেই তারা উত্তেজনাকর স্লোগান দিতে থাকে। আমরাও ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিই। তখনই তারা আমাদের ওপর আক্রমণ চালায়। আমাদের দুইজন গুরুতর আহত হয়। এখনও সেই হামলার কোনো বিচার পাইনি আমরা।”

রক্তাক্ত সেই ১৪ জুলাইয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক আহসান হাবিব বলেন, “১৪ জুলাই শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলার পরে একযোগে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। তারই ধারাবাহিকতায় বেরোবিতে আমরা শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা করি। মডার্ন মোড় থেকে পদযাত্রা শেষে ছাত্রীদের হলে দিয়ে যখন ক্যাফেটেরিয়ার সামনে আসি, তখন ছাত্রলীগের সাথে আমাদের কয়েকজনের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়, যাতে আমাদের কয়েকজন আহত হয়। সেদিন ছাত্রলীগের গুণ্ডারা প্রকাশ্যে আমাদের ওপর হামলা চালায় এবং হুমকি দেয়, কিন্তু এ হামলার কোনো সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার আমরা পাইনি।”

সানজানা

×