
আধুনিকতার যুগে কালের আবর্তনে বগুড়া সারিয়াকান্দিতে হারিয়ে যাচ্ছে পালতোলা নৌকা। বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। আদিম যুগ ধরে মানুষ নদী পথে একমাত্র বাহন ছিল পাল তোলা নৌকা। প্রাচীন কালের মানুষরা বাতাসের শক্তি কাজে লাগিয়ে পালতোলা নৌকা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নদী পথে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করতো। বাতাসের সাহায্যে চলতো এসব নৌকা। কালের পরিক্রমায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইঞ্জিনচালিত যানবাহন চালু হওয়ায় নদীতে আর পালতোলা নৌকার আর দেখা যায় না। পালতোলা নৌকা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নদীবেষ্টিত এলাকা। জানা যায়, আগে এই উপজেলার যমুনা, বাঙালি এবং সুখদহ নদীর বিভিন্ন ঘাটে ভিড়ত নানা ধরনের পালতোলা নৌকা। তখন ব্যবসা বানিজ্যের নৌ পথে অন্যতম বাহন ছিল পালতোলা নৌকা। নদীতে বিভিন্ন রঙের পালের নৌকা চলাচল করতো।
পালতোলা নৌকাগুলোর মধ্যে ছিল সাম্পান, বজরা, ছিপ, ময়ূরপঙ্খী, পানসি, চরঙ্গা, গয়না, কোষা, বাচারি, ঘাসি, পাথাম, ইলশা, কেড়াই নৌকা, ফেটি, নায়রি, গস্তি, সওদাগরি, সাপুরিয়া, বেদে নাও, বৌচোর, গন্ডী বিলাস, লক্ষী বিলাস, খেয়া, বাইচের নাও, দৌড়ের নাও ও ডিঙিসহ নানা রকমারি পালের নৌকা।
এসব নৌকাগুলো যখন পাল তুলে চলাচল করতো তখন মনে হতো একঝাঁক রঙিন পঙ্খিরাজের সারি নদীতে উড়ে যাচ্ছে।
সাধারণ পালতোলা নৌকাকে এই উপজেলায় বাদাম তোলা নৌকাও বলা হয়। আগের দিনে মাঝি-মাল্লাদের ছিল বিশাল কদর। আধুনিকতার ছোঁয়া যন্ত্রের যুগে কালের আবর্তনে এসব নৌকা আর দেখা যায় না। এখন দ্রুতগতির তেলের ইঞ্জিনে চালিত নৌকা চালাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। ইতিহাস থেকে জানা যায়, সিন্দু সভ্যতার বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা রকমের নৌকার অস্থিত্বের কথা। এখন থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছর আগে ভূ-মধ্য সাগরে বহু দাঁড় বিশিষ্ট নৌকার দেখা মিলতো। নৌকায় দাঁড় (রশ্মি) টানার কাজে ব্যবহার করা হত কৃতদাসদের। গুণ টানা নৌকা বাওয়া অত্যন্ত শ্রমসাধ্য ও ক্লান্তিকর। পালের উদ্ধাবন এ অবস্থা থেকে মানুষকে খানিকটা মুক্তি দিয়েছে। দাঁড় টানার সঙ্গে পাল টানানো হলে নৌকার গতি বেড়ে যেত। সেই সাথে হাওয়ার গতিতে নৌকা আরও বেশি বেগমান হতো। বাতাসচালিত কার্গোজাহাজ উনিশ শতকে সমুদ্র দখল করে রেখেছিল। এরপরে বাস্পচালিত ইঞ্জিনের কারণে হারিয়ে যায় বায়ুচালিত নৌকা। পরে কয়লাচালিত ইঞ্জিন পুরো নদী সাগর-মহাসাগর দখল করে নেয়। তবে এখনও হঠাৎ সারিয়াকান্দি যমুনা নদীতে দেখা যায় পালতোলা নৌকা। যখন নদী পথে নৌকাগুলো যায় তখন অপরুপ সৌন্দের্য্যরে দৃশ্য ফুটে উঠে।
যমুনা পাড়ের পালতোলা নৌকার মাঝি দুলাল জানান, আমার কিছু গবাদি পশু আছে। তাদের খাদ্য সংগ্রহের জন্য পালতোলা নৌকায় প্রতিদিন যমুনা নদী পাড়ি দিতে হয়। আমি গরিব মানুষ ইঞ্জিন চালিত নৌকার অনেক খরচ। তাই পাল তোলা নৌকার ব্যবহার পুনরায় শুরু করেছি।
সারিয়াকান্দি পৌর এলাকার বাগবেড় গ্রামের বলো রাম জানান, সাারিয়াকান্দি যমুনা নদীতে একসময় পালতোলা নৌকা আমরা অনেক দেখেছি। সেই পালতোলা নৌকা হারিয়ে গেছে। তবে যমুনা ও বাঙালি নদীতে মাঝে মধ্যে দুই একটা দেখা যায় পালতোলা নৌকা।
রাজু