
স্লুইসগেটের পানি ছাড়ায় ডুবেছে সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলের ২০০ বিঘা জমির আমন ধান
কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ না করে স্লুইসগেটের পানি ছাড়ায় ডুবেছে সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলের ২০০ বিঘা জমির আমন ধান। কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা না করেই স্লুইসগেটের পানি ছাড়ায় তাদের এ আমন ধান তলিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দাবি করেছেন পাটচাষী ও মৎস্য সম্পদের কথা চিন্তা করেই পানি ছাড়া হয়েছে। পানি ছাড়ায় যে সব কৃষকের ধান ডুবেছে তাদের ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও তিনি নিশ্চিয়তা দিয়েছেন।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, দেশের ২য় বৃহত্তম বিল গাজনার সুজানগর উপজেলার বাদাই গ্রামের আবাদি ধানের জমিতে শুধুই পানি আর পানিতে সাদা হয়ে আছে। পানির ওপর কিছু কিছু জমিতে ধান গাছের সবুজ মাথা দেখা গেলেও বেশিরভাগই পানিতে ডুবে আছে। কৃষকরা ধান ডুবে যাওয়ার ঘটনায় দিশেহারা হয়ে উঠেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, তারা এ আমন ধানে কয়েক মাসের চালের সংস্থান করে থাকেন।
আকস্মিকভাবে স্লুইসগেট ছেড়ে দেওয়ায় আমন ডুবে যাওয়ায় আগামীতে তারা কিভাবে চলবেন তা নিয়ে তারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন যাপন করছেন। বাদাই গ্রামের কৃষক বকুল শেখ জানান, দশ বিঘা জমিতে আবাদ করা আমন ধানের ৭ বিঘা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এখন তিনি দিশেহারা। তিনি তার এ ক্ষতিপূরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছেন।
কৃষক রিজাই শেখ ও নাদের শেখ জানান, আমাদের এখানে তালিমনগর স্লুইসগেট নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কিন্তু তিনি তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে পানি ছেড়ে দেওয়ায় আমন তলিয়ে যাওয়ায় তারা কিছুতেই মানতে পারছেন না। কৃষক মকবুল হোসেন দাবি করেছেন, তাদের গ্রামের ৫০০ বিঘা জমির মধ্যে ২০০ বিঘার আমন এখন পানির নিচে। যদি ধীরে ধীরে অল্প করে পানি ছাড়া হতো তাহলে তাদের এ পরিণতি দেখতো হতো না।
তার ৫ বিঘা আমন ধান ডুবে যাওয়ায় তিনি অসহায়বোধ করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সুজন বিশ্বাস ও আকতার হোসেন জানান, আমন চাষে খরচ কম হওয়ায় তারা এ ধান চাষ করে সারা বছরের চালের চাহিদার এক বড় অংশ সংস্থান করেন। কিন্তু সে ধান তলিয়ে যাওয়ায় তারা এখন দেশেহারা হয়ে পড়েছেন। সুজন বিশ্বাস আখতার হোসেনের মতো শত শত কৃষকের ধান তলিয়ে যাওয়ায় তারা এখন ক্ষতিপূরণের দাবি তুলছেন।
এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ দাবি করেছেন পাটচাষীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ও বিলে মৎস্য সম্পদের কথা চিন্তা করে জুলাই মাসের শুরুতে পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ পাট কাটার উপযুক্ত সময়ে বিলে পানি সংকট যেমন দেখা দেয়, তেমনি জোয়ারের পানির সঙ্গে রেনু পোনা বিলে আসে। এসব মিলিয়ে পানি ছাড়া হয়েছে। তবে যদি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন তা জানালে কৃষি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন চৌধুরী জানান, পানি ছাড়ার বিষয়ে কৃষকরা একেবারে না ছেড়ে আস্তে আস্তে ছাড়ার কথা আমাদের জানান। বিষয়টি আমরা ইউএনওকে জানিয়েছিলাম।
কিন্তু উঁচু এলাকার পাটচাষীদের চাপ ও দাবির প্রেক্ষিতে পানি ছাড়তে হয়েছে। এখানে আসলে সবার কথাই মাথায় রাখতে হয়। তবে পাম্প হাউসের মাধ্যমে পানি টেনে নিলে বেশিরভাগ জমির ধান রক্ষা পাবে বলেও তিনি দাবি করেন।
প্যানেল মজি