ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

পদ্মার ভাঙনে দোকানপাট-ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন,সরিয়ে নিচ্ছে দোকানপাট

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর ॥

প্রকাশিত: ১৫:১৫, ৮ জুলাই ২০২৫

পদ্মার ভাঙনে দোকানপাট-ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন,সরিয়ে নিচ্ছে দোকানপাট

পদ্মা সেতু থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট এলাকায় পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধের ২শ’ মিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসময় নদী ভাঙনে ২০টি দোকানপাট ও আশেপাশের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আকস্মিক ভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা ও ব্যবসায়ীরা।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন শরীয়তপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদ হোসেন ও জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায়, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলামসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা। এছাড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য সরদার নাসির উদ্দিন কালু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুরের আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির দলীয় লোকজন নিয়ে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নদীর মাঝে আছি, ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছি। ভাঙন প্রতিরোধে জিওব্যাগ ফেলা অব্যাহত থাকবে।

শরীয়তপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদ হোসেন বলেন, ‘ভাঙনকবলিত ৩০ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। যাদের বাড়িঘর ও দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের তালিকা করে টিন ও আর্থিক সাহায্য প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। ভাঙন প্রতিরোধের জন্য ইতোমধ্যে দেড়শ’ জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। আরো ৪শ’ ব্যাগ প্রস্তুত আছে, তা ফেলা হবে এবং আরো প্রস্তুত করা হচ্ছে। সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে, ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ীভাবে কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এদিকে সোমবার সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট এলাকায় এ ভাঙন শুরু হলে স্থানীয়রা তাদের দোকানপাট ও ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে চেষ্টা করে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সাগর মাদবর, শফিকুল ইসলাম, আলী আহম্মদ জানান, নদীভাঙনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি মিলে ২০টি স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। কেউ কেউ কিছু দোকানপাট অন্যত্র সরিয়ে নিতে পেরেছে। বর্তমানে ভাঙনের শিকার পরিবার-ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এদিকে ভাঙনকবলিত এলাকায় জিওব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাজিরার পদ্মা সেতু ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার ভাটিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ৩ নভেম্বরে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকায় বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে। এ বছর বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এর আগে ঈদুল আজহার দিন ভোরে সংস্কার করা বাঁধের ১০০ মিটার অংশসহ পাশের আরও একটি স্থানে ভাঙন শুরু হয়। তখন এক দিনের মধ্যে বাঁধের আড়াইশ মিটার অংশ নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। বর্তমানে একটানা বৃষ্টি ও নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে এরকম ভাঙন শুরু হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ভাঙন আতঙ্কে লোকজন তাঁদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিচ্ছেন।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় বলেন, ‘হঠাৎ ভাঙনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছি। এসে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনের দৃশ্য দেখলাম। এখানে বাঁধের বেশ কিছু অংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। অনেক দোকানপাট ও বসতবাড়ি ভাঙনের শিকার হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের তালিকা করে তাদের সরকারি সাহায্য-সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।’

আফরোজা

×