ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

সাতক্ষীরায় সাতটি ব্রিজ ভেঙে বিচ্ছিন্ন ৩০টি গ্রাম

এবিএম কাইয়ুম রাজ, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৮:০৮, ২৪ জুন ২০২৫

সাতক্ষীরায় সাতটি ব্রিজ ভেঙে বিচ্ছিন্ন ৩০টি গ্রাম

ছবিঃ সংগৃহীত

সাতক্ষীরার মরিচ্চাপ নদীর ওপর নির্মিত সাতটি ব্রিজ ভেঙে পড়ায় সদর, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় জেলা সদরে পৌঁছাতে যেখানে ৪ থেকে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হতো, এখন সেখানে ঘুরপথে চলতে হচ্ছে ২০ কিলোমিটারেরও বেশি। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি সময় ও খরচ—দুটিই বেড়েছে এলাকাবাসীর।

ভেঙে পড়া ব্রিজগুলো হলো বাকড়া, টিকেট, হিজলডাঙ্গা, চরগোবিন্দপুর, শিমুলবাড়িয়া, ডাড়ার খাল ও এল্লারচর ব্রিজ। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মিত ব্রিজগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল ১০ থেকে ১৫ মিটার। সরেজমিনে দেখা যায়, কোনোটি নদীর মাঝখানে পড়ে আছে, কোনোটি ঝুলছে, আবার কোনোটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বাঁশ বেঁধে পারাপার বা সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল চালিয়ে নিচ্ছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্রিজ নির্মাণে সিএস রেকর্ড অনুসরণ করা হয়নি, নেওয়া হয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামতও। ফলে খননের পর নদীপ্রবাহের চাপ সইতে না পেরে একে একে ব্রিজগুলো ভেঙে পড়ে।

জানা যায়, যখন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এসব ব্রিজ নির্মাণ করে, তখন মরিচ্চাপ নদী ভরাট হয়ে খালের মতো সরু ছিল। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০২১–২২ ও ২০২২–২৩ অর্থবছরে নদী পুনঃখননের উদ্যোগ নিলে নদীর প্রস্থ ও পানি চাপ বেড়ে যায়, এবং দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে ব্রিজগুলো ধসে পড়ে।

চরগোবিন্দপুরের রমজান আলী সরদার বলেন, নদীর তুলনায় ব্রিজগুলো এতটাই ছোট ছিল যে, পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে। ডাড়ার খালের আব্দুল মালেক জানান, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় হাটবাজার, শিক্ষা ও ব্যবসা—সব ক্ষেত্রেই দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। মাছ বাজারজাত করতেও সমস্যায় পড়ছেন ঘের মালিকরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুজিয়ুর রহমান বলেন, মরিচ্চাপ নদীর প্রস্থ ৫০ থেকে ৭০ মিটার হলেও এসব ব্রিজ ছিল সর্বোচ্চ ২০ মিটার দীর্ঘ। এত বড় নদীর ওপর এত ছোট ব্রিজ টিকে থাকার সুযোগ নেই। তাছাড়া এসব ব্রিজ নির্মাণে পাউবোর অনুমোদন বা এনওসি নেওয়া হয়নি।

তবে একই নদীর ওপর বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত ৬০ মিটার দীর্ঘ ব্যাংদহা ব্রিজ এখনও অক্ষত রয়েছে। এটি এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালে নির্মিত হয়।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম জানান, ব্রিজ ধসের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমেদ জানান, ভেঙে পড়া সাতটি ব্রিজের মধ্যে চারটি এলজিইডির মাধ্যমে পুনর্নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

ইমরান

×