ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধ্য করা চক্রের মূলহোতা গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০১:৪১, ১৪ জুন ২০২৫

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধ্য করা চক্রের মূলহোতা গ্রেফতার

ছবি: সংগৃহীত

চাকরির লোভ দেখিয়ে বিদেশে মানব পাচার ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাধ্যতামূলকভাবে অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগে একটি চক্রের মূলহোতা মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইনকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে এ তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।

তিনি বলেন, “আকর্ষণীয় বেতনে বিদেশে চাকরির প্রলোভনে যারা প্রতারণার ফাঁদে ফেলে, তাদের একটি চক্রকে সনাক্ত করেছে সিআইডি। চক্রটি চাকরির পরিবর্তে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠাত। তাদের মূলহোতা মুহাম্মদ আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, চক্রটি ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনের আশ্বাস দিয়ে অন্তত ১০ জনকে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরবে পাঠায়। পরে ওমরাহ করিয়ে তাদের রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে এক ব্যক্তি—‘সুলতান’ নামে পরিচিত—এর কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সুলতান ভিকটিমদের রাশিয়ান সেনাদের হাতে তুলে দেন, যারা তাদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে বাধ্য করে।

ভিকটিমদের মধ্যে কেউ কেউ যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। এমনকি খাবার দেওয়া বন্ধ করে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলা হয়। পরে তারা বাধ্য হয় যুদ্ধ করতে।

এই প্রক্রিয়ায় নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুমায়ুন কবির নামে একজন নিহত হয়েছেন এবং কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। পালিয়ে আসা ভিকটিমদের একজন, নরসিংদীর পলাশ উপজেলার আকরাম হোসেন, নিজ উদ্যোগে দেশে ফিরে আসেন গত ২৬ জানুয়ারি। ফিরে এসে তিনি অন্য ভিকটিমদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার দেওয়া তথ্যে আহত আমিনুলের স্ত্রী বনানী থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন।

এছাড়াও সিআইডি জানতে পেরেছে, একইভাবে পাচারের শিকার আরও ১০ জন সৌদি আরবে আটকা পড়েছেন। তারা রাশিয়ায় যেতে রাজি না হওয়ায় তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং এখন তারা দেশে ফিরতেও পারছেন না, আবার কোনো কাজও করতে পারছেন না।

এ চক্রের আরও এক সদস্য ফাবিহা জেরিন তামান্নাকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি নেপালে পালিয়ে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তিনি ‘ড্রীম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড’-এর অংশীদার।

বনানী থানার মামলায় গ্রেফতার আলমগীর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিআইডি জানিয়েছে, ভিকটিমদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ চলছে। পাশাপাশি মানব পাচার চক্রের পুরো নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার জন্য তদন্ত ও গ্রেফতার অভিযান চলমান রয়েছে।

আসিফ

×