ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ

কুড়িগ্রামে মৎস্য চাষিদের মনে আশার আলো

রাজু মোস্তাফিজ

প্রকাশিত: ০০:০০, ২২ মে ২০২৫

কুড়িগ্রামে মৎস্য চাষিদের মনে আশার আলো

কুড়িগ্রামে গলদা চিংড়ি চাষে আগ্রহ বাড়ছে মৎস্য চাষিদের

হিমালয়ের পাদদেশে উত্তরের নদ-নদী বেষ্টিত সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম। জীবনের প্রয়োজনে এ অঞ্চলের মানুষ প্রত্যন্ত গ্রামের পুকুরে বাংলা বা দেশীয় মিশ্রিত মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়ি চাষ করে সফলতা পেয়েছে।  এতে মাছ চাষের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলেছে কুড়িগ্রামে। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে এ জেলা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যেরবাজার এলাকায় পল্লব চন্দ্র রায়ের ৪০ শতক একটি পুকুরে জেলেরা জাল টানছে। পুকুর পাড়ে জালে ধরা মাছ আনতেই স্থানীয়রা অবাক বড় বড় সাইজের গলদা চিংড়ি দেখে! কিছুটা আশ্চর্য হবার মতোই মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ। 

জেলায় প্রথম বারের মতো কার্প, পাঙ্গাস, সিলভার কাপসহ দেশীয় জাতের মাছের সঙ্গে ৭ মাস আগে পিএল সাইজের ৬শ’ পিস গলদা চিংড়ি ছাড়া হয় পুকুরে। মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষে সফলতা দেখে খুশি স্থানীয়রাও। অন্য মাছের সঙ্গে চিংড়ি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। এতদিন পুকুরে কার্প জাতীয় মাছ চাষ হতো। আরডিআরএস বাংলাদেশের সহায়তায় প্রথমবারের মতো দেশীয় কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়ি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন মৎস্য চাষিরা।

এক খাবারেই পুকুরের সব মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় আগ্রহী হচ্ছেন মৎস্য চাষিরা।  রফতানিযোগ্য গলদা চিংড়ি চাষ এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে মৎস্য চাষিরা লাভবান হবে এবং কুড়িগ্রাম জেলার অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা।
মৎস্য চাষি পল্লব চন্দ্র রায় বলেন, প্রতি কেজিতে ৮/১০টি করে গলদা চিংড়ি উঠছে। বর্তমান ১২শ’ টাকা কেজি বাজার দরে লক্ষাধিক টাকা আয় করবেন তিনি। এই মাছ চাষে মাছের খাবারসহ পুকুর প্রস্তুত করণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫/৩০ হাজার টাকা। সময়মতো খাবার ও সঠিক পরিচর্যা করায় মাছের ওজনও ভালো হয়েছে। এক খরচে বাড়তি দেশীয় মাছ বিক্রি করে আরও লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে জানান তিনি। 

মাধবী রাণী বলেন, বাজারে গলদা চিংড়ি মাছের দাম বেশি। গরিব মানুষের সামর্থ্যরে বাইরে এই মাছ। জিনিসপত্রের যে দাম তাতে এই মাছ খাওয়া  ছিল আর স্বপ্ন দেখার মতো। এখন নিজের পুকুরে দেশীয় মাছের সঙ্গে বাড়তি খরচ না করেই গলদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। সাইজেও বড় খেতেও সুস্বাদু।
স্থানীয় মৎস্য চাষিরা বলেন, বাংলা বা দেশীয় মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়ি চাষ হয় এটা আমাদের জানা ছিল না। কিন্তু পল্লব রায়ের পুকুরে গলদা চিংড়ির চাষ দেখে অবাক হয়েছি। আগামীতে আমার নিজের পুকুরেও এই মাছ চাষ করব।
স্বপ্না রাণী বলেন, সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোগতিা পেলে আমাদের গ্রামে আরও অনেক পুকুর আছে সেখানে গলদা চিংড়ি চাষ করা সম্ভব।
আরডিআরএস বাংলাদেশের টেকনিকেল অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, কুড়িগ্রাম সদর ও রাজারহাট উপজেলার ১০ জন চাষির প্রায় চার একর পুকুরে ছয় হাজার পিস গলদা চিংড়ির চাষ হয়েছে। কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়ির মিশ্র চাষের জন্য খুবই অনুকূল পরিবেশ এই জেলায়। তাই গলদা চাষ অত্যন্ত লাভজনক ও সম্ভাবনাময়। আগামীতে আমরা গলদা চিংড়ি চাষে প্রসারের পরিকল্পনা করছি।
রাজারহাট উপজেলা মৎস্য কমকর্তা সরকারি-বেসরকারিভাবে গলদা চিংড়ি চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জেলায় ২৬ হাজারের অধিক পুকুরে সাড়ে ২০ হাজার চাষি মাছ উৎপাদন করছে।

×