
ছবি: জনকণ্ঠ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন জুয়া। পাড়া-মহল্লার অলিতে-গলিতে, গ্রামের চায়ের দোকানে, হাটে-মাঠে চলার পথে হেঁটে হেঁটে মৌখিকভাবে ধরছে বাজি।
আইপিএল ক্রিকেট ও ফুটবলের ইউরোপিয়ান লীগসহ জনপ্রিয় খেলার সময় বাজির সাইটগুলো বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রলুব্ধ করে। দেশি চক্রগুলো এতে হোস্ট অ্যাকাউন্ট করে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের নামে তরুণ-তরুণীদের দিয়ে ফাঁদ পাতে। এরপর ডিজিটাল মুদ্রায় হাতিয়ে নেয় টাকা। দেশের বাইরে থাকা মূল হোতাদের সঙ্গে দেশীয় এজেন্টরা মিলে এ অপরাধমূলক কাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, তার একটি দোকান ছিল। পাশের ব্যবসায়ীরা প্রতি ওভারে কতটি চার, কতটি ছক্কা হবে, এই রকম আইডিয়া করে বাজি ধরতো। তিনিও শুরু করেন তাদের সাথে জুয়া খেলা। দু’দিন লাভ হলে তিন দিন লোকসান হতো। যতই দিন যায়, খেলার নেশা বেড়ে যায়। এক সময় দোকান বিক্রি করে দেন। দোকানের টাকা শেষ হয়ে গেলে স্ত্রীর সোনার গয়না বন্ধক রেখে সেই টাকাও জুয়া খেলে শেষ করে দেন। পরে সেগুলো বিক্রি করেন। বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে হাওলাতি ও সুদের ওপর ঋণ নিয়ে জুয়া খেলতে থাকেন। সব কিছু শেষ হয়ে গেলে জমি বিক্রি করে বিদেশ চলে যান। জুয়ার নেশায় তিনি বিদেশ গিয়েও তা ছাড়তে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যক্তি জানান, অল্প সময়ে কোটিপতি হওয়ার নেশায় তিনি জুয়ায় আসক্ত হন। তিনি ভালো বেতনের চাকরি করতেন। গ্রামের বন্ধুদের সাথে চলতে গিয়ে নষ্ট হয় জীবন। ছাড়তে হয় পরিবার। লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়া খেলে শেষমেষ তিনি এক লাখ টাকা সুদের হারে ঋণ নিয়ে জুয়া খেলেন এবং হেরে যান। জমি বিক্রি করে সেই ঋণ শোধ করেন। এরপর মা-বাবা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি, অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে সাইবার অপরাধকে শাস্তিযোগ্য অপরাধের বিধান রেখে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তবুও থামছে না অনলাইন জুয়া।
সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ অনলাইন জুয়ার থাবা। এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ছেলে-মেয়ে সারাদিন মোবাইল হাতে বসে থাকে, টাকা-পয়সা নষ্ট করছে।
বর্তমান সময়ে এই জুয়া ডিজিটাল মাধ্যমে নতুন রূপ পেয়েছে। এর ফলে ঘরে বসেই মানুষ অনলাইনে বিভিন্ন জুয়ার অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলতে পারছে। এসব অনলাইন জুয়ায় আসক্ত বেশির ভাগই স্কুল, কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ তরুণ প্রজন্ম। যা বাংলাদেশের জন্য একটি অশনিসংকেত।
সূত্র জানায়, ভিপিএনসহ কিছু অনুমোদনহীন গেটওয়ের মাধ্যমে বন্ধ হওয়া সাইট বা নতুন সাইট ব্রাউজ করে জুয়া খেলা হয়। সাইটগুলোর ডোমেইন দেশের বাইরে এবং নির্ধারিত সময় পরপর সাইটের আইপি ঠিকানা পরিবর্তন করে নিয়ন্ত্রণকারীরা। বিটকয়েনে লোকসানের কোনো রেকর্ড থাকে না। ফলে কালো টাকার মালিকরা পাচার করছে টাকা।
শহীদ