ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ডিমলা থানা ভবন: ছাদ-দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে, ঝুঁকিতে পুলিশি কার্যক্রম

রুহুল আমিন, ডিমলা (নীলফামারী)

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ২০ মে ২০২৫; আপডেট: ১৭:৩১, ২০ মে ২০২৫

ডিমলা থানা ভবন: ছাদ-দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে, ঝুঁকিতে পুলিশি কার্যক্রম

নীলফামারীর ডিমলা থানা ভবনটি দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। দ্বিতল ভবনটির ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে, বেরিয়ে আসছে মরচে ধরা লোহার রড। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কর্মরত পুলিশ সদস্যরা এই জরাজীর্ণ ভবনে দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে ভবনটির প্রতিটি কক্ষ যেন এক একটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে, যেখানে কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে তা বলা মুশকিল।

সরেজমিনে থানা ভবন ঘুরে দেখা গেছে, দ্বিতল ভবনটির ভেতরের পুলিশ ব্যারাকের চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। বিভিন্ন কক্ষের ছাদে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে এবং বিস্তীর্ণ এলাকার প্লাস্টার খসে পড়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক জায়গায় ছাদের ভেতরের লোহার রডগুলো বেরিয়ে এসে বিপজ্জনক অবস্থায় ঝুলছে। দীর্ঘদিন ধরে ভবনটির কোনো কার্যকর সংস্কার না হওয়ায় এর কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ও পুলিশ সদস্যরা আশঙ্কা করছেন, জরুরি ভিত্তিতে ভবনটি মেরামত অথবা নতুন ভবন নির্মাণ করা না হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। পাশের রান্নাঘরটিও অত্যন্ত জীর্ণ। সামান্য বৃষ্টিতে পানি ঢুকে রান্নাঘরে। ঢুকে নানা কীটপতঙ্গ। চেয়ার-টেবিল নাই, যা আছে তা ব্যবহারের অনুপযোগী।

ডিমলা থানা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে এই থানা ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর নামমাত্র কিছু সংস্কার কাজ হলেও তা ভবনের সামগ্রিক অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটাতে পারেনি। বর্তমানে ভবনের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, কর্মরত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সবসময় একটি চাপা আতঙ্ক বিরাজ করে। ঝুঁকিপূর্ণ এ থানায় বর্তমানে ১ জন পরিদর্শক, ১ জন পরিদর্শক (তদন্ত), ১১ জন এসআই ও ৮ জন এএসআইসহ সর্বমোট ৬০ জন পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন।

থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্য রাজু মিয়া জানান, "থানার এই ভবনটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মাথার উপর কখন ছাদের ইট-সুরকির খোয়া খসে পড়ে, সেই ভয়ে তটস্থ থাকতে হয়। বিকল্প কোনো ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে এখানেই থাকতে হচ্ছে। প্লাস্টার খসে বালু ও ইটের কণা প্রতিনিয়ত নিচে পড়ছে। বর্ষাকালে ছাদ চুইয়ে বৃষ্টির পানি সরাসরি কক্ষে এসে পড়ে, যা আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে।"

আরেক পুলিশ সদস্য শংকর তার উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেন, "আমরা যে ভবনে বসবাস করছি, তা সত্যিই খুব ঝুঁকিপূর্ণ। রাতে ঘুমানোর সময়ও ছাদের প্লাস্টার ভেঙে বালু ও অন্যান্য আবর্জনা গায়ে এসে পড়ে। অনেক সময় তা চোখ-মুখেও লাগে। বর্ষার সময় ঘরের ভেতরে পানি জমে যায়। একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে আমরা অন্তত একটু শান্তিতে কাজ করতে পারতাম।"

থানা সূত্রে আরও জানা যায়, ভবনটি নির্মাণের জন্য ইতিপূর্বে নীলফামারী জেলা পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।'' 

এ বিষয়ে ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলে এলাহী গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "আমরা পুলিশ সদস্যরা জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা রক্ষায় দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করি। অথচ আমাদের সেই সহকর্মীদের দিনের শেষে একটু শান্তিতে ঘুমানোর মতো একটি নিরাপদ জায়গাও নেই। এই জরাজীর্ণ ভবনে কাজ করতে গিয়ে সবসময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকতে হয়, যা আমাদের মনোবল ভেঙে দেয়।"

ওসি ফজলে এলাহী আরও জানান, ভবনটির ছাদ ও দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে বিপজ্জনকভাবে প্লাস্টার খসে পড়ছে এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দ্রুত একটি নতুন ভবন নির্মাণ এবং কর্মরত পুলিশ সদস্যদের জন্য একটি নিরাপদ ও আধুনিক আবাসনের ব্যবস্থা করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে এবং বিষয়টি বিস্তারিতভাবে অবগত করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, ডিমলা থানা ভবনের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি অবিলম্বে আমলে নেওয়া উচিত। কর্মরত পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। অন্যথায়, কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়ী থাকতে হবে। তারা দ্রুত একটি নতুন থানা ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

নুসরাত

×