ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

কুড়িগ্রামে হাটে খাস খাজনা আদায়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৯:১২, ৯ মে ২০২৫

কুড়িগ্রামে হাটে খাস খাজনা আদায়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি

ছবি: সংগৃহীত

দরপত্র আহ্বানের পরেও হয়নি শিডিউল বিক্রি, ফলে চিলমারীর জোড়গাছ হাটের ইজারার জন্য দরপত্র না পড়ায় সরকারি ভাবে শুরু হয় খাস খাজনা আদায়। সরকারি ভাবে খাস খাজনা আদায় শুরু হলে সঠিক নিয়মে চলবে হাটের কার্যক্রম। এতে ক্রেতা ও বিক্রেতা খুশি হলেও আদায়ে অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় হতাশ স্থানীয়রা। খাজনা আদায়ের নামে চলছে জবরদস্তি, হুমকি, অতিরিক্ত টাকা নেয়াসহ রসিদ ছাড়াই চলে খাজনা আদায়। বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে সরকারের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়াসহ সরকারি রাজস্ব ভান্ডারে আদায়ের পুরো টাকা জমা নিয়েও চলছে অনিয়মের গুঞ্জন।


জানা গেছে, চলতি ১৪৩২ বঙ্গাব্দে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ৫ টি হাট বাজারের ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারণে শুরুতে হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়। ২টি হাট বাজার ইজারার জন্য দরপত্র পড়লেরও সময় মতো জোড়গাছ হাটসহ ৩টি হাটের দরপত্র না পড়ায় ১৬ এপ্রিল (বুধবার) থেকে সরকারি ভাবে খাস খাজনা আদায় শুরু করা হয় জোড়গাছ হাটে। জোড়গাছে সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার দুটি হাট অনুষ্ঠিত হওয়ায় এই দুই হাটে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আদেশে আদায়ের পরিচালনা করেন রমনা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোঃ ফজলুল হক। ইতিপূর্বে ইজারাদারের লোকবল কর্তৃক হয়রানি হওয়া ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে স্বস্তি আসে। তারা বলেন, এবার হয়ত আর হয়রানি হতে হবে না এবং সব রসিদ মুলে জমা হবে, সরকার সঠিক রাজস্ব পাবে। কিন্তু খাস খাজনা আদায়ে ইতি মধ্যে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠাসহ কাঁচা বাজার, মাছ বাজার, কাঠ হাটি, পান সুপারি বাজারসহ বিভিন্ন বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের কাছে খাস খাজনা আদায়ের নামে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা, দেয়া হচ্ছেনা কোন রসিদ। এই সকল বাজারে বিভিন্ন মানুষকে খাজনা আদায় করতে দেখা গেছে, অনেকের গলায় ঝুলছে কার্ড আবার অনেকের নেই কোন পরিচয় পত্র। এই সকল আদায়কারী ব্যবসায়ীদের সাথে দুর্ব্যবহার করছেন এবং জোরপূর্বক রসিদ ছাড়াই অতিরিক্ত খাজনা নিচ্ছেন অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।


কাঠ ব্যবসায়ী দুলাল বলেন, সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে কিন্তু রসিদ দিচ্ছেনা আদায়কারীরা, কিছু বললে ভয় দেখায়। একই অভিযোগ করে পান ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, খাজনা কত সেটিও জানি না, তবে প্রতি হাটে ৪০ টাকা করে নেয় সরকারি কার্ড গলায় দিয়ে আসা লোক তবে রসিদ দেয় না। জুতার দোকান প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও ২০ থেকে ৪০ টাকা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে ব্যবসার নুর আমিন বলেন, এখন  সরকারিভাবে আদায় হচ্ছে খাজনা কিন্তু রসিদ দেয় না। স্থানীয় আমিনুল, ফাহমিদুল, রশিদসহ অনেকে বলেন, খাস খাজনা আদায় করা হচ্ছে সরকারি ভাবে। এতেও যদি অনিয়ম আর দুর্নীতি হয়, রসিদ না দেয়া হয় তাহলে কত আদায় হচ্ছে আর রাজস্ব ভান্ডারে কত টাকা জমা হচ্ছে সেটি তো প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ এনে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, অনেক আদায়কারী রয়েছে তারা একে তো অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে সাথে খারাপ ব্যবহার করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার হাট বসে জোড়গাছে এটি চিলমারীর পুরাতন ও বড় হাট এই হাটের মাছ, তরকারি, কাঠ, পিয়াজসহ প্রায় দেড় থেকে দুইশত ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি হাটবার খাজনা নেয়া হয়। তবে সরকারি খাস খাজনা চলমান এই ৭টি হাটে কোনো রসিদ না দিয়েই তা আদায় করা হচ্ছে।

ধান, পাট, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের বাজারেও খাজনা আদায় নিয়ে রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। আদায়ের জন্য কিছু বহিরাগতদের আপাতত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জানিয়ে রমনা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোঃ ফজলুল হক বলেন, রসিদ ছাড়া আদায় হওয়ার কথা নয়, আর রসিদ মুলে যা আদায় হয় সেটিই জমা হয়।

এখনো এমন অভিযোগ পাইনি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বলেন, আমরা মনিটরিং বাড়িয়ে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবো। তিনি আরো বলেন, কার্ডধারী ও রসিদ ছাড়া যেন কাউকে কেউ খাজনা না দেয়।

রবিউল

×