
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ
কুড়িগ্রামে পুরোদমে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ধানের ফলন মোটামুটি ভালো হওয়ায় অনেকটাই খুশি জেলার কৃষকেরা। তবে দাম নিয়ে রয়েছে অসন্তুষ্টি। কেননা বোরোধান রোপনে যে পরিমাণ উৎপাদন খরচ হয় সেই তুলনা করলে ধানের দাম অনেক কম। ফলে ধানের দাম নিয়ে কৃষকরা হতাশ।
কৃষকরা বলছেন, জমি প্রস্তুত, রাসায়নিক সার খরচ, ধানের বীজ, বীজতলা প্রস্তুত, বালাইনাশক বা কীটনাশক খরচ, ধান রোপণের জন্য কৃষান খরচ হিসাব করলে প্রতি মণ ধান রোপণ থেকে উঠানো পর্যন্ত খরচ ৯০০-৯৫০ টাকা আর প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকায়। সেই হিসেবে ধান চাষ করে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষককে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি এর তথ্যমতে, এবছর জেলায় বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৩৬০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমিতে।
সরেজমিনে, কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে ধান কর্তন ও মাড়াইয়ের ব্যস্ত কৃষকেরা। ছোট ও মাঝারি কৃষকেরা নিজেরাই এই ধান কর্তন করছে। বড়
কৃষকেরা নির্ভর করছে অন্য শ্রমিক বা কৃষানের উপর। তবে বর্তমানে জেলায় বেশ জনপ্রিয় চুক্তিভিত্তিক ধান কর্তন। ধান কর্তন ও মাড়াইয়ের জন্য কৃষকদের গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। কর্তন ও মাড়াইয়ের জন্য বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলায় চুক্তিভিত্তিক খরচ প্রতি শতকে ১২৫ টাকা। সেই অনুযায়ী প্রতি একরে ধান কর্তন ও মাড়াইয়ের জন্য কৃষকদের খরচ হচ্ছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এটা তো শুধু কর্তন ও মাড়াইয়ের খরচ। শুরু থেকে যদি উৎপাদন খরচ হিসেব করা হয় তাহলে হিসেবটা অনেক।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের কৃষক বুলবুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি দৈনিক জনকণ্ঠে জানান, “বর্তমানে যে পরিমাণ খরচ হয় তাতে করে ধান রোপণ করে এখন কৃষককে ফতুর (লোকসান) হতে হচ্ছে। ভুট্টা, বাদাম, তিল ও সরিষা ইত্যাদি ফসলগুলো যে পরিমাণ শ্রম ও উৎপাদন খরচ করে থাকি সেই তুলনায় লাভটা অনেক ভালো। কিন্তু ধান রোপণের শুরু থেকে আমাদের যে পরিমাণ শ্রম দিতে হয়, উৎপাদন খরচ করতে হয় তাতে আমরা ধান ঘরে তুলে বাজারে বিক্রি করতে গেলে দামটা একেবারে পাই না। কৃষকেরা দীর্ঘদিন ধরে ধান উৎপাদন করে অনেকটাই লোকসানে থাকি।”
কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আমি ৩ একর জমিতে বোরোধান রোপণ করেছি। আবহাওয়া মোটামুটি ভালো থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম না থাকায় এবার কৃষকরা লোকসানে পড়বে। আমরা আগে শুধুমাত্র ধান রোপণ করেই সংসার চালাতাম। কিন্তু এখন ধানের দাম নেই, তাই এখন আর সংসার চলে না। আমি এখন কিষান কাজ করি।”
কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, কুড়িগ্রাম রীমা মনি শীল দৈনিক জনকণ্ঠে বলেন, “বর্তমানে ধানের কেজি নির্ধারণ করা আছে ৩৬-৩৮ টাকা, সেই হিসেবে ধানের মন ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা।”
বাজারে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না সেই বিষয়ে আপনাদের করণীয় কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘শুধুমাত্র বাজার মনিটরিং করাই আমাদের দায়িত্ব, শাস্তির বিধান আমরা দিতে পারি না। ”
মিরাজ খান