ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

দানব হয়ে ওঠা শেখ হাসিনাকে একমাত্র বিএনপিই চ্যালেঞ্জ করেছিল: ডা. জাহেদ উর রহমান

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৮ মে ২০২৫; আপডেট: ০৪:১৮, ৮ মে ২০২৫

দানব হয়ে ওঠা শেখ হাসিনাকে একমাত্র বিএনপিই চ্যালেঞ্জ করেছিল: ডা. জাহেদ উর রহমান

ছবিঃ সংগৃহীত

সম্প্রতি গাজী টেলিভিশনের জনপ্রিয় টক শো ‘টাইমলাইন বাংলাদেশ’-এ বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেছেন, দানব হয়ে ওঠা শেখ হাসিনাকে একমাত্র বিএনপিই চ্যালেঞ্জ করেছিল।

ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার শেষ পর্যন্ত পতন হয়েছে। শেখ হাসিনার স্বপ্ন কী ছিল? উনার স্বপ্ন ছিল—উনি যতদিন সক্ষম থাকবেন, ক্ষমতায় থাকবেন, আর যখন সক্ষম না থাকবেন তখন উনি তার পরিবারের কারো হাতে এই দায়িত্ব তুলে দিয়ে যাবেন। আমরা বুঝতে পারছিলাম। উনি পারলেন না কেন?

তিনি বলেন, আমাদের খুব কাছাকাছি একটি দেশে ঘটনাটি ঘটেছে। সেটা হলো কম্বোডিয়া। হুন সেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২৫ বছর ছিলেন। এরপর সফলভাবে তিনি তার ছেলে হুন মানেটের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ২০২৩ সালের নির্বাচনে ১২৫টি আসনের সবকটিতেই তারা জয়লাভ করেছে। শেখ হাসিনা দয়া করে তাও সাত-আটটা আসন দিতো কিন্তু হুন সেন তাও দেননি। উনি পারলেন কেন? উনি পারলেন কারণ কম্বোডিয়ায় কোনো বিরোধী দল তাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি।

২০১৩ সালের নির্বাচনে কম্বোডিয়ান ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টি প্রায় ৫৫টি আসন পেয়েছিল, যেখানে হুন সেনের দল পেয়েছিল ৬৮টি (ভুল না হলে)। এরপর কী হলো? সেই দলটিকে আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হলো এবং কার্যত দলটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেল। বিরোধিতা যখন আর ছিল না, তখন হুন সেন খুবই শান্তিতে তার রাজত্ব চালিয়ে গেছেন এবং চালিয়ে যাবেন যদি না নতুন করে বিরোধিতা তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, আমি বেগম খালেদা জিয়ার যে কৃতিত্বের জায়গাটা বলছি, ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা প্রচুর কৃতিত্ব নিয়ে আলোচনা করছি। অনেকে বলেন, বিএনপি এতদিন আন্দোলন করেও কিছু করতে পারলো না। আবার পাল্টা বলা হচ্ছে, ‘আমরাই সব করেছি।’ তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, তোমরা কয়দিনে এসে কী করেছ? বেগম খালেদা জিয়ার এই স্বৈরাচার হটানোর যে কৃতিত্ব—আমরা সেটা নিয়ে কম আলোচনা করি।

ধরুন, তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জেলে যান। তিনি অসুস্থ ছিলেন। তার লিভার সিরোসিস ডায়াগনোজড হয়েছে এবং সর্বশেষ খবর হচ্ছে তার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, যা ডেফিনিটিভ ট্রিটমেন্ট, সেটাও আর করা সম্ভব না। তার বয়স এবং রোগের যে পর্যায়ে গেছে তা বিবেচনায়। তাহলে কি তিনি জীবনের ঝুঁকি নেননি?

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেই আমরা প্রচুর শুনেছি—শেখ হাসিনা একটি ডিল চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি (খালেদা জিয়া) সেই ডিল নেননি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেননি। ২০১৮-তে করতে হয়েছিল কারণ দলের নিবন্ধন বাতিল হতো। ২০২৪ সালের আগেও যখন সবাই কোনো না কোনোভাবে শেখ হাসিনার সঙ্গে বসেছিল কিছু আসন নিশ্চিত করার জন্য, তখনও তিনি কোনো ডিল নেননি।

তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তো বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে চেয়েছিলেন, তাকে তো যেতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু ওরকম একটা ডিল হলে কি তিনি পারতেন না? আমি মনে করি, পারতেন। তাহলে এই যে, অনেক চেষ্টাই করা হয়েছে—তিনি যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন, নিজের আয়ুর ঝুঁকি নিয়েছেন, একজন মা যিনি তার সন্তান হারিয়েছেন, আরেক সন্তানের থেকে দূরে আছেন—তিনি তো পারতেনই বলতেই যে, ‘ঠিক আছে, দেশ যাক গোল্লায়, আমি আমার ব্যক্তিগত শেষ সময়টা সন্তান আর নাতনিদের সঙ্গে কাটাই।’ কিন্তু তিনি করেননি।

সুতরাং, তিনি ইতোমধ্যেই এত বড় একটি কন্ট্রিবিউশন করেছেন। আমি আবারও বলছি, শেখ হাসিনা ক্রমাগত বিএনপির এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েই তাকে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে—অত্যাচার করতে হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে হয়েছে, গুম করতে হয়েছে, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করতে হয়েছে, গায়েবি মামলা করতে হয়েছে। এইভাবে তিনি দানবে পরিণত হয়েছেন, কারণ বিএনপি তাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। এই জিনিস কম্বোডিয়ায় হয়নি বলে হুন সেন খুবই মসৃণভাবে ক্ষমতায় থাকতে পেরেছেন এবং তার ছেলে চমৎকারভাবে দেশ চালাচ্ছেন।

সূত্রঃ https://www.facebook.com/share/v/12KAtpH1GGM/

ইমরান

×