
ছবি: সংগৃহীত
বগুড়ার প্রাচীন ও ঐতিহাসিক মহাস্থান গড়ে প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় সাধু-সন্নাসীদের এক বিশেষ মিলনমেলা। এই আয়োজনে জড়ো হন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা জটাধারী সন্ন্যাসী, সাধু-সন্ন্যাসিনী ও পথের ফকিররা। হাজারো সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষও এদিন মাজার জিয়ারত করতে ছুটে আসেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা ও মাজার ওরস।
মহাস্থান গড়ের প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলেমিশে যাওয়া এই মেলা বছরের পর বছর ধরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হবে আজ। তবে নানা ধর্মীয় ও লোকজ সংস্কৃতির আবহের মাঝেই এখানে গড়ে উঠেছে কিছু অপসংস্কৃতিরও স্থায়ী আসন। বিশেষ করে ওরস উপলক্ষে আগতদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই গাঁজা সেবনের রেওয়াজ চলে আসছে। এবার প্রশাসন বলছে, সে চিত্র পাল্টে যাবে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, ‘গাঁজা মাদক এবং সব ধরনের অসামাজিক ও ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ ঠেকাতে এবার আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। পুলিশ, র্যাব, আনসার ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে চার শতাধিক সদস্য মোতায়েন থাকবে পুরো এলাকায়।’
মাজার মসজিদ কমিটির তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই ওরসে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি, মাজার চত্বর ও আশপাশের এলাকায় বসে বৈশাখী মেলা। সেখানে শিশুদের খেলনা, খাবার, শীতল পাটি, বাঁশি, মাটির তৈরি পণ্যসহ নানা লোকজ সামগ্রী বিক্রি হয়।
শিকল বাবা ও বিস্ময়ের চিত্র এই আয়োজনের আরেকটি দৃষ্টিনন্দন ও কৌতূহলোদ্দীপক দিক হলো ‘শিকল বাবা’দের উপস্থিতি। বুধবার বিকেলে মহাস্থান মাযার এলাকায় দেখা মেলে এক শিকল বাবার, যিনি পুরো শরীরে শিকল পেঁচিয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে সময় কাটাচ্ছিলেন। তাকে ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে তাকে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন বলেও বিশ্বাস করেন।
শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুজ্জামান জানান, এসব লোকজ ধর্মবিশ্বাসকে সম্মান জানানো হলেও কোনোভাবেই যেন তার সঙ্গে মাদক বা অন্য কোনো অপরাধ যুক্ত না হয়, সে বিষয়ে তারা সতর্ক।
মহাস্থান গড়ের এই বার্ষিক ওরসের মূল আবেদন আধ্যাত্মিক। কিন্তু একে ঘিরে যাতে কোনো অসামাজিক চর্চা, বিশৃঙ্খলা বা ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড গড়ে না ওঠে, সেজন্য ধর্মীয় নেতারা আগেই আহ্বান জানিয়েছেন ভক্ত ও আগতদের সতর্ক থাকার জন্য।
নিরাপত্তার চাঁদরে মোড়ানো মহাস্থান
এবার গোটা এলাকা নজরদারিতে রাখতে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী সিসিটিভি, পুলিশ কন্ট্রোল রুম এবং র্যাবের মনিটরিং সেল। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতও তৎপর থাকবে বলে জানা গেছে। এই বৈশাখী মিলনমেলা শুধু উৎসব নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। প্রশাসনের কড়া নজরদারি এবং সচেতন অংশগ্রহণকারীদের সম্মিলনে এটি হতে পারে সত্যিকারের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক মিলনক্ষেত্র যেখানে থাকবে না কোনো গাঁজা, মাদক কিংবা অনৈতিকতার ছায়া।
মাহফুজ মন্ডল/রাকিব