
ছবিঃ সংগৃহীত
প্রায় ৭৫ বছরের বিনিয়োগভিত্তিক ক্যারিয়ারে বিশ্বের অন্যতম সফল ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃত বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে’র সিইও ও চেয়ারম্যান ওয়ারেন বাফেট শনিবার অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। ব্লুমবার্গের পরিসংখ্যানে তার নেট সম্পদ এই মুহূর্তে প্রায় ১৬৯ বিলিয়ন ডলার।
বাফেট তাঁর বিনিয়োগশৈলীতে ব্যবসাগুলিকে দেখা হয় এক বিরাট দুর্গের মতো, যেখানে দুর্গের ‘খাল’ শক্তিশালী কিনা, সেটি পর্যালোচনা করাই তাঁর মূল মাপকাঠি। দীর্ঘদিনের বন্ধু বিল গেটস ১৯৯৬ সালে Harvard Business Review-এ লিখেছিলেন, “বাফেট বলেন, ‘ভালো ব্যবসা হলো দুর্গ; প্রতিদিন ভাবতে হবে—খাল বাড়ছে নাকি সংকুচিত হচ্ছে?’”
কি দেখে মুল্যায়ন করেন বাফেট?
-
আন্তরিক মূল্য (Intrinsic Value)
কেবল শেয়ারের দাম নয়, বরং ধারাবাহিক আয়, স্থিতিশীল নগদ প্রবাহ ও স্বল্প ঋণের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে তিনি ‘আন্তরিক মূল্য’ নির্ধারণ করেন। তিনি বলেন, “অন্তর্নিহিত মূল্য সবই নগদ প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল; বিনিয়োগ এ কারণেই যে, ভবিষ্যতে নগদ প্রত্যাবর্তনের প্রত্যাশা থাকে।” -
বার্ষিক প্রতিবেদন অধ্যয়ন
কোম্পানির যতটা সম্ভব পুরনো প্রতিবেদন পড়ে তিনি বুঝতে চান—কিভাবে অগ্রসর হয়েছে, কৌশল কী এবং প্রতিযোগিতার চাপ কীভাবে মোকাবিলা করছে। -
দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি
সাময়িক উত্থান-পতনের ওপর নয়, বরং দশ—বিশ বছর আগেও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে এমন ফাউন্ডেশনিক ব্যবসার দিকে তাঁর নজর।
‘বোকারা’ চালাতে পারবে এমন ব্যবসা
বাফেটের মতে, “যে ব্যবসা এমনভাবে পরিচালিত, যে কোনো বোকাও চালাতে পারবে—কারণ একদিন অবশ্যই বোকা বসবে।” বিশেষ করে সে ব্যবসা যেগুলোতে আধিপত্য বা একচেটিয়া প্রভাব রয়েছে, যেমন—একটি শহরের একমাত্র সংবাদপত্র।
অবমূল্যায়িত সুযোগ খোঁজে
কখনও কখনও দুর্বল ব্যবস্থাপনা হলেও মজবুত মৌলিক দিক দেখে তিনি সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন, যেখানে নেতৃত্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে মূল্য ইনকিউবেট করার সুযোগ থাকে।
সংক্ষিপ্ত ও সচেতন কাজ
বাফেট “বিরল, তবে যথাযথ” প্রকৃতির। বাজারের অস্থিরতা তার নীতি ভেঙে দেয় না। ২০১৯ সালে পাঁচটি জাপানি কোম্পানিতে অবমূল্যায়িত অবস্থায় বিনিয়োগ ও পরবর্তীতে শেয়ার বাড়ানোর উদাহরণ তিনি সাম্প্রতিক বার্ষিক চিঠিতে তুলে ধরেছেন। “যেমন বছরগুলো পেরিয়ে গেছে, আমাদের সেই কোম্পানিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়েছে,” লিখেছেন তিনি।
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের এই দর্শন এবং ‘দুর্গের খাল’ নজরদারি বাফেটকে গড়ে তুলেছে বিনিয়োগের এক অবিস্মরণীয় কিংবদন্তিতে।
ইমরান