
ছবিঃ সংগৃহীত
ওমাহার নবী নামে খ্যাত ওয়ারেন বাফেট বিশ্বের অন্যতম সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত। প্রায় আট দশকের ক্যারিয়ারে তিনি তার সুনির্দিষ্ট বিনিয়োগ কৌশল এবং অর্থনৈতিক দর্শনের মাধ্যমে বাফেট-ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার নেতৃত্বেই বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে হয়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কর্পোরেট সাম্রাজ্য।
নিচে বাফেটের সেই ১০টি ধন-সৃষ্টির নীতিমালা তুলে ধরা হলো, যেগুলো অনুসরণ করে যেকোনো সাধারণ বিনিয়োগকারীও নিজের আর্থিক অবস্থান শক্তিশালী করতে পারেন।
১. নিজের বোঝার মধ্যেই বিনিয়োগ করুন – ‘সার্কেল অব কমপিটেন্স’
বাফেট বলেন, “ঝুঁকি আসে তখনই, যখন আপনি জানেন না আপনি কী করছেন।” তিনি সব সময় এমন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন যেগুলোর কার্যক্রম তিনি প্রকৃত অর্থে বোঝেন। যেমন, ১৯৯০-এর দশকে প্রযুক্তি খাতে না ঢুকে তিনি ডটকম বুদবুদের ক্ষতি এড়াতে পেরেছিলেন।
২. চমৎকার কোম্পানি কিনুন ন্যায্য দামে – ‘বাজারে দর কষাকষির পেছনে নয়’
বিনিয়োগ গুরু বেঞ্জামিন গ্রাহামের শেখানো সস্তা শেয়ার কেনার দর্শন থেকে বের হয়ে বাফেট বলেছেন, “চমৎকার কোম্পানি ন্যায্য দামে কেনা ভালো, সাধারণ কোম্পানি সস্তায় কেনার চেয়ে।” কোকা-কোলা, অ্যাপল, আমেরিকান এক্সপ্রেস– তার এই নীতিরই সফল উদাহরণ।
৩. দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি – ‘চিরদিনের জন্য রাখার মানসিকতা’
বাফেটের বিখ্যাত উক্তি: “আমাদের প্রিয় হোল্ডিং পিরিয়ড হলো চিরকাল।” অস্থির বাজারে লেনদেন না করে তিনি ভালো কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখার পক্ষপাতী। কোকা-কোলার ক্ষেত্রে তার ১৯৮৮ সালের বিনিয়োগই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
৪. ধৈর্য ও শৃঙ্খলা – সুযোগ না আসা পর্যন্ত নগদ ধরে রাখুন
বাফেট প্রচুর নগদ অর্থ হাতে রেখে অপেক্ষা করেন সঠিক সময়ের। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটে, যখন সবার হাতে টাকা ছিল না, তখন তিনি গোল্ডম্যান স্যাচসে ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। তিনি বলেন, “বিনিয়োগ হলো বেসবল খেলার মতো, এখানে স্ট্রাইক লাগে না—আপনি চাইলে অপেক্ষা করতে পারেন।”
৫. অন্তর্নিহিত মূল্য বোঝার ক্ষমতা – বাজার মূল্যের বাইরেও মূল্য আছে
“দাম হলো আপনি যা দেন, আর মূল্য হলো আপনি যা পান,” বাফেটের এই দর্শনের ভিত্তি হলো ভবিষ্যতের নগদ প্রবাহ হিসাব করে একটি কোম্পানির আসল মূল্য নির্ধারণ করা। এই মানসিকতা তাকে ‘অন্যেরা ভয় পেলে লোভী, আর অন্যেরা লোভী হলে ভয় পেতে’ শেখায়।
৬. ঋণ ও জুয়া এড়িয়ে চলা – নিরাপদ পথে ধন সঞ্চয়
বাফেট ব্যক্তিগতভাবে এবং তার কোম্পানির ক্ষেত্রেও সর্বদা ঋণ এড়িয়ে চলেন। তিনি মনে করেন, জটিল আর্থিক যন্ত্র এবং ঋণ অস্থিরতাকে ধ্বংসে রূপান্তর করতে পারে। তাই তিনি এমন ব্যবসায় পছন্দ করেন, যেগুলো অর্থনৈতিক মন্দার মাঝেও টিকে থাকতে পারে।
৭. আয় পুনর্বিনিয়োগ করুন – সুদের উপর সুদের জাদু
বাফেট বার্কশায়ারের মুনাফা লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ না করে পুনরায় বিনিয়োগ করেন। এই কৌশল দীর্ঘমেয়াদে চক্রবৃদ্ধি হারে সম্পদ বৃদ্ধির পথ তৈরি করে। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদেরও একই পথ অনুসরণ করা উচিত।
৮. নিরবিচারে পড়াশোনা করুন – জ্ঞানের সুদে বিনিয়োগ
বাফেট তার দিনের ৮০% সময় বই ও রিপোর্ট পড়ায় ব্যয় করেন। তিনি বলেন, “জ্ঞান সুদের মতো জমে।” তার বন্ধু চার্লি মঙ্গারও বলেন, “যে ব্যক্তি প্রতিদিন কিছু না কিছু শেখে না, সে নিজের মস্তিষ্ককে নষ্ট করছে।”
৯. বাজারের গুজব এড়িয়ে চলুন – সংবাদের নয়, ব্যবসার দিকে মন দিন
বাফেট বলেন, “স্টক মার্কেট হলো এমন একটি জায়গা, যা ধৈর্যশীলদের কাছ থেকে তাড়াহুড়োকারীদের কাছে টাকা স্থানান্তর করে।” সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ার অস্থির বার্তায় না ভেসে ব্যবসার মৌলিক ভিত্তির ওপর আস্থা রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
১০. সাদামাটা জীবন ও নিয়মিত সঞ্চয় – ধন-সৃষ্টির ভিত্তিপ্রস্তর
বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হয়েও বাফেট ১৯৫৮ সাল থেকে একই বাড়িতে বসবাস করেন। বিলাসবহুল গাড়ি বা ব্যক্তিগত বিমান কেনার প্রতি তার কোনো আগ্রহ নেই। তার মতে, “ব্যয় করার পর সঞ্চয় নয়; সঞ্চয়ের পর ব্যয় করুন।”
উপসংহার
ওয়ারেন বাফেটের এই ১০টি নীতিমালা দেখতে সাধারণ মনে হলেও, এর ধারাবাহিক ও সুশৃঙ্খল প্রয়োগই তাকে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। এসব নীতিমালার বিশেষত্ব হলো—এগুলো যেকোনো সাধারণ বিনিয়োগকারীও অনুসরণ করতে পারেন, যদি থাকে ধৈর্য, শৃঙ্খলা ও দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা।
সূত্রঃ https://www.newtraderu.com/2025/05/02/warren-buffetts-10-wealth-building-principles/
ইমরান