
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ
“একটি গুলি মাথায়, একটি গলায়, আরেকটি পিঠে। আমার কলিজায় তিনটি গুলি চালিয়ে আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমি কী অপরাধ করেছিলাম? আমার ছেলেকে কেন গুলি করে পাখির মতো হত্যা করা হলো?” কথাগুলো বলতে বলতে চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না আলেয়া বেগম। তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত শহিদ রাশেদুল হকের মা।
৫ আগস্ট ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন রাশেদুল। আন্দোলনের মিছিলে থাকা অবস্থায় পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর বটতলায় বড় ভাইয়ের বাসায় অবস্থান করতেন রাশেদুল। দর্জির কাজের খোঁজে ঢাকায় এসেছিলেন, জীবিকার তাগিদে। কিন্তু তার জীবন শেষ হয়ে যায় স্লোগানের ভিড়ে, রাস্তায় পুলিশের গুলিতে।
রাশেদুলের মা বলেন, “আমি আর কিছু চাই না। শুধু চাই আমার ছেলের হত্যার বিচার হোক। ইউনুস সরকারের কাছে একটাই দাবি—আমার বুকের ধনকে যারা কেড়ে নিয়েছে, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত যেন থেমে না যান।”
রাশেদুলের বড় ভাই আলমগীর জানান, “বিকেল তিনটার দিকে রাশেদুলের নম্বর থেকে ফোন আসে। ওপাশ থেকে জানতে চায়, আমি কি রাশেদুলের ভাই? বললাম, হ্যাঁ। তখন বলে, দ্রুত মেডিকেলে আসেন। গিয়ে দেখি ভাইয়ের নিথর দেহ পড়ে আছে।” আলমগীর বলেন, “আমি তাকে নিষেধ করেছিলাম মিছিলে যেতে। কিন্তু সে বলেছিল, অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলে মানুষ থাকা যায় না।”
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড চর কাঠগিরি গ্রামের বাসিন্দা রাশেদুল ছিলেন ভূমিহীন, নিম্ন আয়ের পরিবারের তৃতীয় সন্তান। তার বাবা বাচ্চু মিয়া বলেন, “ছেলেটা ছিল আমাদের সংসারের চালিকাশক্তি। ছোট ছেলের পড়াশোনা আর সংসারের খরচ তাকেই চালাতে হতো। ওকে হারিয়ে আমি নিঃস্ব। আমাদের এক টুকরো জমিও নেই।”
রাশেদুলের পরিবার জানায়, এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ঘোষিত কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা তারা পাননি। কেবল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা এবং জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
শহিদ রাশেদুল হকের পরিবার এখনো অপেক্ষায়—বিচারের, স্বীকৃতির, আর একটি স্বাভাবিক জীবনের। এক মায়ের কান্না শুধু ব্যক্তিগত বেদনা নয়, এটি রাষ্ট্রের কাছেও একটি প্রশ্ন—“কে দেবে আমার সন্তানের হত্যার জবাব?”
ফারুক