ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

কুষ্টিয়ায় বিএনপি কর্মী হত্যা মামলার প্রধান আসামী সাবেক পুলিশ সুপার গ্রেপ্তার

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া।

প্রকাশিত: ১৭:০৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৭:০৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

কুষ্টিয়ায় বিএনপি কর্মী হত্যা মামলার প্রধান আসামী সাবেক পুলিশ সুপার গ্রেপ্তার

ছবি:সাবেক পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত

কুষ্টিয়ার বিতর্কিত সাবেক পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাতকে বিএনপি কর্মী সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তানভীর আরাফাতকে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা খাতুনের আদালতে তোলা হলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে বুধবার বিকেলে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।

আজ ভোরে তাকে কুষ্টিয়ায় নিয়ে আসা হয়। উপ-পুলিশ কমিশনার তানভীর আরাফাত সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার খালিশপুর উপজেলায়। কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে আদালত চত্বরে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান জানান, সাবেক এসপি তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা রয়েছে। ২০১৯ সালে ১৩ সেপ্টেম্বরর বিএনপি কর্মী সুজন মালিথাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে কুষ্টিয়ার সাবেক এই পুলিশ সুপারের বিরদ্ধে। এ ব্যাপারে ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। প্রসঙ্গত, তানভীর আরাফাত কুষ্টিয়ায় দায়িত্ব পালনকালে ‘সবার হাত পা ভেঙ্গে দেয়া হবে’ ‘পিয়ারে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে’সহ নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে ওই সময় ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেন।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি শিহাবুর রহমান জানান, সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে ১৫ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০/১২ জনকে আসামি করে একটি মামলার রের্কড রয়েছে। মামলায় এসপি তানভীর প্রধান আসাসি। নিহত সুজন মালিথা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামের ইসমাইল মালিথার ছেলে। মামলার বাদী সুজন হোসেন কুষ্টিয়া শহরের মিললাইন এলাকার লালন শাহ সড়কের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, তার দলীয় ছোট ভাই বিএনপির সহযোদ্ধা সুজন মালিথা নিয়মিত বিএনপির বিভিন্ন প্রোগ্রামে উপস্থিত থেকে নেতাকর্মীদের উৎসাহ প্রদান করতেন। যার কারণে আসামিদের কাছে সুজন মালিথা শত্রু হিসেবে পরিণত হয়। তারা সুজনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তারই জের ধরে কুষ্টিয়া জেলা শহরে অনুষ্ঠিত বিএনপির প্রোগ্রামে শেষ করে রাতে নিজ বাড়িতে চলে যায়।

২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটে আসামিরা সকলে মিলে সুজনের বাসায় প্রবেশ করে এবং তাকে জোরপূর্বক তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। বাদী সুজন হোসেন দাবি করেন, পরবর্তীতে তিনিসহ ভিকটিমের পরিবারের লোকজন দীর্ঘক্ষণ খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানতে জানতে পারেন যে, ওই রাতেই ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৩০ মিনিটে কুষ্টিয়া শহরের মডেল থানার মোল্লাতেঘরিয়া পূর্ব ক্যানালের পাড়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সুজন এজাহারে দাবি করেন, পরে তিনিসহ সুজন মালিথার পরিবারের লোকজন আসামিদের কাছে উপস্থিত হয়ে সুজন মালিথাকে হত্যার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা কোনো সদুত্তর না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।

পরবর্তীতে একাধিকবার ওই ঘটনার বিষয়ে মামলা করার চেষ্টা করলে আসামিরা তাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখান। ঘটনার বিষয়ে এলাকার অনেকেই অবগত আছেন বলে দাবি সুজন হোসেনের। এ মামলার আসামিরা হলেন, কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম তানভীর আরাফাত, কুষ্টিয়া মডেল থানার সাবেক ওসি নাসির উদ্দিন, একই থানার সাবেক ওসি এ কে এম মিজানুর রহমান, ওই থানার সাবেক এসআই সাহেব আলী, এসআই মোস্তাফিজুর রহমান, কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ, সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, দৌলতপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান টোকন চৌধুরী, কুষ্টিয়া নাগরিক পরিষদের সভাপতি সাইফুদ্দৌলা তরুন, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মহিদুল ইসলাম, ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ আরিফুর হোসেন সজীব, কুষ্টিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কৌশিক আহমেদ ওরফে বিচ্চু, জেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি সোহাগ আলী। আসামিদের মধ্যে মাহবুবউল আলম হানিফ ও আতাউর রহমান আতাসহ সবাই পলাতক। কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ একই মামলায় জেলে রয়েছেন।

সাইদ

×