গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে পানি জমে রয়েছে
যশোরের ভবদহ এলাকার ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় অভয়নগর উপজেলায় ২০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া পানির তীব্র স্রোতে ভেসে গেছে কয়েকশ’ মৎস্য ঘের। এতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি জলাবদ্ধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি-ঘরের উঠানে পানি থাকায় পরিবারের লোকজন ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় কাজে ঘরের বাইরে বের হতে পারছে না নারী ও শিশুরা। ফলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গবাদিপশু, হাঁস, মুরগি নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পানিবন্দি এলাকার মানুষ। জলাবদ্ধ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে কোটা, চলিশিয়া, বাগদাহ, আন্ধা, বলারাবাদ, বেতভীটা এবং স্বরখোলা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অভয়নগরের শ্রীনদীর ওপর পাকিস্তান আমলে নির্মিত ২১ ভেন্ট, ৯ ভেন্ট ও ৬ ভেন্টের স্লুইচ গেট দিয়ে পানি বের হতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ২১ ভেন্টের ওপর ১৩টি, ৯ ভেন্টের ওপর ৫টিসহ ৪টি পাওয়ার পাম্প। বর্তমানে ৩টি পাম্প ও ৪টি মোটর সচল আছে। বৃষ্টির পানি ও উজানের পানির চাপ জলাবদ্ধতা নিরসনের অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে। বিগত সরকারের আমলে স্লুইচ গেট বন্ধ করে তার ওপর বৈদ্যুতিক পাম্প ও মোটর স্থাপন করে নদীর পানি নিষ্কাশনের বিকল্প উপায় তৈরি করা হয়। তবে, বর্তমানে বিকল্প ব্যবস্থাও অচল হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে পানি সরানোর সব পথ।
সত্তরের দশকে যে স্লুইচ গেট আশীর্বাদ হয়ে সাগরের নোনা পানি থেকে ফসল রক্ষার কবচ হয়েছিল তা আশির দশক থেকে অভিশাপ হিসাবে দেখা দিতে থাকে। এ অঞ্চলে প্রবাহিত টেকা-হরি-শ্রী-মুক্তেশ্বরী-ভদ্রা নদীর উৎস বা মুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় জোয়ারের সময় সাগর থেকে বয়ে আসা পলি নদী-খালে জমতে থাকে। শেষ অবধি ভরাট হয়ে নদী-খালের বুক বিলের থেকে উঁচু হয়ে যায়। দাবি ওঠে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) অর্থাৎ জোয়ারাধার ব্যবস্থার। জোয়ারের সময় উঠে আসা পলি বিলে পতিত হবে আর বিল উঁচু হলে সহজেই নদীর বুক দিয়ে পানি প্রবাহ ঠিক থাকবে। সেই সঙ্গে সংযুক্ত নদী-খাল খনন কর্মসূচি চলবে। কোটা গ্রামের হোসেন দ্বীপের বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, আমরা গত কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। সকালে শুকনা উঠান দেখে রান্না করতে গিয়ে দেখি চুলাই পানি উঠে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র থেকে জানা যায়, ভবদহ ২১ ভেন্ট স্লুইচ গেট হয়ে শ্রী ও হরিনদীর পানি নিষ্কাশিত হতো। বছরের পর বছর টিআরএম চালু না থাকায় নদী দিয়ে আর পানি সেভাবে আগের মতো প্রবাহিত হচ্ছে না। শ্রীনদীর পাড়ের বাসিন্দা নরেশ বৈরাগী জানান, জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়েই চলেছে। এক/দেড় ফুট উচ্চতা বাড়লেই এ অঞ্চলের জনপদ যেমন ডুবে যাবে তেমনই ফসলি খেত আর মাছের ঘের তলিয়ে গিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হবে।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আবু নওশাদ বলেন, পানি নিষ্কাশনে ইতোমধ্যে নেটপাটা ও কচুরিপানা অপসারণ করা হয়েছে। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার জানান, খুব শীঘ্রই সমাধানকল্পে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পানি অপসারণের দাবি
নিজস্ব সংবাদদাতা নওয়াপাড়া,যশোর থেকে জানান, যশোরে অভয়নগরের ভবদহপাড়ের অসংখ্য মানুষের বাড়িতে পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকায় পড়েছে ভাটা। বিশেষ করে শিশু,নারী ও বৃদ্ধদের জীবন কাটছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। এলাকাবাসী পানি অপসারেেণর দাবি জানিয়েছে।
এ বছর অভয়নগরসহ আশপাশের ৫ টি উপজেলায় বৃষ্টি ও জোয়ারের জল বৃদ্ধি পেতে থাকে।
গেল এক সপ্তাহে বিভিন্ন নদ-নদী,খাল দিয়ে এ পানি বের হতে পারে না। টেকা, ভৈরব, মুক্তেশ্বরী, হরি ও শ্রী নদীর পানি উপচে পড়ে উপকূলে। অধিকাংশ খাল,নালা আটকে অপরিকল্পিত মাছের ঘের করায় পানির প্রবাহ আটকে যায়। পানি আটকে রাখার স্বার্থে অসাধু কিছু ঘের মালিক বিভিন্ন কালভার্ট ও খালের মুখে বালিভর্তি বস্তা দিয়ে আটকে ফেলায় পানি অপসারণের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সেই কারণে বিল-খালের নেটপাটা সরিয়ে ফেললেও পানির প্রবাহ সৃষ্টি হচ্ছে না। পানিও বাড়িঘর থেকে নামতে পারছে না। ইতোমধ্যে সুন্দলী, হাটগাছা, সুজাতপুর, ফুলেরগাতি, ডাঙ্গা মশিয়াহাটী, বেদভিটা, পায়রা, ফকিরহাট, বারান্দি, চোমরডাঙ্গা, রাজবংশিপাড়া, বলারাবাদ,আন্ধা এলাকার শত শত পরিবার পানিতে আটকে রয়েছে।