ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১

চট্টগ্রামে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ

মানুষের আস্থা না ফেরা পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার দেখতে চাই

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মানুষের আস্থা না ফেরা পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার দেখতে চাই

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘি ময়দানে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মতবিনিময়

যতদিন না পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানুষের আস্থা ফিরে আসছে ততদিন আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেখতে চাই। পুলিশ যদি জনমুখী না হয়ে ক্ষমতামুখী হয় তাহলে বেনজীর-হারুনের মতো অবস্থা হবে।
রবিবার বিকেলে চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত ছাত্র-নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে হাসনাত বলেন, আপনারা যদি ভেবে থাকেন, গোস্সা করে বসে থাকবেন, অফিস আদালতে কাজ করবেন না, তাহলে ভুল ভাবছেন। এ আন্দোলন যারা পরিচালনা করেছে তাদের মধ্যে কুলি, কামার ও মুচি ছিল। ঠিক একইভাবে এ আন্দোলনে শিক্ষিত শ্রেণি ছিল। সুতরাং আপনাদের রিপ্লেসমেন্টও হয়ে যাবে। 
তিনি বলেন, পুলিশ ভাইদের আহ্বান জানাই, ছাত্র-পুলিশ ভাই ভাই। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। আমরা বলতে চাই, আপনারা কাজে ফিরে আসুন। আপনাদের মধ্যে কারা খুনি এবং দোসর ছিল সবই কিন্তু আমরা জানি। সব পুলিশ কিন্তু বেনজীর না, সব পুলিশ কিন্তু ডিবি হারুন না। আমার বাবা, আমার ভাই তারাও কিন্তু পুলিশ। সুতরাং পুলিশকে আমরা সহযোগিতা করব। রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে যারা বর্তমানে মাঠে রয়েছে তাদের প্রতিপক্ষ না ভেবে সহযোগী ভেবে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাব। 

পুলিশের প্রতি বার্তা দিতে চাই উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, দেখেন বেনজীর কিন্তু দেশে থাকতে পারেনি। ডিবি হারুন ভালো নেই। সুতরাং আপনারা জনমুখী না হয়ে যদি ক্ষমতামুখী হন তাহলে আপনাদের অবস্থাও বেনজীর ও হারুনের মতো হবে। 
উপস্থিত ছাত্র-জনতাকে সতর্ক করে জানান, প্রভু চলে গিয়েছে। কিন্তু প্রভুর যে দাসরা আছে, তারা কিন্তু আমাদের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে। এ দাসরা বিভিন্নরূপে আমাদের মাঝে আসবে। আমাদের ইউনিটি ভাঙতে চাইবে। আপনাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমরা যেভাবে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর স্বার্থকে সামনে রেখে কাজ করেছি, একইভাবে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের বিভাজন করেছে।

বিভাজনের রাজনীতি বিদ্যমান রেখে তারা ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। আপনারা দেখবেন, তারা সবসময় আমাদের বিভাজন করেছে, কারা দাড়িওয়ালা কার দাড়ি নেই। কারা মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, কারা মাদ্রাসা শিক্ষার্থী না। ফ্যাসিজম পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা ইনসাফ কায়েম করেছি, মন্দিরে যখন হামলা হয় তখন মন্দিরগুলোকে পাহারা দিয়েছে দাড়ি টুপিওয়ালারা। আমাদের সবার প্রথম পরিচয় আমরা বাংলাদেশী। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমরা যে বন্যায় স্থাপন করেছি তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

যেভাবে শিক্ষার্থীরা, সকল শ্রেণি পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে, সেটির মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের বারবার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ভয় দেখিয়েছে, বিভেদ করেছে। আমরা আপনাদের কাছে প্রতিশ্রুতি নিতে চাই উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, আমাদের কেউ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ভয় দেখাতে পারবে? আমাদের কি আর বিভাজনের রাজনীতিতে নিতে পারবে? কখনো আর ভাগ করতে হবে? 
তিনি আরও জানান, রাষ্ট্রে যখন সংকট হয়েছে তখন সম্প্রীতি বেশি গভীর হয়েছে। যত বড় রাজনৈতিক হামলা হয়েছে, তত বেশি ঐক্য হয়েছি। পুলিশের সঙ্গে কোনো বিভেদ নেই। আপনারা রাস্তায় ফিরে আসুন। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে আমরা আপনাদের সহযোগী হিসেবে সবসময় পাশে থাকব। উপস্থিত এখানে যেসব শিক্ষার্থী আছেন তারা এ প্রজন্মের মানুষ।

আপনাদের কাছে আহ্বান থাকবে, আপনারা গত এক মাস যে পোস্ট দিয়েছেন কেউ কি আপনাদের মেসেজে লিখেছে যে, পোস্ট দিলে তোর সমস্যা হবে? এ কথা কি আপনাকে বলেছে? এখন কি আপনারা প্রশ্ন করতে পারছেন? ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে পারছেন? দ্বিমত প্রকাশ করতে পারছেন নাকি সবসময় সহমত প্রকাশ করতে হয়?
তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান থাকবে, এ স্বাধীনতা যদি অক্ষুণœ রাখতে চান, আপনাদের সবসময় এক থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের যদি বিভক্ত করে দেওয়া যাবে তখন নতুনভাবে ফ্যাসিজম আসবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা কিন্তু একজন না, যে কোনো সময় নতুনরূপে আবার ফ্যাসিস্ট আসতে পারে। মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা অর্জন সহজ, রক্ষা কঠিন। আমাদের একটি আন্দোলন শেষ হয়েছে, তবে স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন চলবে। 
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, অন্তর্বর্তী সরকার কতদিন থাকবে? আমরা বলতে চাই- যতদিন না পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ, শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা; মানুষ যেখান থেকে নাগরিক অধিকার ভোগ কওে সেগুলোতে না যতদিন পর্যন্ত মানুষের আস্থা ফিরে আসছে ততদিন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা দেখতে চাই। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে পরিবর্তন দেখতে চাই।

এ পরিবর্তন যখন আসবে, এ পরিবর্তনটিকে ধরে রাখার জন্য নির্বাচন দিয়ে তখন নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হোক। আমরা এমন এক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চাই যেখানে আমাদের প্রেসিডেন্ট যেই চিকিৎসা নেবে, একজন রিক্সাচালকের ছেলেও একই চিকিৎসাও পাবে। নিয়ম করে দেওয়া হোক, এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা হোক যারা সরকারি চাকরি করেন তাদের সন্তান যেন যেসব স্কুলে বাধ্যতামূলক পড়াশোনা করে।
আমাদের বারবার প্রশ্ন করা হয় বিকল্প কে? তখন উপস্থিত সকলে বলে ‘আমরা’। তখন হাসনাত বলেন, আমাদের এ ঐক্য ধরে রাখতে হবে। আমরা ক্ষমতাকে প্রশ্ন করব। সরকারকে কীভাবে জনমুখী রাখা যায় সেটির জন্য আমরা কাজ করব। শিক্ষার্থীদের জন্য চাওয়া পাওয়ার নাই, রাষ্ট্রকে দেওয়ার রয়েছে। পিছু টান নেই আমাদের।

পরিবার আছে, কিন্তু পরিবারের বন্ধন ছিন্ন করে আমরা বাংলাদেশ নামে যে মাটি রয়েছে তার প্রায়োরিটি আমার জন্মদাতা মায়ের চেয়ে বেশি। সুতরাং রাষ্ট্র সংস্কার, রাষ্ট্র পুনর্গঠন যতদিন না পর্যন্ত আমাদের প্রত্যাশিত পর্যায়ে হয় এ ছাত্র-নাগরিকের যে বন্ধন রয়েছে তা অক্ষুণœ থাকবে। 
চবির অনুষ্ঠানে হট্টগোল ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর অনুষ্ঠানে ব্যাপক হট্টোগোলের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অডিটরিয়ামে এ ঘটনা ঘটে। 
জানা গেছে, এটি ছিল কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি মতবিনিময় সভা। মতবিনিময়ের একপর্যায়ে জগলুল আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী কথা বলতে গেলে মঞ্চে থাকা একজন তাকে এবং যারা জগলুলের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করছিলেন তাদের দালাল আখ্যা দেন। 
এর পরপরই শুরু হয় হট্টোগোল। এ সময় জগলুলের ওপর চড়াও হন মঞ্চে থাকা ওই ব্যক্তির সমর্থনকারীরা। এরপর দু’পক্ষের মধ্যে বাগবিত-ার একপর্যায়ে মৃদু হাতাহাতিও হয়। পরে ছাত্র আন্দোলনে শহীদ এক শিক্ষার্থীর বাবার বক্তব্যের ভেতর দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

×