মানিকগঞ্জের ঘিওরে বৈলট গ্রামে হারভেস্টার কম্পাইন্ড দ্বারা বোরো ধান কাটা হচ্ছে
ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ধীরে ধীরে প্রযুক্তির কল্যাণে চাষাবাদে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। বর্তমান সরকার কৃষককে ভতুর্কির মাধ্যমে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে। সময়ের বিবর্তনে গ্রামবাংলার কৃষকের ঐতিহ্যবাহী লাঙল-জোয়াল, মই আর হালের বলদ এখন বিলুপ্তির পথে। জমি চাষই নয়, জমিতে নিড়ানি, সার ও কীটনাশক ছিটানো, ধান কাটা-মাড়াই ও ধান শুকানোর কাজে ব্যবহার হচ্ছে অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। ফলে এলাকার দরিদ্র কৃষকের সকল প্রকার ফসল চাষাবাদ করতে সময় কম লাগছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে ধান, সরিষা, ভুট্রা, পাটসহ বিভিন্ন ফসলেরও উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। অনেক সাধারণ কৃষকের ভাগ্যের চাকা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পর্যায়ক্রমে কৃষিক্ষেত্রে ঘটছে ব্যাপক বিপ্লব।
উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষি জমিতে ধান কাটা, ধান রোপণ করা, জমিতে সেচ দেওয়া, ভুট্রা মাড়াই করার কাজেও আধুনিক সকল প্রকার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে আধুনিক পদ্ধতিতে সকল প্রকার চাষাবাদ। একদিকে কৃষকের খরচ কম হচ্ছে, অপরদিকে সময় লাগছে একেবারেই কম। হারভেস্টার কম্বাইন্ড দ্বারা জমিতে স্বল্প সময়ে শত শত একর জমির ধান কাটা হচ্ছে দ্রুত সময়ে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করায় এখন নিড়ানি কিংবা আগাছা দমনে শ্রমিকদের প্রয়োজন কমে যাচ্ছে। তারা অতি সহজে পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষাবাদ করছেন। কৃষকের মাঝে আনন্দ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
সরকারের কৃষি যন্ত্রপাতিতে উন্নয়ন সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের আওতায় তিনটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলার পয়লা এবং বড়টিয়াতে তিনটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার বিতরণ করা হয়েছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাজেটের আওতায় উন্নয়ন সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বরাদ্দকৃত দ্বিতীয় কম্বাইন্ড হারভেস্টার ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য আধুনিক মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে অর্ধেক ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষককে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের আধুনিক মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। এই মেশিনের মাধ্যমে কৃষক অতি সহজেই জমির ধান মাড়াই ও বস্তাবন্দি করতে পারবেন। এতে তাদের সব কিছুই সাশ্রয় হবে।
উপজেলার কাহেতারা গ্রামের কৃষক সাবেক ইউপি সদস্য নূরু মিয়া জানান, জমিতে চাষাবাদে এখন আর কাঠের লাঙল ব্যবহার করা হয় না। লাঙলের জায়গায় এখন ব্যবহার হচ্ছে ট্রাক্টর। আগাছা দগন, বীজ বপন ও ফসল কাটতে সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় ও শ্রমিক প্রয়োজন হতো। দ্বিগুণ টাকা দিয়ে শ্রমিক এনে জমিতে কাজ করাতে হতো। কৃষাণ দিয়ে এক বিঘা জমির ধান কাটতে আগে প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হতো। আর বর্তমানে রিপার দিয়ে কাটতে প্রতি বিঘায় খরচ হয় ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। সময় লাগে কম এবং টাকা খরচ হয় কম। ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ করতে প্রতি বিঘায় জমিতে ৫শ’ ৫০ টাকা দিতে হয়। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন এলাকার সাধারণ কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, প্রতিটি কম্বাইন্ড হারভেস্টারের দাম ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা । সরকার ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। আর কৃষককে দিতে হচ্ছে বাকি ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বোরো আবাদ হয়েছে বেশি। পর্যায়ক্রমে আরও মেশিন বিতরণ করা হবে বলে তারা জানায়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মাজেদুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলাতে মোট সাতটি ইউনিয়নে বোরো আবাদ হয়েছে উফশী ৫ হাজার ৫শ’ ৫০ হেক্টর এবং হাইব্রিড ১৫শ’ ১৫ হেক্টরসহ মোট ৭ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে। গত বছর ৬ হাজার ৬শ’ ১৫ হেক্টর জমিতে বোরো এবং আউশ ৩শ’ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছিল। শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় উপজেলায় কৃষকের সুবিধার্তে এই দুটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন কৃষককে দেওয়া হয়েছে।