ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

দেশী-বিদেশী অস্ত্র ও গ্রেনেড উদ্ধার

উখিয়ায় আরসার কমান্ডারসহ গ্রেপ্তার ২

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার/ সংবাদদাতা, উখিয়া

প্রকাশিত: ০০:২৭, ১৬ মে ২০২৪

উখিয়ায় আরসার কমান্ডারসহ গ্রেপ্তার ২

উখিয়া থেকে গ্রেপ্তার আরসার কমান্ডার ও তার সহযোগী

উখিয়ার গহীন পাহাড়ে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু দেশী-বিদেশী অস্ত্র ও গ্রেনেড উদ্ধার করেছে র‌্যাব। বুধবার ভোররাতে হাকিমপাড়া আশ্রয়শিবিরের পশ্চিমে দুর্গম লাল পাহাড়ে এ অভিযান শুরু হয়। এসময় আরসা কমান্ডার মাস্টার সলিমুল্লাহ এবং তার সহযোগী মো. রিয়াজকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা দুজনই মিয়ানমারের নাগরিক।
র‌্যাব সূত্র জানায়, জননিরাপত্তার কারণে সেনাবাহিনীর বম্ব ডিস্পোজাল ইউনিটের একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে দুপুর ১টার দিকে উদ্ধার বিস্ফোরক, গ্রেনেড, আইইডি এবং রকেট শেল ধ্বংস করে। দুপুরে ঘটনাস্থল উখিয়ার গহীন পাহাড়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচাক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম এ তথ্য জানিয়ে বলেন, বুধবার ভোররাতে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২০ এক্সটেনশনের পাশের ক্যাম্পসংলগ্ন লাল পাহাড়ে র‌্যাবের একটি টিম আরসার আস্তানায় অভিযান চালায়।

এ সময় ৩টি রাইফেল, ৫টি গ্রেনেড, ১০টি দেশে তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, একটি বিদেশী রিভলভার, ৯টি নাইন এমএম পিস্তল, একটি এলজি, ৩টি কার্তুজ ও ১৩টি ককটেল উদ্ধার করে। পরে পালিয়ে যাওয়ার সময় আরসা কমান্ডার মাস্টার সলিমুল্লাহ ও তার সহযোগী রিয়াজকে গ্রেপ্তার করা হয়। কমান্ডার আরাফাত আরও জানান, বেশ কিছু দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝিসহ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে গুলি করে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। তারই ধারাবাহিকতায় সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে উখিয়ার ক্যাম্পসংলগ্ন গহীন পাহাড়ে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার আস্তানার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে অভিযান শুরু হয় এবং পুরো লালপাহাড় ঘিরে ফেলা হয়। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা গুলি করা শুরু করে। এরপর র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে আস্তানা থেকে ওই আগ্নেয়াস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়। 
বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থল উখিয়ার লালপাহাড়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল গেছে। এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, আরসার এই দুই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যা, ডাকাতি, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

মাস্টার সলিম বর্তমানে বাংলাদেশে আরসার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বে আশ্রয়শিবিরগুলোতে আবারও আরসার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে। এ জন্য পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে অস্ত্র গোলাবারুদ সংগ্রহ করে তারা রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাস সৃষ্টি করছে। মাস্টার সলিম উখিয়ার বালুখালী (ক্যাম্প-১৫) আশ্রয়শিবিরে আশ্রিত সৈয়দুল আবেরার ছেলে এবং সহযোগী মো. রিয়াজ বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮) এ-২৩ ব্লকের আশ্রিত মোহাম্মদ নুরের ছেলে।

র‌্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাস্টার সলিম ২০১৭ সালের মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৫) বসবাস শুরু করেন। আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আরসা নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ায় মাস্টার সলিমকে আরসার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সলিমের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। রিয়াজের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। 
র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, মাদক চোরাচালান, আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ এবং আধিপত্য বিস্তারের জন্য আরসার সদস্যরা উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে নানা অপরাধে জড়ায়। এর মধ্যে মুক্তিপণের জন্য অপহরণসহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও রয়েছে। সর্বশেষ সোমবার ভোরে উখিয়ায় ৪ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে হেড মাঝি মোহাম্মদ ইলিয়াসকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে আরসা সন্ত্রাসীরা।

ইলিয়াস ওই আশ্রয়শিবিরের সি-৩ ব্লকের আবুল কাশেমের ছেলে। এর আগে ৬ মে আরসা সন্ত্রাসীরা ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৮) রোহিঙ্গা নেতা জাফর আহমদকে। আগের দিন উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে আরসা সন্ত্রাসীরা গলা কেটে হত্যা করে আরএসও সদস্য নুর কামালকে। 
র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় ২০২১ সালে রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে আরসা সন্ত্রাসীরা। ২০২২ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযান চালাতে গিয়ে আরসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। র‌্যাবের তথ্যমতে, আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ঘটনায় ২০২৩ সালে ৬৪ জন এবং ২০২৪ সালের ১৪ মে পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ মাসে ১৬ জন খুন হয়েছেন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে।

×