ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আজিজ মার্কেটের পাঞ্জাবির চাহিদা অর্ধেকে নেমেছে

আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ০০:০৪, ২৯ মার্চ ২০২৪

আজিজ মার্কেটের পাঞ্জাবির চাহিদা অর্ধেকে নেমেছে

পাঞ্জাবি ও টি-শার্ট মানেই আজিজ সুপার মার্কেট

পাঞ্জাবি ও টি-শার্ট মানেই আজিজ সুপার মার্কেট। রং ও বৈচিত্র্যময় পাঞ্জাবির জন্য রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের সুনাম সবারই জানা। আরামদায়ক কাপড়ের খোঁজে সব ধরনের উৎসবে এই মার্কেট ঘিরে ক্রেতাদের ভিড়ও লেগে থাকে। কিন্তু এ বছর মার্কেটের শোরুমগুলোতে ঈদকেন্দ্রিক চিরচেনা দৃশ্য খানিকটা পাল্টে গেছে। পাঞ্জাবির জন্য আজিজের যে চাহিদা ছিল, তা এবার  নেমেছে অর্ধেকে।

অবশ্য টি-শার্টের চাহিদা আগের মতোই আছে। মার্কেটের দোকানিরা জানান, পাঞ্জাবির বৃহৎ পাইকারি বেচাকেনা হয় মোহাম্মদপুরে উর্দু সড়কে। এর পরই ব্যবসায়ীদের গন্তব্য ছিল আজিজ সুপার মার্কেট। এবার সেখানেও পাইকারি (হোল সেল) বিক্রি কম হয়েছে। এক সময় মহানগরীর প্রায় অধিকাংশ যুবক পাঞ্জাবি কিনতে এই মার্কেটে ভিড় করতেন।

এখন প্রতিটি এলাকায় বড় বড় শপিং মল ও ব্র্যান্ডের কাপড়ের আউটলেট রয়েছে। সময়ের অভাবে তাই আর আজিজে আসা হয় না। যে কারণে এখন উত্তরা ও মিরপুর থেকে পাইকারিতে পাঞ্জাবি বিক্রি হয়। তবে এখনো ঈদের ১২-১৩ দিন বাকি। অনেক ব্যবসায়ীর প্রত্যাশা, এর মধ্যেই কেনাবেচা লাফিয়ে বাড়বে।
আজিজ মার্কেটে ইফতারির পর ক্রেতার চাপ বেশি থাকে বলে বিক্রেতারা জানান। দোকানগুলোতে মূলত পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করা হয়। সব সময় খুচরার চেয়ে পাইকারি কেনাবেচা বেশি হয় এখানে। যে কারণে এই মার্কেটে এক চালানে বিক্রি-বাট্টা শেষ। এবার শুরু হয়েছে খুচরা বেচাকেনা। বিক্রেতাদের আশা, ২০ রোজা থেকে পুরোদমে কেনাবেচা শুরু হবে।
এবার পাঞ্জাবির মধ্যে সিকোয়েন্স সবার নজর কেড়েছে। এই ধরনের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে চার হাজারে। ব্যাম্বো সিল্ক পাঞ্জাবিরও দুই ধরনের বিক্রি হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে দুই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। সুতি প্রিন্ট পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-২০০০ টাকায়। এ ছাড়াও পাকিস্তানি কাপড়, ভারতীয় কাপড় ও  দেশী কাপড়ের পাঞ্জাবিরও চাহিদা রয়েছে। অনেক শোরুমে বাবা ও ছেলে একসঙ্গে পাঞ্জাবি কিনতে এসেছে। ছোটদের পাঞ্জাবির সাইজ বেশি থাকায় অনেক শোরুমেই এসব পাঞ্জাবি রাখেনি। তবে যেসব কাপড়ের শোরুমে বাচ্চাদের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে কালেকশন ভালো। সুতি কাপড়ে বিভিন্ন নকশার পাঞ্জাবির আগ্রহ বেশি শিশুদের।
বৃহস্পতিবার ১৭তম রোজার দিনে আজিজ মার্কেটের দুই তলার উইন্ড বন্ড শোরুমে ক্রেতা দেখা যায়নি। দরজা খুলতেই কথা হয় স্বত্বাধিকারী খালেদ রাজুর সঙ্গে। তিনি জানান, অন্যবারের চেয়ে পাইকারি কেনাবেচা ৫০ ভাগ কমেছে। গতবার যে ক্রেতার কাছে এক লাখ টাকার পাঞ্জাবি বিক্রি করেছি, এবার তা ৫০ হাজারে নেমেছে। অনেক পরিচিত ক্রেতা দেখাই করেনি। কিন্তু টি-শার্টের চাহিদা আগের মতোই আছে।

কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, ছয় পিস পাঞ্জাবিও কারখানায় অর্ডার দিয়ে তৈরি করা যায়। কিন্তু টিশার্ট ১০০ পিসের নিচে করা যায় না। এর ফলে পাইকারি কেনার জন্য এখনো ক্রেতাদের আজিজেই আসতে হয়। ফলে টি-শার্টের বিক্রি এখন বেশ ভালো।
আজিজ সুপার মার্কেটের স্টাইল শোরুম। বাইরে লেখা ‘এখানে এক হাজার টাকায় নির্দিষ্ট পাঞ্জাবি পাওয়া যায়’। দোকানের কর্মচারী মো. রিপন মোল্লা কম্পিউটারে ভিডিও দেখায় ব্যস্ত। ক্রেতারা আসতেই ভিডিও বন্ধ করছেন। কর্মচারীকে দরজা খুলতে ইশারা দিচ্ছেন। ক্রেতারাও দেখছেন, এরপর চলে যাচ্ছেন। রিপন জনকণ্ঠকে জানান, এবার হাতে কাফওয়ালা পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। এ ছাড়াও পাকিস্তানি ব্যাম্বো সিল্কেরও চাহিদা রয়েছে।

তবে বাজারে বিক্রি বেশি সিকোয়েন্সের। আর্টিজানের বিক্রেতা মো. তৌসিফ জানান, এবার সিকোয়েন্সের ২১ ডিজাইনের পাঞ্জাবি এসেছে। প্রতিটি পাঞ্জাবি রঙে চমৎকার। যে কারণে তরুণদের এই পাঞ্জাবির প্রতি আগ্রহটাও বেশি। মধ্য বয়সী ও বৃদ্ধরা এক রঙের ও প্রিন্টের পাঞ্জাবি বেশি নিচ্ছেন। এ ছাড়াও দোকানে ইন্ডিয়ান কাপড়ের ম্যাগনেট শার্ট ও চাইনিজ গেঞ্জির চাহিদা বেশি।
আজিজ মার্কেটের দোতলায় আব্রু শোরুম। বিক্রেতা জাহিদুল ইসলাম জানান, দুপুর ১২টার পর ক্রেতার চাপ বেশি থাকে। এরপর তা কমে যায়। ফের চাপ বাড়ে ইফতারির সঙ্গে সঙ্গে। এবার দাম খানিকটা বেশি। যার জন্য শ্রম, খরচ বৃদ্ধি, কাপড়ের দাম বেড়ে যাওয়াসহ অন্তত ছয় কারণ জানান। এবার পাইকারি বিক্রি হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি। কারণ হিসেবে জানান, অনলাইনে পাঞ্জাবির বড় বাজার। মার্কেটের ভাড়া ও কর্মচারী খরচ দিয়ে লাভ একটু বেশি রাখতে হয়। অনলাইনে ১০০ টাকা লাভ রেখেও বিক্রি করা যায়।
কিন্তু অনলাইন কেনাবেচার প্রভাব মানতে নারাজ আরেক ব্যবসায়ী। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, দশ দোকান দেখে কেনার মজা ও অভিজ্ঞতা ভিন্ন। এটি অনলাইনে সম্ভব হয় না। পাইকারি বিক্রির কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, লোকাল পর্যায়ে অনেকে আগে কেনেনি মার্কেট বোঝার জন্য। আমার মনে হয় এখনো পাইকারি বিক্রির সময় রয়েছে।

দুই তলার একটি শোরুমের নাম ফিদা। দোকানটিতে দুই ধরনের বেচাকেনা হচ্ছে। কেউ পাইকারি কিনছেন, কেউ আবার কাপড় কিনে বানিয়ে বিক্রি করছেন। ফিদা শোরুমের স্বত্বাধিকারী রিজভী ইসলাম জানান, অন্যদের কেমন বেচাকেনা হচ্ছে জানি না। যার কালেকশন ভালো তার বেচাকেনা ভালো হতে পারে।

×