ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ০০:০৯, ১ মার্চ ২০২৪

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে আগামী বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাখার দাবি জানান প্রকাশকরা

রাজধানীতে আরও কত উৎসব অনুষ্ঠান চলছে এখন! চলতে চলতে শেষও হচ্ছে। তবে অমর একুশে বইমেলা যেন আর শেষ হতে চায় না। বাঙালির আবেগ-আগ্রহ একই রকম আছে এখনো। রীতি মেনে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন মেলা শুরু হয়েছিল। তার পর থেকে চলছে। এখনো আয়োজনটি নিয়ে আলাদাভাবে মেতে আছে বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা। বৃহস্পতিবার মেলা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সময় আরও দুই দিন বাড়ানোর কারণে মেলা গড়িয়েছে কাল শনিবার পর্যন্ত।

সময় বাড়ানোয় সংশ্লিষ্টদের অধিকাংশই খুশি। বিশেষ করে প্রকাশকরা ছুটির দুই দিন বিপুল বই বিক্রি হবে বলে আশা করছেন। বেশ কয়েক প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলে এমন আশাবাদের কথা জানা যায়। ২৯তম দিনে বৃহস্পতিবার মেলা ঘুরে দেখা গেছে, বাস্তবেও বই কেনার দিকে মন দিয়েছেন পাঠক। এখন ভিড় থাকলেও, সেটা বই কেনার প্রয়োজনে। অযথা ছবি তোলা, জটলা পাকানো কিছুটা কমেছে। প্রকৃত পাঠক ব্যস্ত হয়েছেন বই সংগ্রহে। এদিন বহু পাঠক পাওয়া গেল যারা বাসা থেকে বড় ব্যাগ নিয়ে এসেছিলেন। বই ভর্তি করে তবেই মেলা ছেড়ে গেছেন দেখা গেছে এমন দৃশ্যও। 
আগামী মেলার স্থান নিয়ে ধুয়াশা ॥ অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ আগামী শনিবার শেষ হচ্ছে। তবে এরই মাঝে সামনে চলে এসেছে আরেকটি খবর। খবর অনুযায়ী, ২০২৫ সালের বইমেলা অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হতে পারে। অন্তত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মেলার প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে না। উদ্যানের সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার লক্ষ্য নিয়ে এখানে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এ কারণে আগামী বছর অন্যত্র করতে হবে মেলা। আগে থেকে এই খবরটি প্রচারিত হলেও, এই পর্যায়ে এসে বিশেষ জোরালো হয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র খবরটি নিশ্চিত করেছে। তারা বলছেন, চলতি বছরই উদ্যানটি মেলার জন্য ছেড়ে দেওয়া কঠিন ছিল। তার পরও বইমেলার প্রতি মানুষের ভালোবাসার কথা বিবেচনায় নিয়ে কিছু কাজ তারা আগামী বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে আবারও মেলা উদ্যানে করতে দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এমনকি সরকার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোরও অভিন্ন মত।

এই সূত্রগুলোও ২০২৫ সালের মেলা উদ্যান অংশ বাদ দিয়ে করতে হবে বলে জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। ফলে প্রায় সব মহলই খবরটিকে এখন আমলে নিচ্ছে। বিভিন্ন জন বিভিন্ন জায়গা থেকে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করছেন। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে মেলায় কথা বলেছেন প্রকাশকরা। 
১২৭টি নতুন বই ॥ মেলার ২৯তম দিনে নতুন বই এসেছে ১২৭টি। বিভিন্ন দিনে মেলায় আসা বইগুলোর মধ্যে পাঠক সমাবেশ থেকে এসেছে বিশিষ্ট প-িত লেখক সৈয়দ আকরম হোসেনের প্রবন্ধগ্রন্থ  ‘বাংলাদেশের সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ।’ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের নতুন বই ‘পাকিস্তান গণহত্যা এবং ধর্মের নামে রাজনীতি।’ ধর্ম আশ্রিত রাজনীতি কিভাবে একটি দেশকে পিছিয়ে দেয় তা এ বইতে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রকাশ করেছে অনন্যা।

অন্যপ্রকাশ থেকে মেলায় এসেছে ড. রতন সিদ্দিকীর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বিস্মৃত বাঙালির বিভ্রান্ত বিক্ষণ।’ বইটিতে বাঙালি সংস্কৃতির স্বরূপ গতিপথ গন্তব্যসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল লেখক স্বকৃত নোমানের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বই যুবতী রাধে সৈয়দ হক ও আরও কথা।’ মাও সেতুংয়ের কবিতা ভাষান্তর করেছে মুস্তাফা মজিদ।  প্রকাশ করেছে জার্নিম্যান বুকস।
বিকেলে মেলায় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। সমিতির নেতাদের দাবি, মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে সরিয়ে নেওয়া হলে বড় ধরনের ছন্দপতন ঘটবে। অনেক বছর উদ্যানে মেলা হওয়ায় এক ধরনের অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে। এখান থেকে বের হয়ে নতুন কোথাও মেলা করা হলে পাঠক সেখানে যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। ফলে মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই যাতে করা যায়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

সংগঠনের সহসভাপতি শ্যামল পাল বলেন, বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে সরানোর চক্রান্ত শুরু হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধীরা এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। মেলা উদ্যান থেকে সরানো হলে তা হবে হত্যা করার শামিল। তাই মেলা সরিয়ে নেওয়া যাবে না।
প্রকাশক নেতা ও অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম বলেন, মেলা কোনো অবস্থাতেই স্থানান্তর করা যাবে না। এই মেলা বাঙালি জাগরণের অংশ। সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। মেলা উদ্যানে রাখতে সকলের সহযোগিতা চান তিনি।

×