ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

একই সঙ্গে হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা মেট্রোর কাজ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

চালু হলো উত্তরা থেকে মতিঝিল মেট্রোরেল

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৫, ৫ নভেম্বর ২০২৩

চালু হলো উত্তরা থেকে মতিঝিল মেট্রোরেল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার আগারগাঁওয়ে পতাকা উড়িয়ে মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন

দেশের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬ এর উদ্বোধনের দশ মাস পর মতিঝিল অংশ চালুর মাধ্যমে তা নতুন গতি পেল। আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল করবে মেট্রোরেল সার্ভিস। ২০২৫ সালের জুনে কমলাপুর পর্যন্ত চালুর মাধ্যমে পরিপূর্ণ হবে এমআরটি-৬ এর সম্পূর্ণ রুট। ২০৩০ সালের মধ্যে উড়াল ও পাতাল পথের সমন্বয়ে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (এমআরটি) ৬টি রুটের মাধ্যমে গড়ে উঠবে মেট্রোরেলের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এর ফলে দৈনিক প্রায় অর্ধ কোটির বেশি যাত্রী এই ছয়টি মেট্রোরেলের মাধ্যমে পরিবহন করা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পর প্রথম ট্রেনটি ২টা ৩৪ মিনিটে আগারগাঁও মেট্রো স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। দুপুর ২টা ৪২ মিনিটে মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ট্রেনে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভ্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী ও অতিথিরা। বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে মতিঝিল পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী দ্বিতীয় ট্রেনটি। মাত্র ২৩ মিনিটে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পৌঁছায় ট্রেনটি।  
আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হিসেবে নিজের অনুভূতি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, ‘এতটুকু বলতে পারি, পথ হারায়নি বাংলাদেশ। আমরা একের পর এক বড় বড় স্বপ্ন পূরণ করছি। দেশকে নিয়ে আরও অনেক পরিকল্পনা আছে আমার। একটা উন্নত দেশ যা যা আছে, আমাদের দেশের মানুষও সবই পাবে। আমরা জাতিকে শিক্ষা দীক্ষা জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এখন আমাদের স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট সোসাইটি। এটাই আমার বড় আকাক্সক্ষা। বাংলাদেশ কারও কাছে হাত পেতে চলবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াবে, বিজয়ী জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব।’
মেট্রোরেল নির্মাণে যারা জড়িত তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত। মেট্রোরেল নির্মাণ করা হয়েছে সবাই যেন যাতায়াত করতে পারে, কর্মঘণ্টা বাঁচে। আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে। মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন বর্ধিত করছি। যারা এ কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। জাপান সরকারকেও ধন্যবাদ জানাই। তারাও এই কাজে সম্পৃক্ত ছিল। এটি উন্নত প্রযুক্তির ও পরিবেশবান্ধব। ফলে সময় বাঁচবে, যানজট কমবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা বাঙালি জাতির একটা উন্নত সমৃদ্ধ জীবন দেবেন বলেই এ দেশকে স্বাধীন করেছেন। আমার একটাই প্রত্যয়, আমি বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। আমার আমিত্ব বলে কিছু নেই। আমি নিজেকে উৎসর্গ করেছি এ  দেশের মানুষের কল্যাণে। এ দেশের মানুষ শান্তি পেলে আমার বাবাও শান্তি পাবেন। তিনি খুশি হবেন, তিনি নিশ্চয় সেটা দেখছেন। মানুষের কাছে আমার একটাই চাওয়া, সবাই যেন স্বাধীন দেশের আত্মমর্যাদা নিয়ে চলে। সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তপরায়ণদের প্রত্যাখ্যান করে।’
এর আগে শনিবার দুপুর আড়াইটায় আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনের উদ্বোধনস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে প্রথমে ট্রেনের স্বয়ংক্রিয় টিকিট (অস্থায়ী পাস-কার্ড) নেন তিনি। পরে কার্ড পাঞ্চ করে প্রধানমন্ত্রী ট্রেনের লাউঞ্জে প্রবেশ করেন। সেখানে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। পরে পতাকা নেড়ে প্রথম ট্রেন চলার সংকেত দেন। পরে ট্রেনে চড়ে প্রধানমন্ত্রী সফরসঙ্গীদের নিয়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলের উদ্দেশে রওনা দেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল, মুখ্য সচিব তোফাজ্জাল হোসেন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিকসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও বিদেশী সংস্থার প্রতিনিধিরা। রবিবার (৫ নভেম্বর) থেকে মেট্রোরেলে চড়ে যাওয়া যাবে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত।

অর্থাৎ উদ্বোধনের পরদিনই আগারগাঁও-মতিঝিল অংশটি যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ওইদিন থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলবে স্বপ্নের এ উড়াল ট্রেন। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রোরেল-৬ এর উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 
মেট্রোরেল-৫ এর নর্দার্ন রুটের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ॥ শনিবার বিকেলে মতিঝিল মেট্রো স্টেশনে এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় এমআরটি লাইন-৫ এর নর্দার্ন রুটের নির্মাণ ফলক ও আগারগাঁও-মতিঝিল রুটের এমআরটি-৬ এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইয়োমা কিমিনোরি, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএনএ সিদ্দিকসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও মেট্রোরেল নির্মাণকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। পরে এমআরটি-৬ ও এমআরটি-৫ এর নর্দার্ন রুটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
তৃতীয় মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৫) উত্তর ॥ এমআরটি লাইন-৫ নর্দার্ন (উত্তর) রুট। রাজধানীর সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিমি পথটি হবে উড়াল ও পাতাল পথের সমন্বয়ে। গাবতলী থেকে গুলশান নতুন বাজার পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার হবে পাতাল পথে (মাটির নিচ দিয়ে)। বাকি ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার হবে উড়াল পথে। ইতোমধ্যে এই মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণে ভূমি উন্নয়ন কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই রুটের স্টেশন হবেÑ হেমায়েতপুর, বালিয়ারপুর, বালিয়ামালিয়া (মধুমতি), আমিনবাজার, গাবতলী, দারুস সালাম, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান-২, নতুন বাজার ও ভাটারা। এই মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৮ সালে।

×