ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মাদারীপুরে ৭ বছরেই নতুন স্কুল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর 

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩; আপডেট: ১৫:৩৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মাদারীপুরে ৭ বছরেই নতুন স্কুল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা

ভবন

মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের ২৭ নং লক্ষ্মীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নির্মাণের ৭ বছরের মধ্যেই নতুন স্কুল ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপরেও জরাজীর্ণ দুটি ভবনে চলছে পাঠদান। 

এছাড়াও বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক, সীমানা প্রাচীরসহ রয়েছে নানা সমস্যা। বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে একটি নতুন ভবনের দাবী তুললেও তা এখনও নির্মাণ হয়নি।

আরও পড়ুন :জিনিসপত্রের দাম কমান, না হলে কর বাড়াবো:ব্যবসায়ীদের প্রতি হুঁশিয়ার

জানা গেছে, ১৯৫৪ সালে মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের ২৭নং লক্ষ্মীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৬ সালে বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০১৩ সালেই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও সেই ভবনেই চলছে পড়াশুনা। দুটি কক্ষ থাকলেও ক্লাসরুমের সংকট থাকায় একটি রুমের মধ্যে টিনের বেড়া দিয়ে তিনটি শ্রেণী কক্ষ তৈরি করে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। 

ভবনের বিভিন্ন দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদ থেকেও পলেস্তারা খসে পড়ছে। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন। ভবনের পাশেই পুরাতন ও জরাজীর্ণ একটি টিনসেট ভবন রয়েছে। এই ভবনের তিনটি রুমে ক্লাস নিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এই বিদ্যালয়ের ঘরগুলোর অবস্থা আরো জরাজীর্ণ। দরজা, জানালা নেই। অনেক আগেই দরজা ও জানালা ভেঙ্গে গেছে। টিনের চালও জরাজীর্ণ। বৃষ্টি হলেই কক্ষের মধ্যেই পানি পড়ে। 

তাছাড়া বৃষ্টির পানির পাশাপাশি একটু বাতাস হলেই দরজা ও জানালার আটকানোর ব্যবস্থা না থাকায় ভিতরে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। জরাজীর্ণ টিনসেট ভবনের মধ্যখানের একটি ছোট রুমে এক সাথে বসতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের দপ্তরিকেও। 

ফলে ছোট এই অফিস রুমে কোনরকম ভাবেই চলছে বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল সকল কাজ। এতে করেও প্রধান শিক্ষকসহ ৭জন সহকারী শিক্ষক ও একজন দপ্তরিকে পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায়। 

এছাড়াও বিদ্যালয়ের টয়লেটের অবস্থাও জরাজীর্ণ। পুরাতন হওয়ায় স্যাতস্যাতে ও নোংরা পরিবেশেই টয়লেটে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এরফলে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী থাকলেও নানা সমস্যার জন্য বর্তমানে বিদ্যালয়ে দেড়শ শিক্ষার্থী আছে।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সিহাব বলেন, কয়েকদিন আগে ভবনের পাশে বসেই আমরা খেলছিলাম। তখন ভবনের সানসেট থেকে পলেস্তারা খসে আমাদের পাশে পড়েছিলো, তখন আমরা খুব ভয় পেয়েছিলাম।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের ভবনের অবস্থা অনেক খারাপ। এই ভবনের দরজা ও জানালা নেই। তাই একটু বৃষ্টি হলে আমাদের বই পত্রও ভিজে যায়। তাছাড়া বিদ্যালয়ের টয়লেটের অবস্থাও খুব খারাপ। 

চর্তুথ শ্রেণীর ছাত্র তামিম বলেন, আমাদের এই টিনসেট ঘরে পড়াশুনা করতে কষ্ট হয়। বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে আমাদের বই খাতা ভিজে যায়। তাই আমাদের নতুন ভবন চাই। 

চর্তুথ শ্রেণীর ছাত্রী জুথি বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের টয়লেটের অবস্থাও খুব খারাপ। বৃষ্টি নামলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাদারীপুর সদর উপজেলার প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান হাওলাদার বলেন, এই বিদ্যালয়ের ভবনের যে অবস্থা, তাতে যে কোন মুহূর্তেই ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হতে পারে। তাই আমি অনুরোধ করবো, এই ভবনটি যেন নতুন ভবন করা হয়। তাছাড়া বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষই জরাজীর্ণ, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ক্লাস করতে পারছে না। 

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী আবুল বাসার বলেন, বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন জরুরিভাবে দরকার। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।

মাদারীপুর সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দাতুন্নেসা রূপা বলেন, মানসম্মত শিক্ষা সেবা নিশ্চিতকরণে সরকার ও শিক্ষা কর্তৃপক্ষের রয়েছে নানাবিধ উদ্যোগ। এ বিদ্যালয়ের ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক। তাই এর মেরামত ও নতুন ভবনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 

এসআর

×