ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তার জন্য বরাদ্দ দাবি ॥ ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচি পালন

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ১ জুন ২০২৩

তিস্তার জন্য বরাদ্দ দাবি ॥ ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচি পালন

পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ছয় দফা দাবিতে স্তব্ধ রংপুর কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন

পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চলতি বাজেটে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদ। এ দাবি আদায়ে ৫ মিনিটের ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচি পালন করেছে সর্বস্তরের মানুষ। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১ টায় ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সংগ্রাম পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। 
উদ্বোধনের সময় চলতি বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ না দেওয়া হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে মেয়র বলেন, আমরা তিস্তা নিয়ে টানাটানি দেখতে চাই না। ভারত না চীন; কে অর্থ দেবে তা নদীপাড়ের মানুষ বোঝে না। দুই কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ খেলার অধিকার রাখে না। সরকারপ্রধান নিজেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে কিন্তু রংপুর অঞ্চল কোনো প্রকল্পই পাচ্ছে না, এই  বৈষম্য দূর করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যদি দেশের টাকায় পদ্মা সেতু করা যায় তাহলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশের অর্থায়ন কেন নয়? দেশে এত এত প্রকল্প চলছে কিন্তু তিস্তার জন্য কেন সরকার মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে না। অথচ তিস্তা মহাপরিকল্পনা দেশের জন্য সবচেয়ে লাভজনকÑ এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হলে ভাঙন ও ফসলহানির হাত থেকে রক্ষা পাবে লাখো মানুষ এবং হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। এবার যদি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার এই বাজেটে অর্থ বরাদ্দ না দেয়, তাহলে রংপুরের মানুষ সরকারকে লাল কার্ড দেখাবে।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, নদী ভাঙন ও বন্যায় প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিজ দেশেই হচ্ছে শরণার্থী। বিলীন হচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। তিস্তা তীরের মানুষের মুখে মুখে একটাই স্লোগান- তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও, কৃষকের জান বাঁচাও, তিস্তা খননের কাজ শুরু কর, মহাপরিকল্পনার কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন কর।
তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তির অপেক্ষায় মহাপরিকল্পনার কাজ ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মেগা প্রকল্পগুলোতে ৩ লাখ কোটি টাকার কাজ চলছে। সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও রংপুর বিভাগের দুই কোটি মানুষের জন্য ৩৭ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প থাকার কথা ছিল, সেটি হয়নি। কোনো কোনো বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে রংপুর বিভাগের জন্য মাত্র ০. ৯৮ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল  বৈষম্য দূরীকরণ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। কিন্তু রংপুরের মানুষ বরাবরই  বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন।
এদিকে বেলা ১১টা বাজতেই জাতীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচি। এ সময় সড়কের দু’পাশসহ যে যেখানে অবস্থান করছিল সেখানেই থমকে দাঁড়ান। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ছাত্র, শ্রমজীবী, কর্মজীবী, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এই দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নেন। সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ছাড়াও অংশগ্রহণে জোরালো হয়ে ওঠে তিস্তাপাড়ের মানুষ বাঁচানোর দাবি।
পাঁচ মিনিটের ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচিটি রংপুরের ২৯টি পয়েন্টসহ তিস্তা নদীবেষ্টিতে বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে একই সময়ে পালন করা হয় বলে জানিয়েছেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান। কর্মসূচিতে দলমত নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে অবিলম্বে চলতি বাজেটে অর্থ বরাদ্দসহ ৬ দফা বাস্তবায়নের দাবি উঠে আসে।

×