ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঘূর্ণিঝড় মোচা আঘাত হানার আশঙ্কা

প্রবীর বিশ্বাস, খুলনা অফিস

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ৭ মে ২০২৩

ঘূর্ণিঝড় মোচা আঘাত হানার আশঙ্কা

দাকোপের চুনকুড়ি এলাকায় নাজুক বেড়িবাঁধ

বিধাতা বোধকরি এই প্রতিকূলতার মধ্যে ফেলবেন বলেই মানব জনম দিয়েছেন। না কি তিনি আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা করছেন। হয়তবা তাই। তাইতো বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারি না। কেন যে তারা সাগরের কাছাকাছি এসে বাড়ি করেছিল, এটাই ভাবনায় আসে না। প্রতিবছর ঝড় আসে আর বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় সবকিছু। বাঁধ ঠিক হলে মনে হয় নতুন করে আবার জীবন শুরু করছি।

সংসারের জন্য কিনতে হয় নানা জিনিস। মনের দুঃখে এমন কথা বলছিলেন খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিয়ারা গ্রামের নাজমুল সরদার। তবে এখন শুধু ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাস নয়; ভরাকটালের পানির চাপ, অতিবৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া বা অন্য কারণেও ধসে যায় বেড়িবাঁধ। ভেসে যায় চিংড়ির ঘের। নোনা পানিতে মারা যায় সাধু পানির মাছ, আবাদি খেত গাছপালা। বিড়ম্বনায় পড়তে হয় গৃহপালিত পশু নিয়ে। ব্যাহত হয় ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রম। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি, অভাব দেখা যায় সুপেয় পানির, ব্যবসা-বাণিজ্য বলে কিছু থাকে না। অবশ্য এটা এখন অনেকটা সয়ে গেছে; নিরুপায় হয়ে জানালেন পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানার সুকুমার ঢালী।

স্থানীয়রা জানান, জেলার বেড়িবাঁধগুলোর ৫০টির অধিক স্থান অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাববুনিয়া কাঠকাটা, দক্ষিণ বেদকাশীর আংটিয়ারা, খাশিটানা চরামুখা, বাগালীর শেওড়া, সদরের নং কয়রা মদিনাবাদ, মহারাজপুরের দশালিয়া হোগলা এবং মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের পূর্ব হড্ডা রয়েছে অধিক ঝুঁকিতে। আর পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালী ইউনিয়নের খুদখালী, দেলুটির কালীনগর, সোলাদানার খেয়াঘাটসহ থেকে ৬টি স্থান মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। অপরদিকে দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের কালীবাড়ী লঞ্চঘাট, নলিয়ান লঞ্চঘাটের উত্তর পাশ কালাবগী বৃহস্পতিবাজার, কামারখোলার জালিয়াখালি ভিটেভাঙ্গা, তিলডাঙ্গার কামিনীবাসীয়া বটবুনিয়া বাজার, পানখালির মৌখালী পানখালী, চালনা পৌরসভার খলিশা কবরখানা রোড, বনিশান্তার বাজার, পোদ্দারগঞ্জের খেয়াঘাটের দক্ষিণ পাশ, বাজুয়ার চুরকুড়ি এবং কৈশালগঞ্জ ইউনিয়নের রামনগরসহ ১৫ থেকে ২০ স্থান অরক্ষিত। ছাড়া বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী, গঙ্গানামপুর, সদর ভান্ডারকোট ইউনিয়নসহ ডুমুরিয়া উপজেলার নদী সংলগ্ন এলাকার অনেক স্থানের বাঁধ খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। দাকোপের বাসিন্দা ফেরদৌস হাসান জানান, বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দুই থেকে তিন ফুট চওড়া মাটির বাঁধ রয়েছে।

খুলনা পাউবো- এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, ইতোমধ্যে আমরা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করেছি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক দেখভাল করছে। কিছু স্থান মেরামতের কাজ শুরু করেছি। ছাড়া ঝড় মোকাবিলায় জিও ব্যাগ, সিনথেটিক ব্যাজ, বাঁশ বল্ল প্রস্তুত রেখেছি। তিনি আরও জানান, চলতি অর্থবছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার মেরামত কাজ হয়েছে।

বরগুনায় বাঁধে ফাটল

নিজস্ব সংবাদদাতা, বরগুনা থেকে জানান, বেতাগীতে পৌরশহর রক্ষা বাঁধের প্রধান সড়টিতে বিষখালী নদীর ভাঙনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে কাটছে হাজার হাজার ব্যবসায়ী সাধারণ বাসিন্দাদের সময়। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় মোচার বার্তা রীতিমতো দেশের উপকূলীয় উপজেলাবাসীকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আভাসে ভারী বর্ষণ আর জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেলে এই বাঁধের সড়কটি কতটা টিকে থাকবে তা নিয়ে সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। উপজেলার প্রাণকেন্দ্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বেতাগী পৌরশহর। প্রতি বছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে পৌরবাসীকে মায়ের মতো আগলে রাখে বাঁধটি। কিন্তু ভাঙনরোধ প্রকল্পের ধীর গতির কারণে বর্ষার আগে কাজ শুরু না হওয়ায় নতুনভাবে লঞ্চঘাটের পশ্চিম দিকে শহর রক্ষা বাঁধের ওপর নির্মিত পাকা সড়কের একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ায় যে কোনো সময় সড়কের দেবে যাওয়া অংশসহ সড়কের দুই পাশের -মিল, আসবাবপত্র কাঠের দোকান, বাজার, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ ছোট-বড় মিলিয়ে চায়ের দোকান এবং লঞ্চঘাটসংলগ্ন এলাকায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব বলেন, সেখানে অনেক জায়গায় ফাটল দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় সরজমিনে গিয়ে রক্ষা বাঁধের  সড়কে ভাঙনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ পরিদর্শন করে এসেছি। ইতোমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং জরুরি মেরামতের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

×